এ যেন শীতের সকালে একটু উষ্ণতা। বেলা বাড়তেই উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম সব রাস্তাই গিয়ে মিশতে শুরু করল সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। দুপুর গড়াতেই বাইপাসের জ্যামে হিমশিম অবস্থা হওয়ার কথা ছিল মানুষের। কিন্তু এদিন যেন সব ছাড়। জ্যামে আটকেও কারও কোনও বিরক্তি নেই। শুধু চলল স্লোগান পাল্টা স্লোগান। বাইপাসে উড়ল লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুণ পতাকা। ম্যাটাডোর থেকে টাটা সুমো সবার রাস্তা শেষ হয়েছে যুবভারতীতে। একদল সমর্থক তো আবার বাসেরই দখল নিয়ে ফেললেন।উল্টোডাঙা থেকে সেক্টর ফাইভগামী সেই বাসে বেলেঘাটা পর্যন্ত উঠতে পারল না কোনও মোহনবাগান সমর্থক।
এতদিন ধরে টিকিট বিক্রির ট্রেন্ড বলছিল মোহনবাগানের চাহিদা বেশি। কিন্তু যুবভারতীগামী রাস্তা বুঝিয়ে দিল লড়াই হবে সমানে সমানে। কলকাতা লিগে শেষ ডার্বিতে ৪-০ গোলে হারতে হয়েছিল মোহনবাগানকে। তখন অনেকেই ছিলেন না দুই দলে। এবার পুরো দল নিয়ে বদলা নিতে মাঠে নামার আগেই সাপোর্টারদের মধ্যে যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গেল। ‘সোনি-গ্লেনের গোলে ইস্টবেঙ্গল দোলে’। পাল্টা এলো উল্টো শিবির থেকেও। ‘ঘড়ির কাটা টিংটং গোল করবে ডু ডং’। এই সময় যেন সবাই কবি।
আজকাল আর যুবভারতীর গ্যালারি ভরে না। ডার্বিতেও ৬৩ হাজার টিকিটই ছাড়া হল। তাতে আর একলাখের গ্যালারি ভরবে কি করে? তাও এতেই বাজিমাত ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকদের। সূদুর কৃষ্ণনগর থেকে আসা ছোটবেলার দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা উল্টোডাঙা স্টেশনে। একজনের গায়ে লাল-হলুদ পতাকা। অন্যজন সবুজ-মেরুণ টি-শার্টে। দুই বন্ধুর বিচ্ছেদ ঘটল স্টেশন চত্তরেই। তবে অবশ্যই ৯০ মিনিটের জন্য। বলে দিলেন, এখন আর কোনও বন্ধুত্ব নেই। বাড়ি ফেরার সময় আবার দেখা হবে। এটাই আবেগ, এটাই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ঘিরে উন্মাদনা। এটাই বাংলার ফুটবল প্রেম। কে বলেছে বাঙালি আর ফুটবল ভালবাসে না। কে বলেছে মানুষ শুধু ক্রিকেটমুখী। সেই নিন্দুকদের জন্য যোগ্য জবাব তো বাংলার সর্বকালের সেরা এই ফুটবল ম্যাচ।