Advertisement
E-Paper

হার্দিকের ঝড়ে তৃতীয় টেস্টে চালকের আসনে ভারত

পাল্লেকেলের মাঠে বৃষ্টি আসেনি। এসেছিল হার্দিকের ঝড়। মাত্র তিন জন ভারতীয় ছক্কা মারার হ্যাটট্রিক করতে পেরেছে টেস্টে। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, তার পর তুমি, হার্দিক পাণ্ড্য। অভিনন্দন!

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৩৫
জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করার পথে হার্দিক। ছবি: রয়টার্স

জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করার পথে হার্দিক। ছবি: রয়টার্স

দামাল ছেলের দামাল সেঞ্চুরির পর টুইটার খুলে হার্দিক পাণ্ড্য লিখে ‘সার্চ’ দিতেই যা যা ভেসে উঠল— এক ওভারে হার্দিক নিলেন ২৬। টেস্ট ক্রিকেটে কোনও ভারতীয় এক ওভারে এত রান নিতে পারেননি।

হার্দিক পাণ্ড্য, উফ! কী অসাধারণ হিটিং! এমন বিধ্বংসী কাউন্টার অ্যাটাক আর কখনও দেখিনি।

হার্দিক পাণ্ড্য, ওয়াও! অবিশ্বাস্য ব্যাটিং! প্রথম পঞ্চাশ ৬১ বলে। দ্বিতীয়টা এল মাত্র ২৫ বলে!

মাত্র তিন জন ভারতীয় ছক্কা মারার হ্যাটট্রিক করতে পেরেছে টেস্টে। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, তার পর তুমি, হার্দিক পাণ্ড্য। অভিনন্দন!

কী দাঁড়াল? না, পাল্লেকেলের মাঠে বৃষ্টি আসেনি। এসেছিল হার্দিকের ঝড়। আর তাতেই ফের উড়ে যাওয়ার মুখে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। এমনিতেই তারা সিরিজে ০-২ পিছিয়ে ছিল। এই টেস্টে তাদের বোলারদের সাময়িক দাপটে কিছুটা আশা তৈরি হয়েছিল, যদি তুল্যমূল্য লড়াই দেখা যায়। হার্দিক ব্যাট হাতে কপিল দেব হয়ে উঠে সেটাকে পুরোই ভেস্তে দিলেন। আট নম্বরে তিনি যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন, ভারত ৩২২-৬। অথচ, ন্যূনতম ৪০০ রানের লক্ষ্যে পৌঁছনো দরকার টেস্ট ম্যাচের রাশ ধরে রাখতে গেলে। মনে রাখা দরকার, এই টেস্টে কোনও রবীন্দ্র জাডেজাও ছিলেন না যে, নীচের দিকে তাঁকে সহায়তা দেবেন। জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা কুলদীপ যাদব কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান কুলদীপ যখন আউট হলেন, হার্দিক তখন কত? না, ৫৪ বলে ৩৮।

সেখান থেকে শেষ দুই ব্যাটসম্যান মহম্মদ শামি এবং উমেশ যাদবকে নিয়ে তিনি শেষ করলেন ৯৬ বলে ১০৮ রান করে। ইনিংসে ৮টি চার, ৭টি ছক্কা। বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ৭৪ রান। এবং, কী পরিস্থিতিতে এল এই বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিগুলো? ওভারের শেষ বলে সিঙ্গলস নিয়ে নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখতে হচ্ছিল। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দীনেশ চণ্ডীমল একটা সময় ৯জন ফিল্ডারকে বাউন্ডারি লাইনে পাঠিয়ে দিলেন। যাতে হার্দিকের বাউন্ডারি মারা আটকানো যায়। কিন্তু তাতেও ঝড় থামানো যায়নি। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্রিকেটার হিসেবে যিনি কায়রন পোলার্ডের ছক্কা মারার ভঙ্গিতে দীক্ষিত, তাঁকে নিশ্চয়ই এত সহজে বশে আনা যায় না। হার্দিক তাঁর আগ্রাসন চালিয়ে গেলেন।

এতটাই বিশ্বাস তাঁর নিজস্ব আক্রমণাত্মক ভঙ্গির ওপর যে, একটাও উল্টোপাল্টা শট নিতে দেখা গেল না। মাথা ঠান্ডা রেখে ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে মারা প্রত্যেকটি শট। যা দেখে টিমের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী পর্যন্ত বলে ফেললেন, ‘‘অসাধারণ! এ রকম হিটিং ড্রেসিংরুমে বসে দেখতে পাওয়াটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার।’’

কে বলছেন? না, রবি শাস্ত্রী! যিনি ক্রিকেটার হিসেবে কোনও এক কপিল দেবের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে কাটিয়েছেন। এখনই কপিলের দক্ষতার সঙ্গে হার্দিকের তুলনা করতে যাওয়াটা অন্যায় হবে। শাস্ত্রীও সে সবের মধ্যে ঢুকবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু এমন ব্যাটিং দেখতে পাওয়াটা তাঁর কাছেও সৌভাগ্যের ব্যাপার বলা মানেই তো বিরাট শংসাপত্র দিয়ে দিলেন হেড কোচ।

সামনের এক বছরে বিদেশের মাটিতে বেশির ভাগ টেস্ট খেলতে হবে ভারতকে। কপিল দেব এসে গেল না বলা গেলেও সেই বিদেশ অভিযানের জন্য এক সুদক্ষ অলরাউন্ডার যে হাতে চলে এল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ডে হার্দিক আরও বেশি কার্যকরী হয়ে উঠবেন। এমনিতেই ভারতীয় ক্রিকেটে হালফিলে তাঁর মতো পেস বোলিং অলরাউন্ডার আসেনি। যিনি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগে জোরে বল করতে পারেন, আবার ব্যাট হাতে মারকাটারি ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতাতে পারেন। সাধে কি তাঁর ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালি পর্যন্ত বলে দিয়েছেন, ‘‘হার্দিকের মধ্যে বেন স্টোকস হয়ে ওঠার দক্ষতা আছে।’’ কোহালির সেই বক্তব্য শুনে যারা হাসাহাসি করছিল, তারাই এ দিন উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিল।

পাল্লেকেলের মাঠে তাঁর তাণ্ডব দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। সে দিন রবীন্দ্র জাডেজার জন্য রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ দিন হার্দিক যখন শ্রীলঙ্কার বোলিংকে তুলোধনা করে সেঞ্চুরিতে পৌঁছলেন, বলাবলি শুরু হয়ে গেল, সে দিন জাডেজা যদি রান আউট না করে দিত, হার্দিক ম্যাচটা অনেক দূর টেনে নিয়ে যেতে পারত।

সে দিন রান আউট হয়ে ক্ষুব্ধ হার্দিক প্যাডে বারবার ব্যাট আছড়াতে আছড়াতে মাঠ ছেড়েছিলেন। পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় ভারত। এ দিন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ম্যাচের রংই পাল্টে দিলেন তিনি। এবং, এমন একটা পিচে যেখানে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানেরা পর্যন্ত রান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।

ভারত তুলল ৪৮৭। তার পর শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস মাত্র ১৩৫ রানে মুড়িয়ে দিয়ে ফলো-অন করালেন কোহালি। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ১৯-১। ভারতের প্রথম ইনিংসের স্কোরের চেয়ে ৩৩৩ রানে পিছিয়ে। ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা মাথায় রেখেও বলে ফেলা যায়, তৃতীয় দিনেই টেস্ট শেষ হয়ে না গেলে পৃথিবীর চরম আশ্চর্যের মধ্যে তা রাখা যেতে পারে।

হার্দিক-ঝড় ছাড়াও আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ঘটল। যেমন মহম্মদ শামির আগুনে বোলিং। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে নতুন বল হাতে শামি যে ছয় ওভারের স্পেল করলেন, হালফিলের মধ্যে কোনও পেসারের এমন আগুনে বোলিং দেখা গিয়েছে কি না সন্দেহ। ওই স্পেলটিতে ৬ ওভারে ১৫ রান দিয়ে তুললেন দু’টি উইকেট।

কিন্তু দিনের সব চেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা, আইপিএল প্রজন্মের দুই তরুণ ক্রিকেটারের সাফল্য। হার্দিক পাণ্ড্য এবং কুলদীপ যাদব। এক জন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অলরাউন্ডার। অন্য জন কলকাতা নাইট রাইডার্সের চায়নাম্যান স্পিনার। দু’জনেই নজরে এসেছেন আইপিএল পারফরম্যান্সের জোরে। হার্দিকের যেমন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিই এটা।

পাল্লেকেলের পাহাড়ে ক্রিকেট পাল্টে যাওয়ারই কি প্রতিধ্বনি শোনা গেল রবিবার? আইপিএল খেলে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে— এই স্লোগান তো আগেই উঠে পড়েছিল। কে জানত, এটাও সঙ্গে যোগ হবে— আইপিএল খেলে যে, টেস্ট ক্রিকেটেও পারে সে। এতদিন তো উল্টোটাই বলছিলেন পণ্ডিতরা!

Hardik Pandya India vs Sri Lanka 3rd Test হার্দিক পাণ্ড্য Team India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy