Advertisement
E-Paper

দীপারা কি আপনিই গজাবে

নবদ্বীপেই ক্রিয়েটিভ জিমন্যাস্টিক্স সংস্থায় গত সাত দিন বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। অনুশীলন বন্ধ জনা ষাটেক শিক্ষার্থীর। স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল জুড়ে ছাতা। সেখানেই ছোবড়ার গদি পেতে দীপা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এক দল নানা বয়সের ছেলেমেয়ে।

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০০:৫২
তিনটি ছবিই জেলার ছেলেমেয়েদের প্রস্তুতির। নিজস্ব চিত্র

তিনটি ছবিই জেলার ছেলেমেয়েদের প্রস্তুতির। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

গত অগস্টে টাকার জন্য হন্যে হয়ে দরজায়-দরজায় ঘুরছিলেন নবদ্বীপের টিঙ্কু সরকার আর পূর্বস্থলীর অভিজিৎ দেবনাথ। সেপ্টেম্বরে কাজাখস্তানে অ্যাক্রোব্যাটিক জিমন্যাস্টিক্স এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সিনিয়র বিভাগে মিক্সড পেয়ারের জন্য নির্বাচিত তাঁরা। ষোলো জনের ভারতীয় দলে বাংলার প্রতিনিধি ওই দু’জনই।

কিন্তু সেখানে ফ্লোরে নামতে হলে মাথা পিছু পঁচাশি হাজার টাকা খরচ আছে, যা প্রতিযোগীদের নিজেদেরই বহন করতে হবে। অনুশীলন ছেড়ে সেই টাকা জোগাড় করতে ঘুরছিলেন দু’জনে। শেষে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত সাহায্যে তাঁরা প্রতিযোগিতায় নামেন এবং ব্রোঞ্জ পান।

সেই স্মৃতিটা ফিরে এল, কারণ এমনিতে অবহেলিত জিমন্যাটিক্সে ফের সোনার আলো ঠিকরে পড়েছে। চোটের সমস্যা জয় করে রবিবারই তুরস্কে আর্টিস্টিক্স জিমন্যাসটিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে ভল্টে সোনা জিতেছেন দীপা কর্মকার। তাঁর প্রিয় মরণ ভল্ট ‘প্রোদুনোভা’, যা দিয়ে ২০১৬-র রিও অলিম্পিক্সে তিনি সকলকে চমকে দিয়েছিলেন, তা এ বার দিতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী?

কী করলে দীপা হওয়া যায়? কোন জাদুতে তৈরি করা যায় দীপাদের?

নিজের প্রতিভা, কঠোর অনুশীলন আর অদম্য স্বপ্ন তো আছেই। কিন্তু তার সঙ্গে পরিকাঠামো আর কোচিং যে লাগে, লাগে টাকার জোর, তা আছে কি?

নবদ্বীপের শরীরচর্চা কেন্দ্র দেহসৌষ্ঠব-এর শিক্ষার্থীরা এর আগে ভিন্ রাজ্য থেকেও জিমন্যাস্টিক্সে পুরস্কার জিতেছে। কেন্দ্রের কর্ণধার-প্রশিক্ষক রতনলাল সাহা বলেন, ‘‘উন্নত মানের পরিকাঠামো আর ভাল কোচিং না থাকলে কি এক জন দীপা কর্মকার তৈরি করা যায়? আমাদের সে সব কোথায়? দীপারা কি আপনিই গজিয়ে উঠবে?”

নবদ্বীপেই ক্রিয়েটিভ জিমন্যাস্টিক্স সংস্থায় গত সাত দিন বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। অনুশীলন বন্ধ জনা ষাটেক শিক্ষার্থীর। স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল জুড়ে ছাতা। সেখানেই ছোবড়ার গদি পেতে দীপা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এক দল নানা বয়সের ছেলেমেয়ে। অন্যতম প্রশিক্ষক অভিজিৎ দেবনাথের কথায়, “আমরা তো ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও টাকার অভাবে যেতে পারি না।”

কল্যাণীতে মোটামুটি পরিকাঠামো থাকলেও সেই মাপের প্রশিক্ষক নেই। পুরসভার স্পোর্টস কাউন্সিল স্থানীয় স্টেডিয়ামের পাশে জিমন্যাস্টিক্স কেন্দ্র গড়েছে। জনা পঞ্চাশ ছেলেমেয়ে নিয়মিত অনুশীলন করে। দায়িত্বে আছেন স্থানীয় পুরপিতা নীলিমেশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা ঠিক করেছি, কলকাতা থেকে এক জন ভাল প্রশিক্ষক আনাব।”

কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে জিমন্যাস্টিক্সের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে শিমুরালির সংস্কৃতি সঙ্ঘ ময়দানে। চাকদহ, কৃষ্ণনগর, আগরপাড়া থেকেও কেউ কেউ প্রশিক্ষণ নিতে আসে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের। ১৩টি ছেলে আর ১০টি মেয়ে। প্রশিক্ষক মলয় ঘোষ ও পার্থসারথী রায়ের আক্ষেপ, “যত যন্ত্রপাতি লাগে, তার প্রায় কিছুই নেই। আমরা কিছু তৈরি করে নিয়েছি। ফুটবল-ক্রিকেটে সরকার যত গুরুত্ব দেয়, এ দিকে তার সামান্যও দিলে অনেক উন্নতি হত।”

দীপা যে সোনার লাফ দিলেন, তা-ও কিন্তু দেখতে পাননি কেউই। শিমুরালির ময়দানে দাঁড়িয়ে আকাশ হালদা়র, জয়শ্রী অধিকারীরা বলে, “দীপাদিদির খেলা দেখার জন্য কাল আমরা নানা টিভি চ্যানেলে পাগলের মতো খুঁজেছি। দেখতে পাইনি। খালি পুরনো ক্রিকেট-ফুটবল এ সব চলছে। জিমন্যাস্টিক্স বোধহয় দেখায় না!”

অবহেলা যে সর্বত্র, গোলমাল যে বাজারের মানসিকতাতেই!

Dipa Karmakar Gymnast Olympics Commonwealth Games
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy