Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গরমের ছুটিতে আবিষ্কার করো নিজের প্রতিভা

স্কুলের শেষ পরীক্ষা সারা। বেজে গিয়েছে গরমের ছুটির ঘণ্টা। কী ভাবে কাজে লাগাব এই ছুটিকে? তিনি নিজে কী করতেন? নানা গল্প আর খুদেদের জন্য বিরল উপদেশ নিয়ে হাজির অন্য এক সচিন তেন্ডুলকর। আনন্দবাজারের জন্য এক্সক্লুসিভ কলামে..অন্যান্য স্কুল পড়ুয়ার মতো আমার কাছেও ছুটি পড়ার আগে শেষ পরীক্ষাটা ছিল বিশেষ অনুভূতির। ভাবতাম, ওই শেষ পরীক্ষাটা কখন হবে আর আমিও বাড়িতে ফিরে এসে পেন্সিল বক্স আর কাঠের ক্লিপবোর্ডটা টেবলের এক কোণে রেখে দিতে পারব।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

সচিন তেন্ডুলকর
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

স্কুলে ছুটি পড়ার সময়টা সকলের কাছেই জীবনের সব চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হিসেবে থেকে যায়। কিশোর বয়সে আমরা সকলেই এই সময়টার দিকে তাকিয়ে থেকেছি। এখন যে-হেতু সব স্কুলেই গরমের ছুটি পড়ার ঘণ্টি বেজে গিয়েছে, আমারও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমিও আগ্রহ ভরে তাকিয়ে থাকতাম কবে শেষ পরীক্ষাটা হবে আর স্কুল থেকে ছুটে বেরিয়ে পড়ব ছুটির আনন্দে!

অন্যান্য স্কুল পড়ুয়ার মতো আমার কাছেও ছুটি পড়ার আগে শেষ পরীক্ষাটা ছিল বিশেষ অনুভূতির। ভাবতাম, ওই শেষ পরীক্ষাটা কখন হবে আর আমিও বাড়িতে ফিরে এসে পেন্সিল বক্স আর কাঠের ক্লিপবোর্ডটা টেবলের এক কোণে রেখে দিতে পারব। তার পাশেই থাকবে আমার স্কুল ব্যাগ আর বইগুলো। স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে, এর পরের এক মাস সেগুলো একটু কমই ব্যবহার হতো। আর শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার যে অনাবিল আনন্দ? সেটাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি! মনে আছে, ছুটি পড়ার দিনেই ব্যাট হাতে তুলে নিয়ে দৌড়তাম মাঠের দিকে। আমার গরমের ছুটির বেশিটা জুড়ে থাকত ক্রিকেট ব্যাট, মুম্বইয়ের বিখ্যাত বড়া পাও, লেবুর শরবত এবং অবশ্যই জিভে জল এনে দেওয়া আম!

এখনকার পড়ুয়াদের বলতে চাই, এই ছুটিকে ব্যবহার করে নিজেকে আরও ভাল ভাবে আবিষ্কার করো। জীবনকে আবিষ্কার করো। আরও বেশি করে জেনে নাও তোমার চারপাশের পৃথিবীকে। ভাবো এক বার, ছুটি উপভোগ করার পাশাপাশি যদি এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারো, যদি ব্যক্তিত্ব তৈরি হওয়া শুরু হয় তোমার মধ্যে, কেমন হবে?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কে বলতে পারে, ছুটির সময়ে পড়ার বাইরে অন্য যে জিনিসটা শিখবে, সেটা তোমার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে না! আমার তো সব সময়ই মনে হয়, নিজে যে ক্রিকেটার হতে পেরেছি এবং পরবর্তীকালে বিশ্বকাপও জিতেছি, তার ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করে দিয়েছে এই গরমের ছুটিগুলোই। কারণ, স্কুল বন্ধ থাকায় খেলায় সময় দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কী ভাবে স্কুলের ছুটিকে সব চেয়ে ভাল কাজে লাগাতে পারো তোমরা, তা ভাবার চেষ্টা করছি। জানি, এর কোনও ম্যাজিক ফর্মুলা হয় না। তবু তিনটে জিনিসের প্রতি তোমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাইব। কলা, ভ্রমণ এবং খেলা। যে কোনও ধরনের কলার সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে তোমাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার জন্ম নেবে। সেটা সঙ্গীত হতে পারে, নৃত্যকলা হতে পারে, থিয়েটার বা চিত্রাঙ্কন হতে পারে। নতুন একটা দিক নিয়ে চর্চা শুরু করা শুধু নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতেই সাহায্য করবে না, মানসিক চাপ হাল্কা করার প্রক্রিয়াও শেখাতে পারে। তার ফলে যখন আবার স্কুল শুরু হবে, ব্যাগপত্তর আর বই নিয়ে অক্লান্ত ছোটাছুটির মধ্যেও মনের বিশ্রামের মাধ্যম তৈরি থাকল। নিজের জীবনের একটা উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, সঙ্গীত কী ভাবে আমাকে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে গিয়েছে। আমি নিজে কখনও সঙ্গীতের ক্লাসে যাইনি কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উচ্চ রক্তচাপ সামলানো আর স্নায়ুযুদ্ধের জন্য তৈরি হতে সঙ্গীত খুব সাহায্য করত। হেডফোন লাগিয়ে নিজের পছন্দের গান শোনা মানে যেন শান্তিতে চোখ দু’টো বুজে আসে। যে কোনও ধরনের কলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলে ব্যক্তি হিসেবেও অনেক বেশি পরিণত, সম্পূর্ণ হওয়া যায়। আমার তো মনে হয়, শান্ত, ধীরস্থির মস্তিষ্ক তৈরিতেও তা বড় ভূমিকা নিতে পারে।

এর পর আসি ভ্রমণের কথায়। যত আমরা নতুন নতুন জায়গায় ঘুরি, তত যেন নিত্য নতুন জিনিস শিখতে পারি। নানান ধরনের সংস্কৃতি, নানান স্থানের মানুষ সম্পর্কে জানা যায়। ভ্রমণের আরও একটা বড় আকর্ষণ আছে। দারুণ সব নতুন খাদ্যও আবিষ্কার করা যায়। আমার কাছে ভ্রমণ মানে কিন্তু শুধুই এক শহর থেকে অন্য শহর বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়া নয়। নিজের শহরেও ভ্রমণের আনন্দ কেউ পেতে পারে। হয়তো নিজের শহরেই লুকিয়ে রয়েছে খুবই উপভোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গা। যা দেখাই হয়ে ওঠেনি। সেখানে ঘুরতে গেলেও কিন্তু ভ্রমণের আনন্দ পাওয়া সম্ভব। তার পর স্কুল খুললে বন্ধুদের কাছে গিয়ে বলার সুযোগ থাকছে যে, হাতে কাছে থাকা কী সুন্দর একটা জায়গা ঘুরে এলাম! তোমার পরামর্শ পেয়ে অন্যরা সেই জায়গাগুলিতে যেতে পারে।

সবশেষে বলি ছুটি কাটানোর তৃতীয় মাধ্যম অর্থাৎ খেলার কথা। যেটা আমার প্রিয় বিষয়। জীবনে প্রত্যেকটি বিভাগেই যুক্ত হওয়ার কোনও না কোনও পুরস্কার আছে। কিন্তু খেলার বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে একই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক এবং আবেগের বিরল বন্ধন তৈরি হয়। কত কিছু যে শেখা যায় খেলার মাঠ থেকে! প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেদ, নেতৃত্ব গুণ, দলগঠনের স্বপ্ন, জেতার বাসনা। যে কোনও ধরনের খেলায় অংশ নিলেই এই জিনিসগুলো তৈরি হতে থাকবে। যদি ভাল লাগতে শুরু করে, স্কুল খোলার পরেও পছন্দের খেলা চালিয়ে যাওয়া যায়। পরিষ্কার মনে আছে, গরমের ছুটিতে কলোনিতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই আমার মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি খিদে আর ভালবাসা গড়ে উঠেছিল। সেখান থেকেই নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় যে, আমিও পারি। এই বিশ্বাস তৈরি হওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো সকলে খেলোয়াড় হবে না, কিন্তু খেলার মাঠে পাওয়া ওই বিশ্বাস যে, ‘আমিও পারি’, সেটা কিন্তু থেকেই যাবে। জীবনের যে কোনও রাস্তাতেই যাও না কেন, তা কাজে লাগতে পারে।

তাই বাচ্চারা, তোমাদের সকলকে বলতে চাই, এই গরমের ছুটিতে শপথ নাও, নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করবে। এই সময়কে বিচক্ষণ ভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের আরও ভাল সংস্করণ হয়ে স্কুলে ফেরত যাবে। মনের ভাবকে আরও ভাল করে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেবে।

সক্রিয় থাকো, সুস্থ থাকো। সব চেয়ে জরুরি, খুব মজা করো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE