Advertisement
E-Paper

বিশ্বকাপ অভিযানে নিশ্চিত দশ, এগোচ্ছেন শামিও, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পন্থের অগ্নিপরীক্ষা

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং দীনেশ কার্তিকের সাফল্যে এখনও পুরোপুরি ঢেকে যায়নি ঋষভ পন্থের বিশ্বকাপ ভাগ্য। বরং, বিভিন্ন সূত্র থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন তরুণ ঋষভ। 

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৪
চ্যালেঞ্জ: ঋষভ পন্থ ভাল মতোই রয়েছেন বিশ্বকাপের দৌড়ে। ফাইল চিত্র

চ্যালেঞ্জ: ঋষভ পন্থ ভাল মতোই রয়েছেন বিশ্বকাপের দৌড়ে। ফাইল চিত্র

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং দীনেশ কার্তিকের সাফল্যে এখনও পুরোপুরি ঢেকে যায়নি ঋষভ পন্থের বিশ্বকাপ ভাগ্য। বরং, বিভিন্ন সূত্র থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন তরুণ ঋষভ।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতে আসছে অস্ট্রেলিয়া। দু’টি টি-টোয়েন্টি এবং পাঁচটি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলবে তারা। সেই সিরিজই অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে ঋষভের। টেস্ট মঞ্চে আগমনেই যে রকম সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি, তা যদি ওয়ান ডে-তে দেখাতে পারেন, ইংল্যান্ডগামী উড়ানে উঠে পড়তেই পারেন। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেও জায়গা পেতে পারেন ঋষভ।

এই মুহূর্তে বিরাট কোহালির সংসারে বেশ কয়েক জন সদস্য বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছেন। ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বর কে হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। দশ বছর পরে নিউজ়িল্যান্ডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলা কোহালি ইঙ্গিত দিয়েছেন, অম্বাতি রায়ডুকেই সম্ভবত চার নম্বর হিসেবে নিয়ে যাওয়া হবে। তবুও ব্যাটিংয়ে চারটি নাম নিশ্চিত বলে ধরা যাচ্ছে: রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন, কোহালি এবং রায়ডু।

পনেরো জনের দলে অন্তত ছয় বা সাত জন ব্যাটসম্যান থাকবেন। বাকি দুই বা তিনটি জায়গার জন্য লড়াইয়ে আছেন কর্ণ জোহরের টিভি শো-তে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে নির্বাসিত হওয়া কে এল রাহুল (তৃতীয় ওপেনার হিসেবে থাকতে পারেন), কেদার যাদব, দীনেশ কার্তিক এবং ঋষভ পন্থ। এটাই দেখার যে, তিন জন উইকেটকিপার একই সঙ্গে দলে সুযোগ পাওয়ার মতো বিরল পরিস্থিতি উদয় হয় কি না বিশ্বকাপে!

অলরাউন্ডার হিসেবে হার্দিক পাণ্ড্যর থাকা নিশ্চিত। তুমুল আগ্রহ তৈরি হতে চলেছে দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে রবীন্দ্র জাডেজার জায়গা হয় কি না, তা নিয়ে। ফাস্ট বোলারদের মধ্যে যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার নিশ্চিত। নিউজ়িল্যান্ডে দারুণ ছন্দে থাকা মহম্মদ শামি দৌড়ে ফিরে এসেছেন। চতুর্থ পেসার হিসেবে ফেভারিট খলিল আহমেদ। বাঁ হাতি বলে এগিয়ে তিনি। তাঁকে লড়াইয়ে ফেলতে পারেন উমেশ যাদব। দুই স্পিনারের জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছেন কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল। যদি জাডেজাকে নেওয়া হয়, তিনি অলরাউন্ডার

হিসেবে যাবেন।

এ দিনই গৌতম গম্ভীর তাঁর সম্ভাব্য ভারতীয় দল ঘোষণা করতে গিয়ে অশ্বিনকে রেখেছেন। কেউ কেউ যা দেখে আঁতকে উঠেছেন। ভারতীয় দলের অন্দরে গম্ভীরের সঙ্গে একমত হওয়ার লোক পাওয়া যাবে না। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নিয়ে কেউ উদয় না হলে অশ্বিনের বিশ্বকাপ দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ইংল্যান্ডে দু’বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হারার পরে রবি শাস্ত্রী যখন কোচ হিসেবে ফিরলেন, প্রথমেই তিনি পাকিস্তানের কাছে ফাইনাল হারের ময়নাতদন্ত করতে বসেছিলেন। তাতে দেখেছিলেন, অশ্বিন এবং জাডেজা মাঝের দিকে দেদার রান বিলোচ্ছেন। উইকেটও তুলতে পারছেন না। সেই শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই ‘ফিঙ্গার স্পিনার’ (যাঁরা আঙুলের ব্যবহারে স্পিন করান) সরিয়ে কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহালের মতো ‘রিস্ট স্পিনার’ (যাঁরা কব্জির ব্যবহারে স্পিন করান) খেলাতে উদ্যোগী হন তিনি।

সেই সময়ে একটা হিসাব খুব বিখ্যাত হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০১৭-র জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল পর্যন্ত অশ্বিনের ওয়ান ডে বোলিং গড় ৩১.৯৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৭.৩। ইকনমি রেট অর্থাৎ ওভার প্রতি রান দেওয়ার হার ৪.৮৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫.৬। আগে তিনি উইকেট নিচ্ছিলেন ৪০ বল অন্তর। তখন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ বল। তেমনই জাডেজার বোলিং গড় ৩৩.১৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬১.৫৮। ইকনমি রেট ৪.৮৪ থেকে হয়ে গিয়েছিল ৫.৪৭। উইকেট নেওয়ার হার প্রত্যেক ৪১ বল থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ বলে।

রক্তাল্পতায় আক্রান্ত এই সব পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে মাথায় হাত পড়েছিল শাস্ত্রীর। অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে জরুরি বৈঠকে তিনি বার্তা দেন, দলের স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়েছে। এক দিনের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয় অশ্বিন এবং জাডেজাকে। বাঁ হাতি জাডেজা পরে দলে ফিরে আসেন তাঁর ফিটনেস, ফিল্ডিং এবং অলরাউন্ড দক্ষতার জন্য। অশ্বিন বাকি তিনটি জায়গায় খুব বেশি উন্নতির লক্ষণ দেখাতে পারেননি বলে এখনও বাইরে। বিশ্বকাপের আগে ফিরলে ক্রিকেটের সেরা অঘটন হবে!

অ্যাশ-জাড্ডুর পরিবর্তে আসা কুল-চা জুটি মাঝের দিকের বোলিংয়ে ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকে কুলদীপ ৩৮ ওয়ান ডে-তে (৩৬ ইনিংসে) ৭৭ উইকেট পেয়েছেন। গড় অবিশ্বাস্য ২০.৬২। প্রত্যেক ২৫ বল অন্তর একটি করে উইকেট তুলেছেন। চায়নাম্যান বোলার সাধারণত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমস্যায় ভোগেন। সেখানে কুলদীপ ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৪.৭৮ করে। তেমনই চহাল ৩৮ ম্যাচে (৩৭ ইনিংসে) নিয়েছেন ৬৮ উইকেট। বোলিং গড় ২৩.৮০। প্রত্যেক ২৯ বলে একটি করে উইকেট তুলেছেন। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৪.৭৬ করে। দেখা যাচ্ছে, অশ্বিন ও জাডেজাদের চেয়ে কুল-চা বেশি উইকেট তো তুলেছেনই, অনেক কৃপণ বোলিংও করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের ভুল প্রমাণ করে বুমরাকে টেস্ট খেলানোর মতোই যুগান্তকারী হয়ে থাকছে শাস্ত্রী-কোহালির এই কুল-চা জুটিকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত। হার্দিকের সঙ্গে তাঁরাই এ বারের বিশ্বকাপে তুরুপের তাস। এবং অবশ্যই বল হাতে বুম বুম বুমরা।

কারও কারও মনে হচ্ছে, এর সঙ্গে আরও এক জনকে যোগ করে ফেলতে পারলে তরুণ ব্রিগেডের ‘ফাইভ ম্যান আর্মি’ হয়ে যায়। তিনি—ক্রিকেট দুনিয়ায় ঝড় তুলে আবির্ভূত হওয়া ঋষভ পন্থ। সিডনিতে যাঁর টেস্ট সেঞ্চুরি দেখে রিকি পন্টিং বলেছেন, ‘‘ভবিষ্যতের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট!’’ দেশের মাঠে প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া। ঋষভ নিশ্চয়ই টিম পেনের দেশকে এ বারও বোঝাতে চাইবেন, তিনি ‘বাচ্চার দেখাশোনা’ করা ছাড়া একটু-আধটু

ক্রিকেটও খেলেন!

Rishabh Pant India Cricket ICC Cricket World Cup 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy