ম্যাচ শুরুর আগে একে অপরকে মিষ্টিমুখ। তার পর ৯০ মিনিটের শত্রুতা। —নিজস্ব চিত্র।
ভেবেছিলেন খেলা দেখবেন। স্টেডিয়ামে বসে গলা ফাটাবেন প্রিয় দলের জন্য। কিন্তু, শেষ বেলায় এসে সব ভেস্তে গেল।
অতীতে বার বার সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ দেখতে। এ বার তেমনটা হল না!
স্টেডিয়ামের উল্টো দিকের আমরি হাসপাতালের সামনের পরিবেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে কোনও মিল নেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ৩-৪ নম্বর গেটের। রাস্তার এ পার, ও পার। ওখানেও জমে ভিড়। এখানেও। ওখানে স্বজন হারানোর বেদনা, আর এখানে প্রিয় দলের জন্য উচ্ছ্বাস। কারও ঘোর শূন্যতা! কারও স্বপ্নে প্রিয় দলের জয়। তবুও গলা আটকে আসা মানুষটা বলে দিলেন, ‘‘চাই আমার দল জিতুক। বাবা থাকলে বলতেন, আমি ঠিক আছি তুই যা। কাল টিকিটটাও দেখিয়েছিলাম। নিজে যেতে পারেন না বলে কষ্ট ছিল। কিন্তু আমার মধ্যে দিয়েই বদলে যাওয়া যুবভারতীকে চিনেছিলেন বাবা।’’ পরের ডার্বিতে আবার দলের জন্য গলা ফাটানোর আশা শুনিয়ে গেলেন। হয়তো নিজেকেই। ওটাও সেই ‘বাবা’র জন্যই।
এটাই হয়তো ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। এটাই হয়তো কলকাতা ডার্বির আবেগ। যা সত্যিই কি কখনও ছুঁতে পারবে আইএসএল?
প্রশ্নটা সব সময়ই ঘোরে কলকাতা ফুটবলের আকাশে-বাতাসে। জবাবটা অবশ্য সব সময়ই দিয়ে দেন সমর্থকরাই। সাই গেট পেরিয়ে যুবভারতীয় স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখেই দেখা হয়ে গেল তিন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের সঙ্গে। স্টেডিয়ামে এসে এই প্রথম ডার্বি দেখা। বারাসতের শিল্পী আবার সদ্য পড়া শেষ করে শিক্ষকতা করছেন। দেখে তো মনে হচ্ছে না আপনি স্কুলে পড়ান? জবাব এল, ‘‘আজ তো আমি টিচার নই। আজকে আমি শুধুই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। পাশ থেকে শিল্পীরই বন্ধু সায়ন বলে দিলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে যদি অন্ধ ইস্টবেঙ্গল ভক্ত কেউ থাকে তা হলে কিন্তু ওই।’’ তবুও মাঠে আসা হয়নি আগে ডার্বিতে। গত বছর দুটো অন্য ম্যাচ দেখেছিলেন। আজ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গলা ফাটাবেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। এই ভাললাগাটা শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারলেন না শিল্পি। চোখেই ধরা দিল সেই চেনা আবেগ। যা বছরের পর বছর ঘুরে গেলেও বদলায়নি। যা বদলায়নি প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসে গেলেও।
তিন নম্বর গেট পেরিয়ে বেশ খানিকটা হেঁটে এগিয়ে যেতে যেতেই দু’নম্বর গেটের সামনে দেখা হয়ে গেল বালির সাহানা আর কান্তির সঙ্গে। প্রেমিকাকে প্রায় জোর করেই ডার্বি দেখাতে নিয়ে এসেছেন। এমনিতে সাহানা ক্রিকেট ভক্ত। বিরাট কোহালিদের জন্য গলা ফাটান। ফুটবল নিয়ে কখনও খুব একটা ভাবেননি। কিন্তু প্রেমে পড়ে যেন সবটা বদলে গিয়েছে। এখন তিনি মোহনবাগান সমর্থক। পাশ থেকে প্রেমিকের দাবি, ‘‘সত্যিটা বল। আমিই তো তোকে মোহনবাগান সমর্থক করলাম। আর আমিই তোকে মাঠে আনলাম।’’ সাহানা কিন্তু মেনে নিতে একটুও দেরি করেননি। বলেন, ‘‘আমি ক্রিকেট ভালবাসি। ও জোর করে নিয়ে এল ঠিকই কিন্তু এখানে আসার পর থেকেই এক্সাইটেড লাগছে খুব। মাঠে খেলার সময় যে কী করব?’’
আরও পড়ুন
খালিদের মাথায় মোহন কোচ, ‘আন্ডারডগ নই’ বললেন সঞ্জয়
যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে ডার্বির দামামা বাজল না
ডার্বির আগে চাপে সঞ্জয়, হুঙ্কার ছাড়ছেন সমর্থকরা
এই হাঁটার মাঝেই একাধিক বার কানে এল, ‘‘এক্সট্রা টিকিট আছে দাদা?তিন নম্বর গেট...।’’ কখনও শোনা গেল, ‘‘আমার দুই আপনার কত দাদা। একটা এক নম্বর হলে ভাল হয়।’’ তার মাঝেই কানে এল, ‘‘একশোটা দেড়শো, দু’শোটা আড়াইশো...।’’
মাঠ থেকে ফেসবুক লাইভেও ছিলাম আমরা (মোহনবাগান গেটে)
যুবভারতীর ১ লাখ ১০ হাজারের গ্যালারি অতীত হয়েছে অনেককাল আগেই। কমতে কমতে এ বার বাজারে টিকিট আনা হয়েছিল ৬৮ হাজার। গ্যালারি যে ভরে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। প্রায় দু’বছর পর আবার যুব ভারতীতে ডার্বি, স্টেডিয়াম ভরানোর জন্য সেটাই বা কম কীসে। সকাল থেকেই তাই মাঠে ঢোকার জন্য লম্বা লাইন। গেট খুলতেই শুরু হুঙ্কার। ৯০ মিনিটের অপেক্ষা। তার পরই যুদ্ধ শেষের ফল। হয়তো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাড়ি ফিরবে দুই দলের সমর্থক। বা কেউ হাসবে, কেউ কাঁদবে। ডার্বি তো এমনই।
মাঠ থেকে ফেসবুক লাইভেও ছিলাম আমরা (ইস্টবেঙ্গল গেটে)
মাঠ থেকে ফেসবুক লাইভেও ছিলাম আমরা (ইস্টবেঙ্গল গেটে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy