Advertisement
E-Paper

দু’হাতে বল করতে পারি, একদিন করব

কেভিন পিটারসেনের সুইচ হিট নিশ্চয়ই দেখা আছে। এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ৩৬০ ডিগ্রি শট বা ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ‘ম্যাকস্কুপও’ আইপিএলের সৌজন্যে অচেনা নয়। কিন্তু যদি কোনও অফস্পিনারকে এ বার আচমকা বাঁ হাতি স্পিন করতে দেখা যায়? আর বোলারের নামটা যদি হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিন, তা হলে? নিঃসন্দেহে ৩৬০ ডিগ্রি এবিডির চেয়ে তা কম আকর্ষণীয় হবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
ভক্তদের সঙ্গে ফেসবুক চ্যাটে অশ্বিন। শনিবার বিশাখাপত্তনমে। ছবি: টুইটার

ভক্তদের সঙ্গে ফেসবুক চ্যাটে অশ্বিন। শনিবার বিশাখাপত্তনমে। ছবি: টুইটার

কেভিন পিটারসেনের সুইচ হিট নিশ্চয়ই দেখা আছে। এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ৩৬০ ডিগ্রি শট বা ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ‘ম্যাকস্কুপও’ আইপিএলের সৌজন্যে অচেনা নয়। কিন্তু যদি কোনও অফস্পিনারকে এ বার আচমকা বাঁ হাতি স্পিন করতে দেখা যায়? আর বোলারের নামটা যদি হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিন, তা হলে?

নিঃসন্দেহে ৩৬০ ডিগ্রি এবিডির চেয়ে তা কম আকর্ষণীয় হবে না।

এবং তা কোনও এক দিন সম্ভবও। রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো বলছেন যে, তিনি শুধু ডান হাতে নয়, বাঁ হাতেও স্পিন বোলিংটা করতে পারেন। আর ভবিষ্যতে কোনও এক দিন করবেনও!

ভারতীয় টিমের ফেসবুক পেজে সমর্থকদের সঙ্গে অশ্বিনের লাইভ চ্যাট শো ছিল শনিবার বিশাখাপত্তনমে। সেখানে আচমকাই ভারতীয় ক্রিকেটের এক ভক্ত বিশ্বের অন্যতম সেরা অফস্পিনারকে জিজ্ঞেস করে বসেন, দু’হাতেই স্পিন বোলিং করা নিয়ে তাঁর কী মতামত? এটাই স্পিন বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ কী না? শুনে প্রথমে হাসতে শুরু করেন অশ্বিন। তার পর বলে ফেলেন, ‘‘সত্যি বলতে কী, দেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের আমি বেশ ভয় পাই। নইলে অনেক দিন আগেই আমাকে আপনারা দু’হাতেই বল করতে দেখতেন। কারণ আমি সেটা পারি!’’

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার স্পিনার কামিন্দু মেন্ডিসকে নিয়ে তীব্র আলোচনা চলেছে মিডিয়ায়। লঙ্কার এই বিস্ময় স্পিনার দু’হাতেই স্পিন বোলিং করতে পারেন। কে জানত, ভারতের অশ্বিনও সেটা পারেন! যিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতে পারি। চায়নাম্যান করতে পারি। আর কোনও এক দিন করবও।’’ সঙ্গে সংযোজন, ‘‘তবে আমি অনেক দিন বাঁ হাতে বোলিংটা করিনি। অফস্পিনটা আরও ভাল করার চেষ্টা করছিলাম বলে। আর আমি এটাও মনে করি যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এটাই এক দিন স্পিন বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ হবে। যেখানে স্পিনার ডান এবং বাঁ, দু’হাতেই বল করবে।’’

শুধু একটা নয়। এ দিন নিজের বোলিং রহস্যের অনেক নিগূঢ় তথ্য দেশের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে খোলাখুলি বলে দিয়েছেন অশ্বিন। যেমন কঠিন পিচে তাঁর উইকেট তোলার মন্ত্র কী থাকে? বা ব্যাটসম্যান প্রচণ্ড মারতে থাকলে তাঁর মাথায় কী চলে। ওভার শুরু করার আগে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তাঁকে কী বলেন না বলেন— সেটাও গোপন রাখেননি ভারতীয় অফস্পিনার। ধোনির সঙ্গে তাঁর কথোপকথন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে অশ্বিন বলে দিয়েছেন যে, ক্যাপ্টেন কুল সে ভাবে তাঁকে কিছু বলেনই না। ‘‘টি-টোয়েন্টিতে বা যে সব ফর্ম্যাটে ফিল্ড রেস্ট্রিকশন থাকে, আমরা কথা বলে নিই যে কোন দু’জন ফিল্ডারকে বাউন্ডারি লাইনে রাখা হবে। আর ডেথে এলে ও আমাকে এসে বলে দেয়, ব্যাটসম্যান কোন জায়গায় বেশি মারছে। সেই মতো আমাকে ভাবতে বলে।’’ পাশাপাশি অশ্বিন বলে দিয়েছেন যে, কঠিন উইকেটে তিনি চেষ্টা করেন ব্যাটসম্যানকে ঝুঁকি নেওয়াতে। যাতে সে ঝুঁকিপূর্ণ সব শট খেলে। ব্যাটসম্যান মারতে থাকলেও অশ্বিনের টোটকা মোটামুটি একই—তাকে বাধ্য করো সেই শটটা খেলতে যা খেলতে সে স্বচ্ছন্দ নয়।

ক্রিকেট নিয়ে তিনি কতটা সিরিয়াস, এর পরে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু তাই বলে ভারতীয় অফস্পিনারকে নিপাট ভালমানুষ ক্রিকেট-পড়ুয়া ভাবারও কারণ নেই। কয়েক দিন আগেই যেমন চেন্নাইয়ের এক কাফেতে যাচ্ছিলেন বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধু ড্রাইভ করছিলেন, আর অশ্বিন ছিলেন তাঁর পাশে। রাস্তায় আচমকাই অশ্বিনদের গাড়ি এক বাইক-আরোহীকে ধাক্কা মারলে ভদ্রলোক তীব্র শাপশাপান্ত করতে শুরু করে দেন। ‘‘আমার বন্ধু এতটাই ভয় পেয়ে গেল যে গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি তখন ওকে বললাম, এটা কিন্তু ঠিক হল না। আমার বন্ধুও দেখি বলছে যে, যাই ক্ষমা চেয়ে আসি। গাড়ি দাঁড়ও করাল ও। তার পর জানলার কাঁচ নামিয়ে দু’জনেই আমরা হাসিতে ফেটে পড়লাম,’’ চ্যাটে বলতে থাকেন অশ্বিন। ‘‘মনে আছে, সে দিন অনেক রাত পর্যন্ত ভদ্রলোককে আমরা ঘুরিয়েছিলাম। উনি বাইক নিয়ে আমাদের গাড়িকে তাড়া করেছিলেন। জীবনে এই টুকটাক আনন্দগুলো বেশ রিফ্রেশিং।’’

জীবন থেকে আনন্দ খুঁজে নেওয়ার নিদর্শন আরও আছে। আছে, বাকি সব কিছু উপেক্ষা করে নিজের মনের কথা শুনে চলা। যেমন, ই়ঞ্জিনিয়ারিং পড়তে-পড়তে তাঁর ক্রিকেটার হয়ে যাওয়া। কারও থেকে অনুপ্রাণিত না হয়ে যা তিনি হয়ে যান। মাঠেও উদাহরণ আছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চাপের কড়াইয়ে নিজেকে ফেলতে ভালবাসেন। ভাল লাগে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মুখোমুখি হতে। কিন্তু একই সঙ্গে কাউকে আবার মাথায় চড়তে দিতে ইচ্ছে করে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোন ব্যাটসম্যান আপনার সেরা প্রতিপক্ষ হতে পারেন, প্রশ্নতে তাই অহংয়ে আঘাত লাগে। কড়া মুখভঙ্গিতে বলে ফেলেন, ‘‘বলা মুশকিল। কারণ আমি ভাবিই না অমুক ব্যাটসম্যান আমার উপর চড়াও হতে পারে। তেমন ভাবাভাবির সুযোগই নিজেকে দিই না। বরং মনে করি, আমি যে কারও থেকে ভাল। যে কাউকে আমি আউট করতে পারি।’’

শনিবার সন্ধেয় ক্রিকেট-ভক্তদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্রিকেটার অশ্বিন। কিন্তু কথাবার্তার স্রোতে যে এত জন অচেনা অশ্বিন বেরিয়ে আসবেন, কে জানত!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy