Advertisement
E-Paper

এককালের অভিশপ্ত বোলিং এখন আশীর্বাদ ভারতের কাছে

কোহালি যুগে টিম সংস্কৃতি অমান্য করার সাধ্যি কারও নেই। ক্রিকেট জীবনই থেমে যাবে। এই বৈঠকগুলোতেই ঠিক হয় প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার ফর্মুলা।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৪
ভারতের চার বোলারই এখন ফর্মের শিখরে।

ভারতের চার বোলারই এখন ফর্মের শিখরে।

একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় বোলিং মানে ছিল অধিনায়কের কাছে নিশি-আতঙ্ক। ভারতীয় ক্রিকেটে কথাই ছিল, ব্যাটিং সাম্রাজ্য গড়বে। আর বোলিং সেই সাম্রাজ্যে ধস নামাবে। কে জানত, বহুকালের অভিশপ্ত সেই বোলিংই হয়ে উঠবে অধিনায়কের কাছে আশীর্বাদ। ভুবনেশ্বর কুমার থেকে যশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব থেকে যুজবেন্দ্র চহাল— ভারতীয় বোলিংয়ের নিন্দিত থেকে বন্দিত হয়ে ওঠার পিছনে রহস্য কী? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার—

হোমওয়ার্ক করো, নয়তো বাদ: আগে ভারতীয় ক্রিকেটে তারকা বোলার মানে তিনি নিজের খেয়াল খুশি মতো চলার লাইসেন্স পেতেন। সন্ধের বোলার্স মিটিংয়ে না গিয়ে ঢুকে পড়া যেত নাইটক্লাবে। কোহালি যুগে টিম সংস্কৃতি অমান্য করার সাধ্যি কারও নেই। ক্রিকেট জীবনই থেমে যাবে। এই বৈঠকগুলোতেই ঠিক হয় প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার ফর্মুলা। এ বি ডিভিলিয়ার্স যখন রান করে দিচ্ছেন, মিটিংয়েই কথা হয় তাঁকে থামানোর জন্য রান আটকাতে হবে। শুধু আক্রমণ করলে চলবে না। ফল? তৃতীয় টেস্ট থেকে এ বি-র রান নেই।

শক্তি-দুর্বলতার নতুন তত্ত্ব: আগের মতো শুধু প্রতিপক্ষের শক্তি বা দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেই চলবে না, একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের সামর্থ্য-সীমাবদ্ধতা জেনে নেওয়া। বোলারদের পরিষ্কার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে, নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করো। অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে দলকে ডুবিও না। শক্তি দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে বল করো।

রোগ নির্ণয় এবং দাওয়াই: আগে ভারতীয় বোলিংয়ের সব চেয়ে বড় রোগ ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। তিনটে বল ভাল করে ব্যাটসম্যানের উপর চাপ তৈরি করার পরেই হয়তো চতুর্থ বলটি লোপ্পা হাফভলি দিয়ে দিলেন মহম্মদ শামি-রা। এখন তাই জোর দেওয়া হচ্ছে শৃঙ্খলার উপরে। কেউ দিগ্‌ভ্রষ্ট হলেই চাবি দেওয়া হচ্ছে। কেপ টাউনে প্রথম ইনিংসে ভাল বল করেননি মহম্মদ শামি। পুরো গতিতে বলই করছিলেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কড়কানি খাওয়ার পরে সিধে হন। প্রথম ইনিংসে মাত্র একটি উইকেট পাওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে নেন তিনটি।

আরও পড়ুন: শক্তিশালী ভারত চোখ খুলে দিচ্ছে গিবসনের

ত্রয়ী: বোলিং-বিপ্লবের নেপথ্যে অরুণ, কোচ শাস্ত্রী ও কোহালি। ফাইল চিত্র

সিস্টেমকে গুরুত্ব দেওয়া: বোলারদের এখন নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মধ্যে আনা হচ্ছে। সব চেয়ে বড় উদাহরণ বুম বুম বুমরা। তাঁর গোঁত্তা খেয়ে ভিতরে ঢুকে আসা বল অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। প্যাঁচানো অ্যাকশনের জন্য রহস্যময় একটা ব্যাপার আছে। সেটা দেখেই তাঁকে টেস্টে আনার কথা ভাবা হয়। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট জানত, টেস্টে খেলতে গেলে বুমরা-কে আরও শক্তিশালী হতে হবে। সেই কারণে বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করার জন্য পাঠিয়ে তাঁকে তৈরি করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে ১৫ উইকেট নিয়ে শামি ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। দ্বিতীয় স্থানে ১৪ উইকেট নিয়ে বুমরা।

নেপথ্যের কারিগর: ভারতীয় ক্রিকেটের চাণক্য-চন্দ্রগুপ্ত জুটি হয়ে উঠছেন শাস্ত্রী-কোহালি। তাঁদের দুর্দান্ত রসায়নের প্রধান কারণ বিশ্বস্ততার বুনোট। কিন্তু বোলিংয়ের হাল ফেরানোর নেপথ্য কারিগরও আছেন। তিনি বোলিং কোচ বি. অরুণ। তাঁর বোলিং কোচের পদে নিয়োগ নিয়ে নাটক এবং বিতর্কও কম হয়নি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর যা স্কোরবোর্ড, কোনও বোলিং কোচ কখনও করে দেখাতে পারেননি। তিনটি টেস্টে ৬০ উইকেট তুলেছেন ভারতীয় বোলাররা। যা এর আগে কখনও ঘটেনি। ওয়ান ডে সিরিজে প্রথম পাঁচটি ম্যাচে তাঁরা ৫০টির মধ্যে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট। বোলিং কোচ অরুণকে তাই টিমের মধ্যে মজা করে অনেকে ডাকছেন ‘সেঞ্চুরি ম্যান’ বলে। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর বোলারদের এখন পর্যন্ত মোট শিকার সংখ্যা ১০৩। ওয়ান্ডারার্সের দ্বিতীয় ইনিংসে নতুন বল তুলে দেওয়া হয়েছিল শামির হাতে। সেই পরামর্শ আসে বোলিং কোচের কাছ থেকেই। অরুণের সব চেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, বোলারদের উপর নিজের মতামত চাপিয়ে না দিয়ে তাঁদের মনের ভাবকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেন।

যশপ্রীত বুমরা

• দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩ টেস্টে ১৪ উইকেট। ওয়ান ডে-তে ৫ ম্যাচে ৬ উইকেট। ইকনমি সেরা ৪.২০।

ভুবনেশ্বর কুমার

• দু’টি টেস্টে পান ১০ উইকেট। ভারতীয়দের মধ্যে তিন নম্বরে। ৫টি ওয়ান ডে-তে পেয়েছেন ২টি উইকেট।

কুলদীপ যাদব

• টেস্টে ছিলেন না। ৫টি ওয়ান ডে-তে ১৬ উইকেট। প্রত্যেক ১৫ বলে একটি উইকেট। ইকনমি ৪.৫১।

যুজবেন্দ্র চহাল

• টেস্টে খেলেননি। ৫টি ওয়ান ডে-তে ১৪ উইকেট। প্রত্যেক ১৮ বলে একটি উইকেট। ইকনমি ৫.৩১।

রিস্টস্পিনার লাও: এখন ফসল ফলছে। আসলে বীজ পোঁতা হয়েছিল ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ফাইনালে পাকিস্তানের সঙ্গে হারে ভারত। প্রথম ব্যাট করে পাকিস্তান তোলে ৩৩৮-৪। অশ্বিন দিয়েছিলেন ১০ ওভারে ৭০। রবীন্দ্র জাডেজা ৮ ওভারে দেন ৬৭। দু’জনের কেউ একটাও উইকেট পাননি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোচ ছিলেন কুম্বলে। কমেন্ট্রি বক্সে ছিলেন শাস্ত্রী। তিনি তখনই বুঝে যান, অশ্বিনদের মতো ফিঙ্গার স্পিনারদের দিয়ে হবে না। বিদেশের পরিবেশে রিস্টস্পিনার লাগবে। কে জানত, নাটকীয় ভাবে কুম্বলেকে সরিয়ে কোচের পদে ফিরে আসবেন শাস্ত্রী এবং তাঁর এই পর্যবেক্ষণই মাস্টারস্ট্রোক হয়ে থাকবে। হেড কোচ হিসেবে ফিরে শ্রীলঙ্কায় প্রথম সফরে গিয়েই তিনি ঠিক করেন, ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি এখনই শুরু করে দিতে হবে। রিস্টস্পিনার লাও। অশ্বিনের মতো তারকাকে বাইরে রাখতে হবে ভেবেও পিছিয়ে আসেননি শাস্ত্রী-কোহালি জুটি। অতঃপর কুল-চা জুটির প্রবেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঁচটি ওয়ান ডে-তে দু’জনের মিলিত শিকার সংখ্যা ৪০। যদি কুল-চা জুটি এ ভাবেই রহস্যের জাল বুনতে থাকে, ২০১৯ বিশ্বকাপে হট ফেভারিট হিসেবে খেলতে নামবে কোহালির ভারত-ই।

Cricket bowling Indian Cricket Team India vs South Africa ODI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy