Advertisement
E-Paper

ধবন ঝড়ের পরে পাল্টা ধাক্কা লঙ্কার

চলতি সফরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়ার পরে দিনের শেষে শিখরকে দেখা গেল রোহিত শর্মাকে দেখে নেমে এলেন ড্রেসিংরুম থেকে। দলে এই মুহূর্তে সুযোগ না পাওয়া রোহিত দৌড়তে যাবেন।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫৮
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পরে উৎসব শিখর ধবনের। শনিবার পাল্লেকেলেতে। ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পরে উৎসব শিখর ধবনের। শনিবার পাল্লেকেলেতে। ছবি: রয়টার্স

শিখর ধবনকে ব্যাট করতে দেখলে কে বলবে, তিনি সুফি সঙ্গীতের ভক্ত! তাঁর খেলার ভঙ্গি যে একেবারে পপ সঙ্গীতের মতো।

চলতি সফরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়ার পরে দিনের শেষে শিখরকে দেখা গেল রোহিত শর্মাকে দেখে নেমে এলেন ড্রেসিংরুম থেকে। দলে এই মুহূর্তে সুযোগ না পাওয়া রোহিত দৌড়তে যাবেন। শিখর এসে বললেন, ‘‘চল, আমিও যাব তোর সঙ্গে দৌড়তে।’’ সেঞ্চুরি করেও দিনের শেষে ব্যাটসম্যান রানিং করছেন, এমন দৃশ্য কি আগে কখনও দেখা গিয়েছে?

ও দিকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মাইক-টাইক লাগিয়ে ধারাভাষ্যকারেরা তৈরি হচ্ছেন। তাঁরাও বিস্মিত। দিনের সেরা ব্যাটসম্যান ইন্টারভিউ দিতে আসবেন কী, তিনি তো সেঞ্চুরি করেও সতীর্থের সঙ্গে দৌড়চ্ছেন! এমন দৃশ্য তাঁরাও বোধ হয় দেখেননি।

ধবনের স্ট্রোকের ফুলঝুরির মতোই আকর্ষণীয় তাঁর গানের কালেকশন। সুরের চেয়েও বেশি করে তিনি গানের কথার (লিরিক) ভক্ত। যে গানের ভাষা নেই, তা তাঁকে টানে না। গুলাম আলি বা জগজিৎ সিংহের গজল তাঁর মোবাইলে ধরা আছে। গুরুদাস মানের গান আছে। আর নিজে যত্ন করে প্রিয় গানের প্রেরণামূলক কথাগুলো আলাদা করে রেখেছেন। ওগুলো শুনলে নাকি স্বর্গীয় একটা ভাব আসে তাঁর মধ্যে।

আরও পড়ুন: ভারত-পাক স্বাধীনতা দিবসের আগে শান্তির বার্তা আফ্রিদির

শিখর ধবনের জীবনে এই ভাবটাই আসল। মনটা হবে রাজার মতো। শনিবার ১২৩ বলে ১১৯ করে চালাতে গিয়েই আউট হয়ে গেলেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সাফ বলে দিলেন, ‘‘আমি সতীর্থদের বলি, বাঁচলে রাজার মতো বাঁচব। ঠুকঠুক করতে গিয়ে আউট হব না। আমি স্ট্রোক খেলতে ভালবাসি। সেটাই চালিয়ে যাব। ডিফেন্ড করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার চেয়ে স্ট্রোক নিতে গিয়ে কারও দারুণ ক্যাচে আউট হওয়াটা ভাল।’’ তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই মাইক হাতেও সোজাসাপ্টা শিখর ধবন। শ্রীলঙ্কায় তিন টেস্টের সিরিজে এটা তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। মোট টেস্ট সেঞ্চুরি হল ছ’টি। কিন্তু ছ’টির মধ্যে পাঁচটি সেঞ্চুরি বিদেশে।

তেমনই চাঞ্চল্য ফেলে দেওয়া তাঁর সেলিব্রেশন ভঙ্গি। একে তো ঊরুতে চাপড় মেরে উৎসব করার জন্য এবং গোঁফ পাকানোর জন্য টিমের ‘গব্বর’ নাম হয়েই গিয়েছে। দু’হাত ছড়িয়ে শাহরুখ খানের স্টাইলে তাঁর উৎসব করার ভঙ্গিও খুব বিখ্যাত। এ দিন পাল্লেকেলের পাহাড়ে ঘেরা দর্শনীয় মাঠে শিখর আবার নতুন মশলা যোগ করলেন। সেঞ্চুরি পূরণ করা মাত্র হেলমেট, গ্লাভস খুলে রাখলেন পিচের পাশে। তার পর শাহরুখ স্টাইলে হাত ছড়িয়েই থামলেন না, দু’হাতে ‘ভিকট্রি’ চিহ্ন করে দেখালেন। কী অর্থ আপনার এই নতুন সেলিব্রেশনের? সাংবাদিক সম্মেলনে জানতে চাওয়ায় শিখর বললেন, ‘‘টিমে আমার নতুন নাম হয়েছে। সেই কারণেই ও ভাবে সেলিব্রেট করছিলাম ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে।’’ কী সেই নামকরণ, তা অবশ্য ভাঙতে চাননি তিনি।

টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর মতো ব্যাটসম্যানই দরকার। সেঞ্চুরি করলেন ১০৭ বলে। ইনিংসে স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯৭। কার্যত বল প্রতি রান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তিনি। বীরেন্দ্র সহবাগ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাম্প্রতিককালে এত দ্রুত হারে আর কেউ রান তুলতে পারেননি। বীরু আরও বড় ইনিংস খেলে দিতেন একই রানের গতিতে। শিখর গলে ১৯০ করার পরে পাল্লেকেলেতেও সে দিকেই এগোচ্ছিলেন। চণ্ডীমলের অবিশ্বাস্য ক্যাচ তাঁর অ্যাডভেঞ্চার থামিয়ে দিল।

কে এল রাহুল ৮৫ করলেন ১৩৫ বলে। স্ট্রাইক রেট ৬২.৯৬। চেতেশ্বর পূজারা ৮ করতে নিলেন ৩৩ বল। কোহালি চায়নাম্যান বোলার সান্দাকানের বলে স্লিপে খোঁচা মেরে আউট হলেন ৮৪ বলে ৪২ করে। স্ট্রাইক রেট ৫০। শিখরের সেখানে স্ট্রাইক রেট ৯৬.৭৪। মূলত তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই প্রথম দুই সেশনে শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর শাসন চালাল ভারত। প্রথম উইকেটে ১৮৮ উঠল মাত্র ৩৯.৩ ওভারে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে এ রকম গতিতে রান ওঠে। রাহুল ফের সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হলেন। তবে টানা হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যায় রেকর্ড স্পর্শ করলেন।

দুর্দান্ত ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙার পরেই ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলঙ্কার বোলিং। তাঁদের দুই বাঁ হাতি স্পিনার পুষ্পকুমার এবং সান্দাকান মিলে পটাপট তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট। বাঁ হাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্দোর বলেই ২৮ রানের মাথায় স্লিপে ক্যাচ গিয়ে বেঁচে যান শিখর। ওই উইকেটটা পেলে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামা ফার্নান্দো নায়ক হয়ে যেতে পারতেন। দিনের শেষের দিকে অশ্বিনের উইকেট নিয়ে তাঁকে ক্ষান্ত থাকতে হল।

বিনা উইকেটে ১৮৮ থেকে দিনের শেষে হঠাৎই ৩২৯-৬ হয়ে গিয়েছে ভারত। ক্রিজে এখনও রয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা (১৩ ব্যাটিং) এবং হার্দিক পাণ্ড্য (১ ব্যাটিং)। দু’জনেই ভাল ব্যাট করতে পারেন। শ্রীলঙ্কার হাতে রয়েছে ৬ ওভার করা দ্বিতীয় নতুন বল। পাল্লেকেলেতে আকর্ষণীয় দ্বিতীয় দিন অপেক্ষা করে থাকতে পারে। সিরিজে প্রথম বার ভারতীয় ড্রেসিংরুমে চিন্তার মেঘ ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে কোণঠাসা শ্রীলঙ্কা দল।

ও দিকে আবার পাল্লেকেলের পাহাড়ে জমে থাকা মেঘের খেলাও শুরু হয়ে গিয়েছে। সন্ধে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পূর্বাভাস ছিল শনি এবং রবিবার টানা বৃষ্টির। ম্যাচ চলাকালীন একবারের জন্যও বৃষ্টি না নামলেও ক্রিকেটারেরা মাঠ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণে না পাল্লেকেলের আকাশও বড় ভূমিকা নিয়ে নেয়!

Shikhar Dhawan Cricket Team India শিখর ধবন India vs Sri Lanka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy