ছবি এপি।
পাকিস্তান এমন একটা দল, যারা যে দিন খেলবে, সে দিন তাদের হারানো কঠিন। আর এ বারের পাকিস্তান কিন্তু একটা বাড়তি সুবিধা নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে নামবে। বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের পরিবেশ এবং পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুবিধা। বিশ্বকাপের আগে যথেষ্ট প্র্যাক্টিস পেয়ে গিয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি যে ওয়ান ডে সিরিজ খেলছে পাকিস্তান, সেখানে হারলেও কিন্তু ওদের ব্যাটসম্যানদের দারুণ ছন্দে দেখিয়েছে। ভাবা যায়, তিনটে ম্যাচে পরপর তিনশো রানের ওপর তুলে দিল ফখর জামান, ইমাম উল হকেরা। রবিবার লিডসে দুর্ভাগ্যবশত রান আউট না হয়ে গেলে সরফরাজের নামের পাশেও একটা সেঞ্চুরি হত। তিন রানের জন্য এই ম্যাচে তিনশো তুলতে পারল না পাকিস্তান।
চোখ বন্ধ করে বলা যায়, এ বার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিষ্প্রাণ পিচ হবে। যেখানে শাসন করবে ব্যাটসম্যানরাই। সেই পিচে কী রকম ব্যাট করা উচিত, তার ইঙ্গিত কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা পেয়ে গেল। সরফরাজরা বুঝে গিয়েছে, তিনশো-সাড়ে তিনশো রান করতে না পারলে বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যাবে। সেই মতোই খেলার মানসিক প্রস্তুতি ওরা নিয়ে ফেলল।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে দেখলাম, ফখর, ইমাম, বাবর আজমরা খুব ভাল ব্যাট করল। ফখর যে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে, সেটা তো আমরা বছর দুয়েক আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেই দেখেছি। ইমামও বড় রান করার মতো ব্যাটসম্যান। আর বাবরকে তো এই পাকিস্তান দলের অন্যতম সেরা প্রতিভা। এর সঙ্গে যোগ করুন মহম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের। তা হলেই বোঝা যাবে পাকিস্তানের ব্যাটিং কতটা শক্তিশালী।
এর আগে অবশ্য দেখা যেত, ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়েই বেশি এগিয়ে পাকিস্তান। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বোলারদের খুবই সাদামাটা দেখিয়েছে। পরপর চারটে ওয়ান ডে-তে তিনশোর অনেক বেশি রান করল ইংল্যান্ড। পাকিস্তান বোলিং দেখে মনে হচ্ছে, ওদের কোনও ধারণাই নেই কী ভাবে ইংল্যান্ডের এই বিধ্বংসী ব্যাটিংকে আটকাবে।
তবে এ রকম মার খেলেও একটা সুবিধে পাবে পাক বোলাররা। ওদের কোথায় খামতি আছে, তা বুঝে নিতে পারল জুনেইদ খান, হাসান আলিরা। এও বুঝে গেল, এক জন রিস্ট স্পিনার ছাড়া বিশ্বকাপে ভাল কিছু করা কঠিন। আমার মনে হয়, কোনও রকম দ্বিধা না করেই ওরা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে লেগস্পিনার শাদাব খানকে খেলিয়ে দেবে। শাদাব দলে এলে কিন্তু পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের ধার বেড়ে যাবে। যেমন বেড়ে যাবে মহম্মদ আমির যোগ দিলে।
১৬ জুন, ম্যাঞ্চেস্টারে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে নামার সময় বিরাট কোহালিকে কিন্তু শুধু সতর্ক থাকলেই হবে না, অতি সতর্ক থাকতে হবে। মাথায় রাখতে হবে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা সবাই মোটামুটি ফর্মে আছে। চলতি সিরিজে সেঞ্চুরি করেছে ইমাম, ফখর, বাবর। এটাও মাথায় রাখতে হবে, পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কিন্তু স্পিনটা ভালই খেলে। সে ক্ষেত্রে মাঝের ওভারে ওরা কুলদীপ যাদব বা যুজবেন্দ্র চহালের বিরুদ্ধে সমস্যায় নাও পড়তে পারে। তবে এটাও ঠিক, আমাদের দুই রিস্ট স্পিনার বিদেশি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপে পাকিস্তান কখনও ভারতকে হারাতে পারেনি। আমার মনে হয়, এ বারও পারবে না। যতই ফর্মে থাকুক, অতীতের পাকিস্তানের চেয়ে বর্তমান যুগের এই দলটা কিন্তু একটা ব্যাপারে অনেক পিছিয়ে। সেটা হল, মানসিকতায়। যে পাকিস্তান দলে ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আক্রম খেলত, সেই দলের মানসিকতা অনেক ডাকাবুকো ছিল। ভয় পেতে জানত না ওরা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান দলের মানসিকতাতেও বদল এসেছে। ওরাই এখন বাকিদের ভয় পায়। যে কারণে সরফরাজরা পিছিয়ে পড়ছে।
ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতই এগিয়ে শুরু করবে। কিন্তু কোহালিদের ওই দিনটায় ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy