Advertisement
E-Paper

পাসিং ফুটবল ও উইং প্লে-তে ম্যাচ বার করে নিল ফ্রান্স

ইউরোয় এখনও বলা যাবে না অনবদ্য ফ্রান্সকে দেখেছি। রেজাল্টগুলো ঠিকঠাক পেয়েছে। জয় তুলেছে। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাব ছিল স্পষ্ট। ধুঁকতে ধুঁকতে জেতা যাকে বলে। রবিবার বিকেলে আবার এমন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ফ্রান্স যাদের রক্তেই লড়াই। আইরিশরা কখনও কাউকে ছেড়ে কথা বলে না।

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৯:২০
জোড়া গোলের নায়ক।

জোড়া গোলের নায়ক।

ইউরোয় এখনও বলা যাবে না অনবদ্য ফ্রান্সকে দেখেছি। রেজাল্টগুলো ঠিকঠাক পেয়েছে। জয় তুলেছে। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাব ছিল স্পষ্ট। ধুঁকতে ধুঁকতে জেতা যাকে বলে। রবিবার বিকেলে আবার এমন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ফ্রান্স যাদের রক্তেই লড়াই। আইরিশরা কখনও কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। আবার শেষ ম্যাচেই ইতালির মতো হেভিওয়েট দলকে হারিয়ে এসেছিল আয়ারল্যান্ড। তাই ওদের ইউরোর জায়ান্ট কিলার বললে ভুল হবে না।

প্রথমার্ধ শেষে মনেও হচ্ছিল, আজ একটা দারুণ লড়াই দেখব। সত্যি তো আয়ারল্যান্ড একটা জায়ান্ট কিলার টিমের মতোই খেলেছে। ছোট দলগুলো সব সময় চায় আগেভাগে গোল করতে। তার পর ডিফেন্স দুর্ভেদ্য করে তুলতে। আয়ারল্যান্ড সেটা পেয়েও গিয়েছিল। স্পটকিক থেকে রবি ব্রেডির গোলটা আয়ারল্যান্ডকে এগিয়ে দেয়। ১-০ এগিয়ে গিয়ে ডিফেন্সও বেশ আঁটোসাঁটো ছিল। ভাবছিলাম এই দেওয়াল ভাঙা সম্ভব হবে না। ফ্রান্সকে দেখে তখন মনে হচ্ছিল ছন্দ হারিয়ে ফেলা কোনও দল। যাদের মাঝমাঠ অকেজো। ফরোয়ার্ড লাইন ওদের ফিজিক্যাল ফুটবলের সামনে আটকে যাচ্ছিল। আর ডিফেন্স ভয়ে ভয়ে ছিল। কিন্তু কথাই আছে, তুমি যখন ছন্দে আছো তখনই খেলা শেষ করে দাও। আয়ারল্যান্ড সেই দ্বিতীয় গোলটাই পেল না। আর ফ্রান্স ফায়দাটা তুলে নিল।

পাসিং মানসিকতা বদলে ও উইং প্লে-র সৌজন্যে রক্ষা পেল ফ্রান্স। ফার্স্ট হাফে পিছিয়ে গিয়ে খুব বেশি লং বল খেলছিল ওরা। প্রায় ১৫-২০ গজ দূরত্ব থেকে ওদের মাঝমাঠ বল বাড়াচ্ছিল। কিন্তু ফ্রান্স টিমটার ফরোয়ার্ড লাইন দেখলে বোঝা যায়, ওদের অর্ধেক প্লেয়ারই সাইজে খুব ছোটখাটো। গ্রিজম্যান, পায়েতরা দুর্দান্ত প্লেয়ার হতে পারে কিন্তু ওদের চেহারা মোটেও আইরিশদের মতো শক্তপোক্ত নয়। তাই লম্বা বল রিসিভ করার লোকও কম ছিল ফরাসি ফরোয়ার্ড লাইনে।

সেকেন্ড হাফে স্ট্র্যাটেজিটা পাল্টে ফেলল ফ্রান্স। ভুলগুলো শুধরালো। অনেক বেশি গ্রাউন্ডে খেলতে শুরু করল। ওয়াল পাস, ছোট জায়গায় পাস বাড়িয়ে মুভ তৈরি করা। সঙ্গে আবার ফুলব্যাকদের মুহুর্মুহু ওভারল্যাপ। আর তাতেই কেল্লাফতে।

দেশঁর দলে ফিজিক্যাল প্লেয়ার কম থাকলেও গতির অভাব নেই। গ্রিজম্যান, পায়েত, পোগবাদের মতো ফুটবলাররা নিমেষের মধ্যে ডিফেন্সকে আক্রমণে পাল্টাতে পারে। ম্যাচে ফিরতে সেই গতিটাই কাজে লাগাল ফ্রান্স। দ্রুত সমস্ত মুভ তৈরি করতে থাকল। জবাবে আয়ারল্যান্ড সবাইকেই নীচে নামিয়ে দেয়। আইরিশরা বুঝিয়ে দিয়েছিল ওরা ১-০ ধরে রাখতে পারলেই খুশি হবে। কিন্তু ফ্রান্স এত ঘনঘন আক্রমণ করতে থাকে যে একটা থেকে না হলে আর একটা থেকে গোল হতই।

দিদিয়ের দেশঁর মতো কোচের প্রশংসা করতেই হবে। সময় নষ্ট না করে বিরতির পরেই কিংগসলি কোমানের মতো বল প্লেয়ারকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। কোমান নামায় অনেক বেশি সংঘবদ্ধ মুভ তৈরি করছিল ফ্রান্স। কোমান ভাল পাসারের থেকেও বেশি ভাল ড্রিবলার। চার-পাঁচ জনকে কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। ও নামায় পায়েত, পোগবাদের মতো ফুটবলাররা আরও বেশি ম্যাচের মধ্যে আসতে থাকে। খেলাটাও উইংয়ে ছড়িয়ে দেয় কোমান। দেশঁ নিশ্চয়ই বুঝেছিলেন, এমনই একজন ফুটবলার ফ্রান্সের দরকার ছিল যে খেলার গতিটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

গ্রিজম্যান এ বার আটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে খুব ভাল খেলেছে। ও খুব ক্লিনিকাল স্ট্রাইকার। হতে পারে রোগাপাতলা, বেঁটে। কিন্তু বলটা পেলে জালে পুড়তে জানে। আদর্শ স্কোরার। দুটো গোলে ওর দু’রকম ক্ষমতা টের পাওয়া গেল। একটা হেডে আর একটা মাথা ঠান্ডা করে ফিনিশ।

আইরিশ ডিফেন্ডাররা হয়তো ধরে নিয়েছিল, গ্রিজম্যান হেডে সুবিধা করতে পারবে না। হতে পারে, এ জন্য ওদের নজরটা গ্রিজম্যানের উপর ছিল না, বলটা ফলো করছিল। ফুটবলে একটা নিয়ম হচ্ছে, তুমি যখন ডিফেন্স করছ তখন কোনও কিছুই আগাম ধরে নেওয়া উচিত নয়। সায়না যখন ক্রসটা বাড়াল তখন আয়ারল্যান্ড ডিফেন্স ধরে নিয়েছিল বলটা গ্রিজম্যান অবধি পৌছবে না। ওকে মার্ক করার কেউ প্রয়োজন বোধ করেনি। তাই গ্রিজম্যানও ফাঁকা জায়গা পেয়ে যায়। ওই ছোটখাটো শরীরে যে ও রকম স্পটজাম্প করবে ভাবাই যায় না। দুর্দান্ত হেড। দ্বিতীয় গোলটা অবশ্য জিরুঁর জন্যই হল। আর্সেনাল স্ট্রাইকার হেড দিয়ে বলটা বসিয়ে দিল গ্রিজম্যানের জন্য। তারপর নিঁখুত ফিনিশ। আয়ারল্যান্ডের তবু যা ক্ষীণ আশাটুকু ছিল, ডাফির লাল কার্ডে সেটাও উধাও হয়ে যায়।

দুর্দান্ত কোনও ফ্রান্সকে এখনও দেখতে পাচ্ছি না ঠিকই। ডিফেন্সটাও চিন্তায় রাখছে। কিন্তু ঠিকঠাক রেজাল্ট হলে এ সব বড় টুর্নামেন্টে পরের দিকে পিক করলেও সমস্যা হয় না।

Antoine Griezmann France Ireland Euro 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy