Advertisement
E-Paper

বাংলার বোলিং বনাম দিল্লির ব্যাটিং দ্বৈরথ

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে দশটা। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামে দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের বল করে মাঠের ধারে রাখা চেয়ারে বসে গল্প করছিলেন বাংলার দুই পেসার অশোক ডিন্ডা ও মহম্মদ শামি।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৫১

তাঁদের দু’জনের শীতল সম্পর্ক নিয়ে অবহিত গোটা ভারত। সেই গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে নাকি এখন বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির। শুক্রবার কথাটা বলে চমকে দিয়েছিলেন বাংলা অধিনায়ক।

কিন্তু রঞ্জি ট্রফি সেমিফাইনালে বাংলা-দিল্লি ম্যাচের আগের সকালে যে আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে তা কে জানত!

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে দশটা। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামে দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের বল করে মাঠের ধারে রাখা চেয়ারে বসে গল্প করছিলেন বাংলার দুই পেসার অশোক ডিন্ডা ও মহম্মদ শামি। মাঠের অন্য প্রান্তে তখন পুরোদমে নেট প্র্যাকটিস চলছে দিল্লির। সেখান থেকে বেরিয়ে কখন যে শামির পিছনে চলে এসেছেন দিল্লি অধিনায়ক ঋষভ পন্থ তা কেউই টের পাননি। সেই ঋষভ পন্থ, দু’বছর আগে যাঁর স্লেজিং নিয়ে এ দিনও আলোচনা হয়েছে বাংলা শিবিরে। সেই তিনি-ই পিছন থেকে চুপিচুপি এসেই প্রথম শামির দু’চোখ চেপে ধরলেন। তার পরে জানতে চাইলেন, ‘‘বলো তো আমি কে?’’ তিন বারের চেষ্টাতেও সামি বলতে না পারায় এক সময় নিজেই পরিচয় দিয়ে খুলে দিলেন শামির চোখ। তার পরে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ঠিক চলে এলি খেলতে...।’’ ডিন্ডা ও শামি যা শুনেই হাসতে শুরু করে দিলেন। তার পরে শামির রসিকতা, ‘‘তা হলে দে আজ একটা টিকিট কেটে। বাড়ি চলে যাই।’’

এ বার শুরু হল এই তিন জনের আড্ডা। কিছুক্ষণ পরে যে আড্ডায় এসে যোগ দেবেন ঋদ্ধিমান সাহা। কিছু পরে বাংলার অধিনায়ক মনোজের কাঁধে হাত রেখে গল্প করতে করতে ফটো-সেশনে চলে গেলেন ঋষভ।

সব দেখে মনে প্রশ্ন আসতে বাধ্য—এ কোন দিল্লি! কোথায় তাদের সেই আগুনে মেজাজ। কোথায় মাঠে নামার আগেই আগ্রাসী শরীরী-ভাষায় বিপক্ষকে চমকে দেওয়ার সেই পুরনো চাতুরি! আর কোথায়ই বা বাংলার সঙ্গে তাদের খটাখটির সেই পুরনো ইতিহাস!

বদলে সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগেও দিল্লি যেন কেমন খাপছাড়া মেজাজে। এ দিনও গৌতম গম্ভীর অনুশীলনে আসেননি। তাঁদের কোচ কেপি ভাস্কর বা অধিনায়ক সাংবাদিক সম্মেলন না করেই হোটেলে ফিরে গেলেন। টিম হোটেলেও কথা বলতে চাননি তাঁরা। দিল্লি শিবির সূত্রে খবর, গম্ভীর নাকি শনিবার রাতে এসে রবিবার মাঠে নামবেন।

এ সব শুনে কলকাতা থেকে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে বললেন, ‘‘আমাদের সময় দিল্লি ম্যাচ মানেই ছিল মহারণ। এখন ছবিটা অনেক বদলে গিয়েছে।’’ বাংলার শেষ রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ। তাঁর বাংলা দল ফাইনালে হারিয়েছিল দিল্লিকেই। এখনও সেই জয় নিয়ে এতটাই আগ্রহ রয়েছে বাংলার ক্রিকেট মহলে যে, একটি সংস্থা সম্বরণকে এই সেমিফাইনাল ম্যাচের জন্য নিয়ে যাচ্ছে পুণেতে। দিল্লি ম্যাচের সময় তিনি হাজির থাকছেন ভিআইপি স্ট্যান্ডে।

শুক্রবার পুণের মাঠের বাইশ গজে যে সবুজ ঘাস ছিল, তা এ দিন অনেকটাই কেটে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু সবুজ একটা আভা রয়েছে। যা দেখে আইপিএল-এ পুণের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা মনোজ, অশোক ডিন্ডারা বলছেন, ‘‘প্রথম সেশনে বল একটু নড়াচড়া করবে। সেটা সামলে নিতে পারলে খেলতে কোনও অসুবিধে নেই।’’

তা হলে ঋষভ পন্থ-দের বিরুদ্ধে টসে জিতলে কি ফিল্ডিং? এ বার রক্ষণাত্মক বাংলা অধিনায়ক। বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।’’ ডিন্ডা, শামি এবং বি. অমিতের পেস বোলিং ব্রিগেড যদিও শুরুর দিকের সেই প্রাণবন্ত পিচের সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকবে। ঋদ্ধিমান আবার মনে করছেন, শুরুতে ব্যাট করে দিল্লির উপর বড়সড় রানের বোঝা চাপিয়ে তার পরে চাপ বাড়ানোর রণনীতিই নেওয়া উচিত।

ফুরফুরে মনোজ-ঋদ্ধিরা এ দিন ফুটবল খেললেন অনুশীলনের শুরুতে। তার পরে নেটে ভিভিএস লক্ষ্মণের নজরে চলল ব্যাটিং। সেমিফাইনালে গুজরাতের বিরুদ্ধে যে দল খেলেছিল তার তিনটি জায়গায় বদল হচ্ছে। উইকেটকিপার শ্রীবৎস গোস্বামীর জায়গায় আসছেন ঋদ্ধিমান সাহা। ঈশান পোড়েলের জায়গায় মহম্মদ শামি। আর প্রদীপ্ত প্রামাণিকের জায়গায় সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। অর্থাৎ উইকেটকিপার ঋদ্ধিকে ধরে সাত ব্যাটসম্যান, চার বোলারের অঙ্ক। যেখানে তিন পেসার ও এক স্পিনার নিয়েই দিল্লির বিরুদ্ধে নামতে চলেছে বাংলা। হোটেলে ফেরার সময় ইতিবাচক মেজাজে লক্ষ্মণও বলে গেলেন, ‘‘দু’দিন টিমটার সঙ্গে কাটিয়ে গেলাম। আজ ফিরে যাচ্ছি। আসা করছি, ফাইনালে উঠবে ছেলেরা।’’

বিপক্ষ দিল্লি গত সাত বছরে রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়নি। শেষ বার তাঁরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০৭-০৮ মরসুমে। এ বার, জয়পুরে আয়োজিত কোয়ার্টার ফাইনালে মধ্যপ্রদেশকে সাত উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে তারা। যে ম্যাচে ৯৫ রান রয়েছে গম্ভীরের। রবিবার থেকে শুরু পুণের রঞ্জি সেমিফাইনালের লড়াইটা দিল্লির ব্যাটসম্যানের সঙ্গে বাংলার বোলারদের।

Bengal vs Delhi Ranji Trophy Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy