আনন্দে মেতেছে চন্দননগর।—নিজস্ব চিত্র।
সতীর্থদের হাত থেকে ট্রফিটা দখলে নিতেই এক ঝাঁক ভিড় গর্জে উঠল— ওই তো, ওই তো আমাদের ঈশান। টিভির সামনেটা তখন যেন মাঠের গ্যালারি!
সাতসকালে সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন ঘরের ছেলেটাই। অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখিয়ে। এর পর থেকে আর ম্যাচে ফিরতেই পারেনি অজিরা। টিভির সামনে বসে চন্দননগর দেখেছে, বিপক্ষের উপর ঘরের ছেলের দাপট। অস্ট্রেলিয়াকে হেলায় হারিয়ে অনূর্ধ ১৯ বিশ্বকাপে ভারত চ্যাম্পিয়ন হতেই শনিবার দুপুরে রাস্তায় নেমে এল গোটা পাড়া।
আবির উড়ল, ব্যান্ডপার্টি বাজল। মিষ্টিমুখের পালা চলল। ঈশানের ছবি আর জাতীয় পতাকা হাতে ঐতিহাসিক স্ট্র্যান্ড ধরে চলল শোভাযাত্রা। ছেলে-বুড়ো থেকে মহিলা— কে নেই সেই ভিড়ে। সকলেই ক্রমাগত চেঁচিয়ে চলেছেন।
এই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই গ্রুপ লিগের ম্যাচে বল করতে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল চন্দননগরের ডানহাতি পেসারকে। চোট সারিয়ে ফিরে আসেন কোয়ার্টার ফাইনালে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে উইকেট না পেলেও আঁটোসাঁটো বোলিং করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেমিফাইনালে ৪ উইকেট নিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের। ফাইনালেও শুরুতেই বিপক্ষকে ঝাঁকিয়ে দিলেন বাঙলার প্রতিশ্রুতিমান বোলারটি।
চন্দননগরের রথের সড়কের কাছে সম্বলা-শিবতলায় ঈশানের বাড়ি। ঈশানের মতোই তাঁর বাড়ির লোকজনও অসম্ভব ঈশ্বরভক্ত। খেলার শুরু থেকেই দোতলায় টিভির সামনে বজরংবলী এবং সাঁইবাবার পুজোর ফুল রেখে দেওয়া হয়েছিল। বাবা-মা, দিদিমা এবং দুই বোন খেলা দেখেছেন সেখানে। আশপাশের বাড়িতে, ক্লাবঘরেও সকলে ‘লাইভ’ দেখেছেন ঈশানের অস্ট্রেলিয়া-বধ পর্ব। ঈশান উইকেট পেতেই গর্জে উঠেছে চন্দননগর।
ভারত জয়ের রান তুলে ফেলতেই আশপাশের ছেলে-ছোকরা ভিড় জমান ঈশানদের বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনের সরু গলি ছাড়িয়ে স্থানীয় ক্লাবের মাঠ পর্যন্ত নেমে আসে সেই ভিড়। উৎসবের প্রস্তুতি সারাই ছিল। শুরু হয়ে যায় অকাল হোলি। আবির খেলার মাঝেই কেউ ড্রাম বাজাচ্ছেন, কেউ বা আনন্দে থালা পেটাচ্ছেন। দুই তরুণীকে দেখা গেল ঈশানের বিশাল কাটআউটে চুমু খাচ্ছেন। পথচলতি মানুষকেও মিষ্টিমুখ করানো হয়।
ছেলের সাফল্যে দৃশ্যতই গর্বিত দেখাচ্ছিল মা রীতাদেবীকে। বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে রূপকথার স্বপ্ন দেখছি। তবে, ওকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো চন্দননগরের মহারাজ হয়ে উঠুক আমাদের ঈশান।’’ বাবা চন্দ্রনাথবাবু জানান, খেলার পরে ফোনে ঈশান জানিয়েছেন, ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে ঘণ্টা দুই টানা হুল্লোড় চলেছে। তাতে সামিল ছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও। আগামী ৬ বা ৭ তারিখে চন্দননগরে ফিরবেন ঈশান।
আরও পড়ুন: রেকর্ড গড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতল ভারত
চন্দ্রনাথবাবু বলছিলেন, ‘‘চোট সারিয়ে ফিরে এমন দুর্দান্ত বল করায় বেশি ভাল লাগছে।’’ আর মায়ের চিন্তা, কয়েক দিন ছেলের ভাল ঘুম হয়নি। বাড়ি ফিরেও কি একটু বিশ্রাম পাবে! জানালেন, ছেলের জন্য পছন্দের চকোলেট মজুত। পনীরের তরকারি এবং আইসক্রিমও ঈশানের খুব পছন্দের। চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বামাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদেরও দুর্দান্ত অনুভূতি হচ্ছে। সংস্থার তরফে ওঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’’
সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, স্নেহা দাস, অমিত দাস, অনিতা হাজরা, দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, সায়নী দাস— এঁরা সবাই এ দিনের হুল্লোড়ের মুখ। স্নেহা, সায়নীরা বলছিলেন, ‘‘খেলা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আমরাও যেন নিউজিল্যান্ডের স্টেডিয়ামে বসেই খেলা দেখছি। হাতের সামনে রয়েছে আমাদের ঈশান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy