Advertisement
E-Paper

ছিটকে গেল টিম ‘চোকার্স’, শেষ চারে বিরাটরা

সন্ধে সাড়ে ছ’টার লন্ডনে বসে মনে হচ্ছে, এমন একপেশে ম্যাচ জিতবেন বিরাট কোহালিও কি ভাবতে পেরেছিলেন? অতি বড় ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকও কি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, মারো-নয়-মরো জাতীয় চাপ কাটিয়ে কোহালির ভারত এমন হেলায় উড়িয়ে দেবে বিশ্বের এক নম্বর ওয়ান ডে দলকে!

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০৪:২৮
এ বি ডিভিলিয়ার্স-কে রান আউট করছেন ধোনি। ছবি: এএফপি

এ বি ডিভিলিয়ার্স-কে রান আউট করছেন ধোনি। ছবি: এএফপি

চিরকালের ‘চোকার্স’। রবিবাসরীয় ওভালেও তারা ‘চোকার্স’-ই থেকে গেল। বিদায় ঘটল তাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নামক মহাযজ্ঞ থেকে।

চিরকালের ব্যাটিং-নির্ভর একটা দল। অপ্রত্যাশিত বোলিং আর ফিল্ডিং পারফরম্যান্স ঘটিয়ে ওভালকে বশ করে ফেলল। জিতে তারা সেমিফাইনালে চলে গেল।

সন্ধে সাড়ে ছ’টার লন্ডনে বসে মনে হচ্ছে, এমন একপেশে ম্যাচ জিতবেন বিরাট কোহালিও কি ভাবতে পেরেছিলেন? অতি বড় ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকও কি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, মারো-নয়-মরো জাতীয় চাপ কাটিয়ে কোহালির ভারত এমন হেলায় উড়িয়ে দেবে বিশ্বের এক নম্বর ওয়ান ডে দলকে!

কোহালি টসে জিতে ব্যাট করতে পাঠালেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যে দলের প্রধান ব্যাটসম্যান তাঁর বিশেষ বন্ধু এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সতীর্থ এ বি ডিভিলিয়ার্স। কী দুর্ধর্ষ ব্যাটিং লাইন-আপ তাঁদের। ওপেন করতে আসেন কুইন্টন ডি’কক এবং হাসিম আমলা। কয়েক দিন আগেও আমলা আইপিএলে সকলকে চমকে দিয়েছেন তাঁর অভাবনীয় স্ট্রোক প্লে দিয়ে। ডি’কক বরাবর ভারতের বিরুদ্ধে ভাল খেলেন। দু’জনে প্রথম উইকেটে তুলে দিলেন ৭৬।

যদিও খুব মন্থর গতিতে সেই রান এল, একটা ঠান্ডা স্রোত বইতে শুরু করে দেয় যে, দারুণ এই শুরু না টুর্নামেন্ট থেকে অকাল বিদায় ঘটায় কোহালিদের। উৎসবের লন্ডন না আগের দিনের শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতোই পাল্টে যায় বিষাদের লন্ডনে।

আরও পড়ুন: বার্মিংহাম আমাদের প্রিয়: কোহালি

এর পরে তাঁদের যে আরও বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানদের নামা বাকি। এ বি ডিভিলিয়ার্স। ফ্যাফ ডুপ্লেসি। ডেভিড ‘কিলার’ মিলার। জে পি ডুমিনি। প্রত্যেকে এক দিনের ক্রিকেটে দারুণ সফল সব ব্যাটসম্যান। ভারতীয় দলের জন্য প্রথম রক্তের স্বাদ আনলেন আর. অশ্বিন। প্রথম দুই ম্যাচে প্রথম একাদশে যাঁর জায়গাই হয়নি। অশ্বিন তবু আদর্শ টিমম্যানের মতো অধিনায়ক কোহালিকে বলে গিয়েছেন, বাইরে বসতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তোমার যে কম্বিনেশনটা ঠিক মনে হচ্ছে সেটাই খেলাও। অধিনায়ককে ভরসা দিয়েছেন আর নিজে দৌড়ে গিয়েছেন মাঠের চারপাশ দিয়ে। দলে জায়গা পাচ্ছেন না বলে পরিশ্রমের মাত্রা কমাননি, বরং বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

রবিবারের ওভালে অশ্বিন শুধু ফিরলেনই না। ম্যাচ শুরুর আগে দেখা গেল, তিনিই দলের পক্ষ থেকে ‘ম্যাচ বল’ দু’টো বেছে দিলেন। বোঝা গেল, প্রথম একাদশের জায়গার সঙ্গে সঙ্গে বোলিং ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্বটাও তাঁর অফস্পিনারের হাতে তুলে দিয়েছেন অধিনায়ক কোহালি। আর দলে ফিরে প্রথম সুযোগেই বাজিমাত করলেন অশ্বিন। প্রথম উইকেটটা তুললেন আমলাকে ফিরিয়ে। তখন গোটা ওভাল প্রার্থনা করছে একটা উইকেটের। অশ্বিন সেই মহাকাঙ্খিত ‘ব্রেক থ্রু’ পাইয়ে দিলেন।

মাঠে অভাবনীয় সব কোলাজ দেখা গেল এর পর। কোহালি ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ভাবে বাউন্ডারি বাঁচালেন। অশ্বিন দৌড়ে এসে পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেলেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বারবার দেখা গেল কোহালিকে এসে ফিল্ডিং, বোলিং নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। চিরকালের বিভেদে আর বিভাজনে রক্তাক্ত ভারতীয় ক্রিকেট। বরবার দেখা গিয়েছে, অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক মানে অমিতাভ, প্রেম চোপড়া। সম্পর্কের ভাঙন লেগে থাকবেই থাকবে। ধোনি-কোহালি সেই কালো ইতিহাসে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।

আরও একটি ব্যতিক্রম হতে পারেন কোহালি এবং অশ্বিন। দু’জনে ভারতীয় ক্রিকেটের জয় আর বীরু। এক জন ব্যাটিংয়ে চ্যাম্পিয়ন। অন্য জন বোলিংয়ে। সদ্য দেশের মাটিতে দুর্দান্ত সব সাফল্য পেয়ে এসেছেন অশ্বিন। তার পরেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশ্ব মানের টুর্নামেন্টে প্রথম দুই ম্যাচে জায়গা পাননি দলে। বড় প্লেয়ারের ইগোতে আঘাত লাগতেই পারত।

অশ্বিন কোনও ক্ষোভ দেখাননি। আঘাত যদি লেগেও থাকে, মাঠে নেমে আগুনটা ঝরিয়ে দিলেন। ৯ ওভারে ৪৩ রানে আমলার প্রথম উইকেট। মনে হয় না আর তাঁকে বেঞ্চে বসে থাকতে হবে। তিনি এবং রবীন্দ্র জাডেজা— চার বছর আগে ইংল্যান্ডেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের দুই প্রধান কারিগর ছিলেন। প্রধান উইকেটশিকারী ছিলেন তাঁরা দু’জন। রবিবার ওভালে যে রকম রোদ ঝলমলে দিন গেল তাতে নতুন পূর্বাভাস উঠে এসেছে যে, ২০১৩ সালের মতো এ বারও না পিচগুলো শুকনো হতে শুরু করে আর কোহালির টিমকে এর পর আরও অপ্রতিরোধ্য দেখায়। সেক্ষেত্রে ভারতের দুই স্পিনার থিওরি কিন্তু ফের সেরা অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে হয়তো পেসাররাও বড় ভূমিকা নিলেন। ভুবনেশ্বর কুমার নিলেন ২৩ রানে দুই উইকেট। যশপ্রীত বুমরা ৮ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে নিলেন দুই উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন তিনিই। কিন্তু আসল প্রাপ্তি হয়ে থাকল দুই স্পিনারের সাফল্য।

ম্যাচ ঘোরানোর মুহূর্ত হিসেবে যদিও থেকে গেল দু’টো রান আউট। একটাতে গেলেন অধিনায়ক ডিভিলিয়ার্স। অন্যটাতে ‘কিলার’ মিলার। যে দু’জনকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি করে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন গড়ে উঠেছিল। দেখতে দেখতে যদিও মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপ বা বিশ্ব মানের টুর্নামেন্ট মানে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে স্বপ্ন নয়, দুঃস্বপ্ন শব্দটাই প্রাসঙ্গিক।

তারা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতবে। অনেক বড় বড় দলকে হারাবে। বিশ্বের এক নম্বর ওয়ান ডে টিম হতে পারে। যেমন এখন আছে। কিন্তু বিশ্বকাপ বা বিশ্ব মানের কোনও টুর্নামেন্টে জিতবে না। মোক্ষম ম্যাচে এসে ঠিক গলা শুকিয়ে যাবে। এটাই তো হ্যান্সি ক্রোনিয়েদের ক্রিকেটের পরম্পরা। প্রয়াত ক্রোনিয়ের ক্ষেত্রে তবু পরে জানা গিয়েছিল, পয়সা খেয়ে ম্যাচ ছাড়তেন তিনি। ক্রোনিয়ের পরবর্তী অধিনায়কদের ক্ষেত্রে তো সেই অভিযোগও ওঠেনি। তাঁরা শুধুই চোকার্স অ্যান্ড চোকার্স।

কোথাও একটা রান আউটের অভিশাপও যেন তাড়া করে তাদের। নিরানব্বই বিশ্বকাপে লান্স ক্লুজনার- অ্যালান ডোনাল্ডের সেই কুখ্যাত রান আউট। এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই ঘটেছিল। বার্মিংহামের সেমিফাইনালের সেই রান আউটের নামকরণ হয়ে যায়, ‘চোক অব দ্য সেঞ্চুরি’। এর পর ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ। সেখানেও আজকের এই দু’জন ডিভিলিয়ার্স এবং মিলার রান আউট হন।

কী শিরোনাম হওয়া উচিত রবিবারের ওভাল ম্যাচের, তা নিয়ে বেশি ভাবারই দরকার নেই। দক্ষিণ আফ্রিকাকে রান আউট করে সেমিফাইনালে কোহালির ভারত!

India vs South Africa চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ICC Champions Trophy 2017 Champions Trophy Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy