Advertisement
২২ মে ২০২৪

কোহালি ক্লাসিকেও হার, বিশ্রামে ধোনি

ভারতীয় সেনার টুপিতে মাঠে নামার মুহূর্তকে সকলে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের দাপট এবং অ্যাডাম জাম্পার স্পিনের সামনে পথ হারিয়ে ৩২ রানে ম্যাচ হারায় ফৌজি টুপিতে জিতে বেরনো হল না। ১১৩ বলে ১০৪ করে ম্যাচের সেরা উসমান খোয়াজা। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও (৯৯ বলে ৯৩) অবশেষে রানে ফিরলেন।

হতাশ: বিরাটের টানা সেঞ্চুরিও জেতাতে পারল না। গেটি ইমেজেস

হতাশ: বিরাটের টানা সেঞ্চুরিও জেতাতে পারল না। গেটি ইমেজেস

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচী শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:০৩
Share: Save:

আরও একটা দিন।

আরও একটা ক্রিকেট ম্যাচ।

আরও একটা রান তাড়া করা।

আরও একটা বিরাট কোহালি সেঞ্চুরি। এই নিয়ে ওয়ান ডে ক্রিকেটের ৪১তম।

কিন্তু আরও একটা বিরাট জয়ের রাত এল না। ভারতীয় সেনার টুপিতে মাঠে নামার মুহূর্তকে সকলে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের দাপট এবং অ্যাডাম জাম্পার স্পিনের সামনে পথ হারিয়ে ৩২ রানে ম্যাচ হারায় ফৌজি টুপিতে জিতে বেরনো হল না। ১১৩ বলে ১০৪ করে ম্যাচের সেরা উসমান খোয়াজা। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও (৯৯ বলে ৯৩) অবশেষে রানে ফিরলেন। জ়াম্পা দশ ওভারে ৭০ রান দিয়ে নিলেন তিন উইকেট। শিশির পড়বে ভেবে কোহালি টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই নিজের শহরের আবহাওয়া সম্পর্কে পরামর্শ ছিল ধোনিরও। কিন্তু তাঁদের বোকা বানিয়ে শিশির অদৃশ্য থেকে গেল শুক্রবার রাতে। তাই পরে বোলিং করেও অস্ট্রেলীয় স্পিনাররা ভেল্কি দেখিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ভারতকে ৩২ রানে হারিয়ে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখল অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া।

কোহালিদের ড্রেসিংরুমের কাছে আরও বড় ধাক্কা হচ্ছে, দেশের মাঠে দেশের হয়ে শেষ ম্যাচে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে জয় উপহার দিতে না পারা। রাঁচীর ম্যাচ নিয়ে বলা হচ্ছিল, এটাই ঘরের মাঠে ধোনির শেষ ম্যাচ। আসলে যে ভারতের মাটিতেই ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচ, সেই খবর শুক্রবারেই লেখা হয়েছিল একমাত্র আনন্দবাজারে। লেখা হয়েছিল, ধোনি নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে, দেশের মাঠে দেশের হয়ে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলতে চান নিজের শহরে। সেই কারণে মোহালি এবং দিল্লিতে শেষ দুই ম্যাচে খেলতে চান না। এ দিন ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার জানিয়ে দিলেন, শেষ দুই ম্যাচে বিশ্রামেই যাচ্ছেন ধোনি। এই সিরিজে আর খেলছেন না মানে ভারতের হয়ে খেলবেন শুধু বিশ্বকাপে। তার পর দেশের নীল জার্সি তুলে রাখা এক প্রকার নিশ্চিত। তার পরে দেখা যাবে আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সিতে।

রাঁচীর ক্রিকেট ভক্তরাও জানতেন, প্রিয় মাহিকে ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হিসেবে হয়তো এটাই শেষ দেখা। স্টেডিয়াম ভরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা সাত নম্বর জার্সিতে। সন্ধেবেলায় ফ্লাডলাইটে যখন তিনি ব্যাট করতে নামছেন, ঘড়িতে ছ’টা পনেরো। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় টিভি ক্যামেরা ফোকাস করল ঠিক সামনের ভিআইপি গ্যালারিতে। দেখা গেল স্ত্রী সাক্ষী ধোনি উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। গোটা স্টেডিয়ামে মোবাইলের টর্টলাইট জ্বালিয়ে মোহময় করে তুললেন দর্শকেরা। এত কাল তিনি আলো দিয়ে এসেছেন। বিদায়বেলায় মাঠকে আলোকিত করে প্রিয় তারকাকে স্মরণীয় ফেয়ারওয়েল দেওয়া হচ্ছে।

স্কোরবোর্ডে তখন ২৭-৩। ভারত তাড়া করছে ৩১৩। শুরুর ব্যর্থতা থামার লক্ষণ নেই। শিখর ধওয়ন ফের কাট মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন। সংগ্রহ ১। রোহিতের ব্যাটে ফের অন্ধকার। ১৪ বলে ১৪। অম্বাতি রায়ডুকে দেখে মনে হল, তেত্রিশ বছর বয়সে এসে এত চাপ আর নিতে পারছেন না। ৮ বল খেলে তাঁর করা কুৎসিত ২ হার্টের রোগীদের দেখা মোটেও কাম্য নয়।

ধোনি চাপের মধ্যে এসে শুরু করেছিলেন স্বভাবসিদ্ধ ধীরস্থির ভঙ্গিতে। অন্য দিকে কোহালি ক্লাসিকের রামধনুতে ছেয়ে যাচ্ছে মাঠ। দুর্ধর্ষ সব স্ট্রোক খেলছেন। কখনও অসাধারণ কভার ড্রাইভ, কখনও কব্জির মোচড়ে শিল্পীর মতো হুইপ শট, আবার কখনও সাবলীল অন ড্রাইভ। ধোনি একটা ছক্কা মারলেন। মনে হল যেন গ্যালারি বলে উঠল ‘মাহি মার

রহা হ্যায়’।

কে জানত, স্পিনের মাস্টারদের ধরাশায়ী করে দেবেন এক স্পিনার— শিশুসুলভ মুখের অ্যাডাম জ়াম্পা। ধোনিকে ব্যাট-প্যাডে লাগিয়ে বোল্ড করলেন। পুরো স্টেডিয়াম নিস্তব্ধ করে দিলেন। কেদার যাদবকে এলবিডব্লিউ করলেন। তার পর কোহালির উইকেট নিয়ে খানখান করে দিলেন ভারতের জয়ের আশা। ‘চেজমাস্টারের’ অবিশ্বাস্য ইনিংসও যথেষ্ট হল না ভারতকে জেতানোর জন্য। ৪১ ওয়ান ডে সেঞ্চুরির ২৫টি এসেছে রান তাড়া করার সময়। এই নিয়ে মাত্র চতুর্থ বার সেঞ্চুরি করেও জেতাতে পারলেন না কোহালি। যদিও তাঁর ব্যাটিং নিয়ে মুগ্ধ বিশ্ব। কেভিন পিটারসেন টুইট করলেন, ‘‘বিরাট কোহালি, তুমি কি রসিকতা করছ? কোথায় টেনে নামিয়ে আনছ আমাদের বলো তো?’’ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি-র টুইটারে তাঁর বন্দনা। এমনকি, যাদের বিরুদ্ধে কোহালি খেলছিলেন, সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড পর্যন্ত তাদের টুইটারে লিখেছে, ‘‘কোহালির সেঞ্চুরি নম্বর ৪১। কী অসাধারণ এক ক্রিকেটার!’’

অধিনায়ক কোহালিকে চিন্তায় রাখছে দলের এলোমেলো ব্যাটিং। ‘‘এই সিরিজে উপরের দিকের ব্যাটিং ব্যর্থ হচ্ছে। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না,’’ ম্যাচের পরে বলে গেলেন তিনি। কয়েকটি বদলের ইঙ্গিতও দিয়ে গেলেন তিনি। ধোনির জায়গায় ঋষভের খেলা নিশ্চিত। কে এল রাহুলকেও সুযোগ দেওয়া হতে পারে অম্বাতি রায়ডুর জায়গায়। সব চেয়ে চিন্তার কারণ হচ্ছে, ভারতীয় ব্যাটিংকে অতিরিক্ত কোহালি-নির্ভর দেখাচ্ছে। ঠিক যেমন একটা সময় বলা হত ‘সচিন আউট মানে ভারত আউট’। সাক্ষী ধোনিকে আরও এক বার উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে দেখা গেল। কোহালি যখন অসাধারণ ইনিংস খেলে আউট হয়ে ফিরছেন। সব হার লজ্জার হয় না যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE