সন্ধ্যা রাই, পুনম ওঁরাও, লক্ষী ওঁরাও-রা সরস্বতীপুর চা বাগানের বাসিন্দা। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে পড়াশোনা করতে যেতে হয় তাঁদের। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের অপরিচিত এই চা বাগান, সেখানকার মেয়েরা অপরিচিতই হয়তো থেকে যেত। কিন্তু, ১ নভেম্বর নাগপুরে আয়োজিত জাতীয় স্তরে অনূর্ধ্ব ১৮ আন্তঃরাগবি প্রতিযোগিতায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে ওরা। আর সেই সুবাদে চা বাগানের ঘেরাটোপ ছাড়িয়ে ওদের নাম এখন সবার মুখে মুখে। এশিয়ান রাগবি প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৮ ভারতীয় দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে গজলডোবা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ১০টি মেয়ে। ওড়িশার জাতীয় শিবিরে ৪০ জনের দলেও সুযোগ পেয়েছে তারা।
গজলডোবার স্কুলেই প্রথম রাগবির পাঠ সন্ধ্যা, পুনমদের। কলকাতার জাঙ্গল ক্রো সংগঠনের হাত ধরে গজলডোবা এবং সরস্বতীপুর চা বাগানে রাগবি খেলা শুরু হয়। গত জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বায়ু সেনা রাগবি দলের সদস্য খেলোয়াড়েরা সরস্বতীপুরে এসেও খুদে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষন দিয়ে যান। গত দু’বছরে ওরা রাগবির খুঁটিনাটিও আত্মস্থ করে ফেলে। সম্পূর্ণ অপরিচিত এই খেলায় ওরা যে ক্রমশই দক্ষ হয়ে উঠছে, তা বুঝতে পারছিলেন ওদের কোচ সানু দাস এবং স্কুলের শিক্ষকেরা। দেরি না করে দ্রুত ভারতীয় স্তরের আন্তঃক্লাব প্রতিযোগিতায় ওদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কলকাতার জঙ্গল ক্রো ক্লাবের কর্মকর্তারা। সাফল্য মেলে হাতেনাতে। খেলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী সন্ধ্যা।
গত শনিবার ট্রেন থেকে এনজেপি স্টেশনে নেমেই সোজা স্কুলে চলে আসে ওরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ রায় ও অন্যন্য সহ-শিক্ষকেরা ওদের অপেক্ষাতেই ছিলেন। ট্রফি, সার্টিফিকেট স্কুলের স্যারেদের দেখিয়ে ঝিলিক দিয়ে উঠল সুবস্তি, স্বপ্না ওঁরাওদের মুখ। ওদের কথায়, “প্রথম যে দিন রাগবি খেলা শুরু করি, সে দিন অনেকেই ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু আজ আমাদের দেখে তাঁরা নিশ্চয়ই মত পাল্টাবেন।”
কোচ সানু দাস জানালেন, “ছেলেরা নয়, মেয়েরাই এখানকার আসল চমক। আমরা ছেলে এবং মেয়েদের একসঙ্গে রাগবির প্রশিক্ষণ দিলেও মেয়েরা ওদের ছাড়িয়ে গিয়েছে। ছেলেরা নানা খেলার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে। কোনও একটা খেলায় মনোনিবেশ করতে পারেনি।” গজল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ রায়ের কথায়, “রাগবিতে পড়ুয়াদের সাফল্যে উত্সাহিত হবে অন্যরাও। আমরাও ওদের পাশে দাঁড়িয়ে সবরকম সাহায্য করব বলে ঠিক করেছি।” ভারতের রাগবি ফেডারেশনের সভাপতি প্রমোদ খন্না, ভারতের রাগবি পুরুষ দলের অধিনায়ক নাসের হুসেনও নাগপুরের পুরস্কার বিতরণীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও সরস্বতীপুরের মেয়েদের খেলা দেখে ওদের উত্সাহিত করেছেন।