একটা সময় তিনি যখন ব্যাট করতে নামতেন, প্রতিপক্ষ তাঁকে দেখে ভয়ও পেত না, সম্মানও করত না। যা দেখে বিরাট কোহালি ঠিক করে নেন, নিজের খেলাকে বদলাতে হবে। যার ফল, আজকের এই কোহালি। যিনি মাঠে নামলেই প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের মনে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।
এক সাক্ষাৎকারে কোহালি ফিরে গিয়েছেন সেই ২০১২ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে। ‘‘ওই সময় আমি যখন ব্যাট করতে নামতাম, তখন বিপক্ষকে দেখে মনে হত, ওরা আমাকে ভয় পাচ্ছে না বা সম্মান করছে না,’’ একটি স্পোটর্স ওয়েব শোয়ে বলেছেন কোহালি। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি চাইনি, আমাকে দেখে প্রতিপক্ষ শিবির ভাবুক, এই ছেলেটা আমাদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। আমি চাইনি, আর পাঁচটা ক্রিকেটারের এক জন হয়ে থাকতে। আমি চেয়েছিলাম এমন ক্রিকেটার হতে যে ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারবে।’’ কোহালি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, কী ছিল তাঁর লক্ষ্য। বলেছেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম, যখন মাঠে নামব, প্রতিপক্ষ ভাববে একে আউট করতে না পারলে ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যাবে।’’
কোহালি আরও জানিয়েছেন, কী ভাবে ফিটনেস রুটিন তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিট থাকার কারণে কী ভাবে তিনি দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে পরের চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হয়ে যেতে পারেন। ভারত অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘এ বারের বিশ্বকাপে প্রতিটা ম্যাচে আমার এনার্জি ছিল ১২০ শতাংশ। আমি ম্যাচে গড়ে ১৫ কিলোমিটার হেঁটেছি বা ছুটেছি। কিন্তু ফিটনেস ভাল থাকায় দ্রুত তরতাজাও হয়ে উঠেছি। মাঠ থেকে ফিরতাম, রিকভারি সেশন চলত। পরের শহরে পৌঁছেই ট্রেনিংয়ের জন্য তৈরি হয়ে যেতাম।’’
এতেই শেষ নয়। নিজের ফিটনেস নিয়ে কোহালি এও বলেন, ‘‘আমার এনার্জি এতটাই ভাল ছিল যে, আমি মাত্র ৩৫ দিনে ১০টা ম্যাচ খেলেছি আর নিয়মিত জিম সেশন করেছি। প্রতিটা ম্যাচেই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। কখনও মনে হয়নি শরীর আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ কোহালি জানাচ্ছেন, যখন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন, তখন ক্রিকেটীয় দক্ষতায় দারুণ উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি। ‘‘আমি জানতাম, যখন প্রথম আসি, ক্রিকেটীয় দক্ষতার দিক দিয়ে দারুণ কিছু ছিলাম না। তাই সারা ক্ষণ নিজেকে উন্নত করার চেষ্টায় ডুবে থাকতাম,’’ বলেন তিনি।
সেই ২০১২ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের পরে কী ভাবে তাঁর মানসিকতায় বদল এল, সেটাও বলেছেন কোহালি। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সফরের পরে বুঝেছিলাম, অস্ট্রেলিয়া আর আমাদের মধ্যে অনেক ফারাক। বুঝেছিলাম, যদি ট্রেনিং, ডায়েট আর খেলায় বদল না আনা যায়, তা হলে কখনওই সেরাদের সঙ্গে টক্কর নিতে পারব না।’’ তার পরে নিজের সামনে একটা লক্ষ্য স্থির করে এগিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। কী ছিল সেই লক্ষ্য? কোহালির জবাব, ‘‘সেরা হওয়ার ইচ্ছাটাই যদি না থাকে, তা হলে মাঠে নেমে লড়াই করারও কোনও মানে নেই। আমি চেয়েছিলাম, নিজের সেরাটাকে বার করে আনতে। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য যা যা করা দরকার, তা করেছি। খেলাটার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যায় ওই সফরের পরে।’’