Advertisement
E-Paper

বাতিল দোহা সফর, চার জিমন্যাস্টই বিদ্রোহী

ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল বৃহস্পতিবার। সাইয়ের দফতরে এক যোগে চিঠি জমা দিয়ে জাতীয় শিবির ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেলেন বিদ্রোহী চার জিমন্যাস্ট ও দুই কোচ।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৭
দুই প্রতিবাদী জিমন্যাস্ট প্রণতি ও পাপিয়া।

দুই প্রতিবাদী জিমন্যাস্ট প্রণতি ও পাপিয়া।

ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল বৃহস্পতিবার। সাইয়ের দফতরে এক যোগে চিঠি জমা দিয়ে জাতীয় শিবির ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেলেন বিদ্রোহী চার জিমন্যাস্ট ও দুই কোচ। কোচের বদল চেয়ে বাংলার প্রতিবাদী দুই মেয়ে জিমন্যাস্টের পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপের জন্য নির্বাচিত দুই পুরুষ জিমন্যাস্ট ও তাঁদের কোচও। শিবির শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৭ অক্টোবর। তার পর পুরো দল যাওয়ার কথা ছিল দোহায়।

শিবির শেষ হওয়ার ছয় দিন আগেই অভূতপূর্ব এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বাতিল হয়ে গেল দোহাগামী ভারতীয় দলের সফর। ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিচ্ছে না ভারতের কোনও দল। শেষ মুহূর্তে দল তুলে নেওয়ায় বড় রকমের জরিমানা হতে পারে। যা নিয়ে আবার চাপান-উতোর শুরু হয়েছে সাইয়ের সঙ্গে সর্বভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার কর্তাদের।

সাইয়ের মনোনীত কোচের বদল চেয়ে দু’দিন আগেই রণংদেহী মূর্তি নিয়েছিলেন দোহাগামী মেয়ে দলের দুই জিমন্যাস্ট প্রণতি দাশ ও পাপিয়া দাশ। দুই বঙ্গকন্যা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সাইয়ের নির্বাচিত কোচ গুরদয়াল সিংহ বাওয়াকে তাঁরা চান না। বরং কোচ হিসাবে চান তাঁদের দীর্ঘদিনের কোচ জয়প্রকাশ চক্রবর্তীকে। দেশের দুই সেরা জিমন্যাস্ট চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘জয় স্যার না গেলে আমরা যাব না।’’ আনন্দবাজারের হাতে চলে আসে সেই গোপন চিঠি। জয়নগর ও জলপাইগুড়ির দুই বঙ্গকন্যার সেই বিদ্রোহের খবর প্রকাশিত হওয়ায় তোলপাড় পড়ে যায় দেশ জুড়ে। দিল্লির সাই দফতর ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের অফিসাররা দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। দিল্লিতে ফোন করে জানা গেল, তীব্র চাপের মুখে ঠিক হয় সাইয়ের নির্বাচিত কোচ একাত্তর বছরের বাওয়াকে বদলে মেয়েরা যে কোচকে চাইছেন, সেই জয়প্রকাশকেই পাঠানো হবে দলের সঙ্গে। সেই চেষ্টা শুরুও হয়। কিন্তু নাম পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ৮ অক্টোবর। সেই তারিখ পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন কোচ হিসাবে জয়প্রকাশের নাম নথিভুক্ত করতে পারেননি সাই কর্তারা। মেয়েরাও অনড় মনোভাব নেন।

কোচ জয়প্রকাশ। নিজস্ব চিত্র

এ রকম পরিস্থিতিতে মেয়েদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন ছেলেরাও। সার্ভিসেসের দুই জিমন্যাস্ট আদিত্য সিংহ রানা এবং গৌরব কুমার ছিলেন দোহাগামী দলে। তাঁরাও শিবির ছেড়ে দেওয়ার চিঠিতে সই করে দেন। এ দিন বিকেলে মুম্বইগামী ট্রেনে ওঠার আগে দিল্লি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছেলেদের কোচ বি এল বাইস্কর বললেন, ‘‘মেয়েদের কোচ নির্বাচন নিয়ে খুব বাজে কিছু হল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আমার দুই ছাত্রের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টুনার্মেন্ট ছিল। খুব খারাপ হল।’’

যাঁকে নিয়ে এত বড় ঘটনা, সেই মেয়েদের কোচ জয়প্রকাশ এ দিন দিল্লি থেকে ট্রেন ধরেছেন শহরে ফেরার। বলছিলেন, ‘‘সাইয়ের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তার জন্যই এটা হল। কয়েক মাস হল দায়িত্ব পেয়েছে। এসেই রাজনীতি করে দেশকে ডোবাল। অসম্ভব খারাপ লাগছে। মেয়েগুলো যেতে পারল না। আমাদের সব পরিশ্রম শেষ হল।’’ জয়প্রকাশবাবুর দুই ছাত্রী আজ শুক্রবার ফেরার ট্রেন ধরবেন। প্রণতি বলছিলেন, ‘‘এত কষ্ট করে ট্রায়াল দিয়ে সবাইকে টপকে এক নম্বর হলাম। কিন্তু যাওয়াই হল না। খারাপ লাগছে। কিন্তু কোচ ছাড়া তো যাওয়া যায় না। জয়স্যারকে ছাড়া যাব না ঠিক করেই রেখেছিলাম।’’ আর পাপিয়ার মন্তব্য, ‘‘জীবনে প্রথম ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলাম। যাওয়া হল না। কষ্ট হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বলছি, যিনি আমাদের সব জানেন সেই জয়স্যার না যেতে পারলে তো গিয়েও লাভ হত না। ’’

বৃহস্পতিবার সকালে শিবিরের নিয়ম মেনে অনুশীলনের পর চার জিমন্যাস্ট যে চিঠি সাইয়ের কাছে জমা দিয়েছেন, তাতে অবশ্য বিদ্রোহের কথা লেখা নেই। লেখা হয়েছে, ‘‘আমরা ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য শিবির ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’’ (পুরো চিঠি আনন্দবাজারের হাতে আছে) যা থেকে স্পষ্ট, শাস্তি এড়াতেই এই কৌশল নিয়েছেন দেশের চার সেরা জিমন্যাস্ট।

Gymnastic SAI Doha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy