Advertisement
E-Paper

বেদীর গ্যাস চেম্বারের উল্টো ফুটপাথে নতুন বিভীষিকা আবহাওয়া রিপোর্ট

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের যে গেট দিয়ে কোহলি আর আমলাদের টিমবাসগুলো দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে ঢুকবে, কাব্বন পার্ক ঠিক তার মুখোমুখি। কলকাতায় কার্জন পার্ক আর ইডেন গার্ডেন্সের মধ্যে যা দূরত্ব, তার চেয়েও কম। জাস্ট রাস্তার দু’দিকে দুটো ফুটপাথ। পুবে স্টেডিয়াম, পশ্চিমে পার্ক। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে দুশো একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, দেড়শো বছর পুরনো পার্কটার একটা অন্য পরিচিতি রয়েছে।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৯
রাজা ও ফকির। আইপিএলের চেনা ডেরায় ফুরফুরে বিরাট।

রাজা ও ফকির। আইপিএলের চেনা ডেরায় ফুরফুরে বিরাট।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের যে গেট দিয়ে কোহলি আর আমলাদের টিমবাসগুলো দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে ঢুকবে, কাব্বন পার্ক ঠিক তার মুখোমুখি।

কলকাতায় কার্জন পার্ক আর ইডেন গার্ডেন্সের মধ্যে যা দূরত্ব, তার চেয়েও কম। জাস্ট রাস্তার দু’দিকে দুটো ফুটপাথ। পুবে স্টেডিয়াম, পশ্চিমে পার্ক। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে দুশো একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, দেড়শো বছর পুরনো পার্কটার একটা অন্য পরিচিতি রয়েছে।

বিষেণ সিংহ বেদীর গ্যাস চেম্বার।

শুক্রবারও রবি শাস্ত্রী আতঙ্কিত ভাবে বলছিলেন, ‘‘বিষেণ দৌড় করাতে নিয়ে গেল আমাকে আর দিলীপ বেঙ্গসরকরকে। ও তখন সিলেক্টর। চুরাশিতে জাহির আব্বাসের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে দু’জনকে হঠাৎ ও বাদ দিয়েছিল। এর পর লাঞ্চে বলল চলো, ছুটতে চলো। সে ছোটাচ্ছে তো ছোটাচ্ছেই। দিলীপ দৌড়তে দৌড়তে গালাগাল করছে আর বলছে, ‘পাগল সর্দার শেষ করে দিল। কী অদ্ভুত প্রাণী এই মালটা।’’’

এর পর ছয় বছর বাদেও যে একই কাহিনি শাস্ত্রী ভোলেন কী করে! ইংল্যান্ড সফরের আগে সেটা ছিল নির্বাচনী ট্রায়াল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সে বারই প্রথম ভারতীয় দলের সঙ্গে গা ঘষাঘষির সুযোগ পান। বেদী তাঁকে তখন ভাল বা খারাপ কোনও কারণের জন্যেই মনে রাখেননি। তাঁর যাবতীয় মনোযোগ ছিল ওই ক্যাম্পে থাকা শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। কাব্বন পার্কে ভারতীয় কোচ পাথরের ওপর দিয়ে টানা দৌড় করাচ্ছেন। সিধু আর জাডেজার পাথরে রক্ত ঝরছে দেখেও সর্দার থামতে বলছেন না। এ সব দেখেটেখে শরদিন্দু একটা লাইন তৈরি করেন— বিষাণ অন এ মিশন টু কিল।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বাকি টেস্ট সিরিজ কতটা জনপ্রিয়তা পাবে, সময় বলবে। কিন্তু ওই লাইনটা আজহারের তখনকার টিমে খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়— বিষাণ অন এ মিশন টু কিল। সিধু নাকি বলেছিলেন, ‘‘আমি যে কোনও জায়গায় মারা যেতে পারি। হসপিটালে। গুরুদ্বারে। কিন্তু পার্কে কেন বেঘোরে প্রাণ দেব, কেউ আমায় বুঝিয়ে বলতে পারে?’’

বেদী সেই সিধু সংলাপের কথা না জানলেও দ্রুত পদ্য রচয়িতার নাম জেনে যান এবং তার পর তাঁর যা উত্তেজনা, এই পঁচিশ বছরেও বিশেষ প্রশমন হয়নি। ‘‘বাঙালি ক্রিকেট খেলবে কী, তার আগে তো কবি হবে। সেটাই স্বাভাবিক, না?’’ সে দিনও ক্ষুব্ধ স্বরে বলেছেন। হালফিলে টিম ইন্ডিয়ায় বিদেশি ফিজিও, বিদেশি ট্রেনার। কিন্তু কোহলির টিমকে কাব্বন পার্কে দৌড় করানোর কথা কেউ ভাবেনি।

শুক্রবার সকালে বেদীর সেই গ্যাস চেম্বারে ঘুরতে গিয়ে দেখলাম এলাকাটা ফুল দিয়ে এমন সাজানো যে, আলিপুর হর্টিকালচার গার্ডেন্স মনে হতে পারে। মহীশূরের প্রাক্তন মহারাজা চামারাজেন্দ্র ওড়িয়রের শ্বেতপাথরের মূর্তির সামনে তো গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকা-গোলাপে স্তূপীকৃত। কে বলল আজ নাকি ফ্লাওয়ার শো আছে।

ওই ফুলের স্তূপ দেখলে কে বলবে মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে এখানে যে বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে নৃশংস আর লজ্জাজনক ধর্ষণের ঘটনা সম্পাদিত হয়েছে! টিম ইন্ডিয়ার কেউ কেউ এ দিনও বলছিলেন, শহরের মাঝখানে এ রকম একটা ব্যস্ত এলাকা যেখানে রাত এগারোটা অবধি সমানে গাড়ি চলে, সেখানে ন’টার সময় কী করে গ্যাংগ রেপের ঘটনা সম্ভব! বেদীর গ্যাস চেম্বার ছিল নিছকই ক্রিকেটারদের বিভীষিকা। এই ঘটনা তো শহর বেঙ্গালুরুর নাগরিক জীবনের বিভীষিকা!

দিল্লি যেমন ‘নির্ভয়া’ এপিসোডে শহরব্যাপী ধিক্কারে ফেটে পড়েছিল, এখানে তার কোনও চিহ্ন নেই। জীবন তার নিজের গতিতেই প্রবহমান। উল্টো ফুটপাথে ততক্ষণে ডেল স্টেইন টেস্টের বাইরে ঘোষিত হয়ে গিয়েছেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা মর্নি মর্কেল নিয়ে নতুন বোলিং গ্রুপ গড়ে তোলায় মগ্ন হয়ে পড়েছে।

ব্রিজেশ পটেল যতই ক্রিকেট মাঠে অভিনব ওই পিচ শামিয়ানার ব্যবস্থা করে থাকুন, আজ খোলার পর বোঝা যাচ্ছে না বল যথেষ্ট টার্ন নেবে কি না। বরঞ্চ দিনভর যেমন হাফ সোয়েটার যোগ্য কনকনে হাওয়া আর মেঘলা আকাশ, তাতে মর্কেল-রাবাদা সিরিজ ১-১ করার যুদ্ধে আমলার দুই আদর্শ আমলা হতে পারেন।

নতুন দক্ষিণ আফ্রিকান আক্রমণ যদি ভারতকে চূড়ান্ত বেগ দিতে পারে তা হলে বেঙ্গালুরু মাঠের অঙ্গসজ্জার মতোই চমকপ্রদ হবে। মাঠটায় এ দিন ঢুকে মনে হল কাল বুঝি আইপিএল ফাইনাল। স্পনসরদের এতটাই সরব উপস্থিতি। মাঠে উইকএন্ডের টেস্ট ক্রিকেটও কত দর্শক টানবে, কেউ জানে না। কিন্তু ইনস্টেডিয়া বিজ্ঞাপনে চিন্নাস্বামীকে সাজিয়ে দিয়েছেন ব্রিজেশ। নিয়ম অনুযায়ী মাঠের ৭০টা বিলবোর্ডের মধ্যে ১২টা পায় বোর্ডের প্রধান টিম স্পনসর। এখানে পেটিএম। কিন্তু তার বাইরেও বিস্তৃত বিলবোর্ড নিয়েছে হিরো, গ্যালাক্সি ওয়ান্স, জেন মোবাইল, ইউনিভার সেল, ওয়ান ওয়ার্ল্ড। শুধু পিচ ঢাকার অভিনবত্ব নয়, স্পনসর টানার এই সাফল্যটাও সিএবির নতুন প্রশাসনের অবশ্য অনুকরণযোগ্য।

আরও একটা চমক হবে যদি ভারত গুরকিরত সিংহ মানকে কাল নামায়। পঞ্জাবের এই তরুণকে হঠাৎ করে উড়িয়ে এনেছে টিম। সোমবার থেকে পঞ্জাবের রঞ্জি ম্যাচ আছে জেনেও। কোহলি সাংবাদিক মিটে বললেন, ‘‘খুব শিগগিরই ও খেললে আশ্চর্য হবেন না।’’ জল্পনা তুঙ্গে উঠে গেল, খুব তাড়াতাড়ি মানে কি কালই? এটা কি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নয়া চমক?

রাতে শুনলাম আপাতত তিনি তিন স্পিনারের স্ট্যান্ড-বাই। এঁদের কোনও সমস্যা হলে তবেই একমাত্র তাঁর ইন্ডিয়া ক্যাপ জুটবে। গুরকিরত মান অলরাউন্ডার। অফস্পিন বল করেন আর ব্যাটে লম্বা লম্বা ইনিংস খেলেন পঞ্জাবের জন্য। তাঁকে আনানোর ভাবনাটা নাকি ফিল্যান্ডারের চোট থেকে। হঠাৎ টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হতে পারে, তিন স্পিনারের যে কেউ অসুস্থ হলে কী হবে? স্কোয়াডে তো পরিবর্ত কোনও স্পিনার নেই। একে তো গুরকিরত ছয় নম্বরে থাকলে ব্যাটিংয়ের লেজটা লম্বা হবে। তার ওপর স্পিনারের জায়গাটা ম্যানেজ করতে পারবেন।

প্রশ্ন হল স্পিনার যদি নিতেই হয়, প্রজ্ঞান ওঝা নন কেন? ঘরোয়া ক্রিকেটে এ বার তো তিনি সবচেয়ে সাড়া জাগানো স্পিনার?

কর্তা ব্যক্তিদের উত্তর, ‘‘আমরা এমন কাউকে চাইছি যে ছয় নম্বরে ব্যাটও করবে। শুধু বল নয়। প্রজ্ঞান ওঝা তো আর অলরাউন্ডার নয়।’’

বাগানের শহরে প্রজ্ঞানকে ডেকে নিলে অবশ্য মনোজ তিওয়ারির বিভীষিকা হত। ভারতকে জেতাতে যদি প্রজ্ঞান নেমে পড়েন, রঞ্জির বাকি ম্যাচগুলোয় বাংলাকে জেতাবে কে?

পুনশ্চ: রাতের বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় দলের নতুন আস্তানা রিৎজ কার্লটনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে এক নতুন বিভীষিকা জারি হয়েছে। কী, না বেঙ্গালুরুর সর্বশেষ ওয়েদার বুলেটিন। যা বলছে, চেন্নাইয়ে নতুন নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। আর সেই সাইক্লোন বেঙ্গালুরু উপকূলে আছড়ে পড়ার এমনই আশঙ্কা যে, দ্বিতীয় টেস্টের দু’দিন নাকি টিম ইন্ডিয়াকে ড্রেসিংরুমে কাটাতে হতে পারে। টিম মিটিংয়ে কেউ কেউ বলেছেন, ২-০ এগিয়ে যাওয়ার এটাই সেরা সুযোগ। আর সেখানে কি না আবার বৃষ্টির সঙ্কেত? শুক্রবার মাঝরাত্তির অবধি বৃষ্টি না হওয়ায় শনিবার আরও ঝলমলে যাবে আশা করা হচ্ছিল। সেখানে বড় দুর্যোগের খবর— বেদীর গ্যাস চেম্বারের চেয়েও এই মুহূর্তে টিম ইন্ডিয়ার কাছে বড় বিভীষিকা!

ছবি: পিটিআই ও গৌতম ভট্টাচার্য।

চিন্নাস্বামী টেস্ট

সকাল সাড়ে ন’টা থেকে সরাসরি স্টার স্পোর্টস ১-এ

south africa india second test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy