Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া কাঁদিও না

‘ধরেই নিয়েছি, কোনও দিন মাঠে নামতে পারব না!’

বাইশ গজে ব্যাট হাতে নামলেই এত দিন যিনি বোলার-নিধন যজ্ঞের প্রধান পুজারি হয়ে দেখা দিতেন, সেই ডেভিড ওয়ার্নার আজ কী অসহায়! শ

বিপর্যস্ত: এ বার তিনিও। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, কোচ ড্যারেন লেম্যানের পরে ডেভিড ওয়ার্নার কাঁদলেন সাংবাদিক বৈঠকে। শনিবার সিডনিতে। ছবি: এএফপি

বিপর্যস্ত: এ বার তিনিও। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, কোচ ড্যারেন লেম্যানের পরে ডেভিড ওয়ার্নার কাঁদলেন সাংবাদিক বৈঠকে। শনিবার সিডনিতে। ছবি: এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

চোখের জল আর মনের মধ্যে পুষে থাকা যন্ত্রণা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। কথা বলতে বলতে কখনও মুখ ঢেকে ফেলছিলেন দু’হাতে। কখনও বা ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন।

বাইশ গজে ব্যাট হাতে নামলেই এত দিন যিনি বোলার-নিধন যজ্ঞের প্রধান পুজারি হয়ে দেখা দিতেন, সেই ডেভিড ওয়ার্নার আজ কী অসহায়! শনিবার সকালে সিডনিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওয়ার্নার শুধু ক্ষমাই চেয়ে নিলেন না, তুলে দিলেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও প্রশ্ন। হাতে ধরা লিখিত বিবৃতিটা থেকে যখন চোখ তুলে তিনি বলে ফেললেন, ‘‘যা ঘটেছে, তার পর আমি ধরেই নিয়েছি, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আর কোনও দিন মাঠে নামতে পারব না! আমি চাই নামতে, কিন্তু জানি না সেই সুযোগ আর পাব কি না।’’

এক বছর নির্বাসিত হওয়া ওয়ার্নারের এই মন্তব্য সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত অনেকেই টুইটার-ফেসবুকে প্রশ্ন তুলতে থাকেন, তা হলে কি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) এ ব্যাপারে কোনও রকম ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে ওয়ার্নার-কে? নাকি ওয়ার্নার নিজে থেকেই কিছু ঠিক করে ফেলেছেন? ওয়ার্নারের বয়স এখন ৩১। এক বছর নির্বাসনে থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার সুযোগ থাকছে। কিন্তু কেন এখনই তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে না-খেলার কথা বলছেন? কেউ কেউ মনে করছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে সব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ চলে, তাতে খেলেও এখন প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। প্রশ্ন উঠছে, ওয়ার্নার কি তা হলে সে দিকে ঝুঁকছেন? সাংবাদিক বৈঠকে ওঠা নানা কৌতুহলের মতো ক্রিকেটবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এই নতুন প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার সিডনিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন স্টিভ স্মিথ। প্রায় একই রকম ভাবে এগিয়েছে ওয়ার্নারের সাংবাদিক বৈঠকও। কিন্তু বৈঠক শেষে স্মিথের মতো সহানুভূতি তিনি পাননি। প্রথমেই ওয়ার্নার বলতে থাকেন, ‘‘আমি আজ এখানে একটা কথা বলতে এসেছি। কেপ টাউনে সে দিন যে ঘটনা ঘটেছিল, তাতে আমারও ভূমিকা ছিল। আমিও জড়িয়ে ছিলাম ওই ঘটনার সঙ্গে। যার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’ আরও বলেন, ‘‘সম্মান ফিরে পাওয়ার জন্য যা করার আমি করব।’’ এর পরেই উঠে আসে তাঁর পরিবারের প্রসঙ্গ। এবং স্ত্রী, সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ওয়ার্নার। বলতে থাকেন, ‘‘আমি আমার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইছি। বিশেষ করে আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ের কাছে। তোমরা জানো, তোমারা ছাড়া আমার কোনও অস্তিত্ব নেই।’’

স্মিথ কেঁদেছিলেন, ওয়ার্নারও কাঁদলেন। কিন্তু তাতে সহানুভূতির উদ্রেক বিশেষ হয়নি। বরং অস্ট্রেলিয়ার এক বিখ্যাত সংবাদপত্র এক ‘শরীরী ভাষা বিশেষজ্ঞ’-কে বসিয়ে ওয়ার্নারের মনোভাবের ব্যাখ্যা করিয়েছে। যেখানে সেই বিশেষজ্ঞ, মাইকেল কেলি বলেছেন, ‘‘ওয়ার্নারের সাংবাদিক বৈঠক দেখে আমার মনে হচ্ছে, ও সবার আগে নিজের স্বার্থের কথাই ভেবেছে। অন্তত তিন বার বলেছে, আমি বোধ হয় আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে পারব না। আর সেই ব্যাপারটাই ওকে সব চেয়ে বেশি আঘাত করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

David Warner Cricket ball-tampering Video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE