Advertisement
E-Paper

রোহিতকে এখন টেস্টেও ওপেন করানোর ভাবনা

টেস্টের দলে নেই কোনও অতিরিক্ত ওপেনার। দু’জন নিয়মিত ওপেনার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন কে এল রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগরওয়াল। তৃতীয় ওপেনারের জায়গায় লড়াইয়ে থাকা গুজরাতের প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল এবং বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরনের কেউ ডাক পাননি।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৩
দৃপ্ত: নির্বাচন কমিটির বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। রবিবার মুম্বইয়ে। এএফপি

দৃপ্ত: নির্বাচন কমিটির বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। রবিবার মুম্বইয়ে। এএফপি

বীরেন্দ্র সহবাগ ফর্মুলা মেনে রোহিত শর্মাকে টেস্টেও ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবতে শুরু করেছেন বিরাট কোহালিরা। রবিবার ওয়াংখেড়েতে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দল বেছে নিলেন জাতীয় নির্বাচকেরা। দলে না থেকেও আরব সাগরের পাড়ে সব চেয়ে আলোচিত নাম হিসেবে থেকে গেলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু আরও কয়েকটি চমকও থাকল।

যেমন টেস্টের দলে নেই কোনও অতিরিক্ত ওপেনার। দু’জন নিয়মিত ওপেনার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন কে এল রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগরওয়াল। তৃতীয় ওপেনারের জায়গায় লড়াইয়ে থাকা গুজরাতের প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল এবং বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরনের কেউ ডাক পাননি। তার প্রধান কারণ, রোহিতকে সম্ভাব্য ওপেনার হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এই মুহূর্তে টেস্টের মিডল অর্ডারের যা অবস্থা, রোহিতের জন্য জায়গা করা কঠিন। তিনে চেতেশ্বর পূজারা, চারে বিরাট কোহালি, পাঁচে অজিঙ্ক রাহানে। ছয়ে ধোনি-উত্তর যুগের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান যাঁকে ভাবা হচ্ছে, সেই ঋষভ পন্থ। অধিনায়ক কোহালির থিয়োরি, পাঁচ বোলারে টেস্ট ম্যাচ খেলা। সে ক্ষেত্রে মিডল-অর্ডারে রোহিতের জায়গা হতে পারে একমাত্র চার বোলারে খেললে অথবা অজিঙ্ক রাহানেকে বসিয়ে। আবার সহবাগের মতোই তিনি এমনই এক প্রভাব সৃষ্টিকারী ব্যাটসম্যান যে, বাইরে বসিয়ে রাখাও কঠিন। তার উপর বিশ্বকাপে সদ্য পাঁচটি সেঞ্চুরি করে এসেছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট তাই রোহিতকে ওপেনার হিসেবে পরীক্ষা করে দেখতে আগ্রহী। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন ওপেনার বানিয়েছিলেন সহবাগকে এবং বাকিটা ইতিহাস।

তবে রোহিতকে নিয়ে পরীক্ষা যদি সফলও হয়, তরুণদের হতোদ্যম হয়ে পড়ার কারণ নেই। কে এল রাহুল আছেন এবং জনপ্রিয় জনশ্রুতি হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজই তাঁর জন্য শেষ সুযোগ। ইংল্যান্ডে শেষ টেস্ট ওভালে গিয়ে সেঞ্চুরি করা ছাড়া কোনও রান ছিল না রাহুলের। অস্ট্রেলিয়ায় এত জঘন্য খেলছিলেন তিনি এবং মুরলী বিজয় যে, দু’জনকেই বসিয়ে আনকোরা ময়াঙ্ক আগরওয়াল এবং হনুমা বিহারীকে দিয়ে ওপেন করানো হয়। এ দিন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রভাবশালী মহলে কয়েক জন বেশ উত্তেজিত ভাবে বলে ফেললেন, ‘‘রাহুলকে চল্লিশটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অত সুযোগ যদি টেস্ট ওপেনার হিসেবে রোহিতকে দেওয়া হত, এত দিনে সেট হয়ে যেত।’’

বাংলার অভিমন্যুর জন্য উৎসাহব্যঞ্জক তথ্য হচ্ছে, কোহালিদের টিম ম্যানেজমেন্টের কাছেও তাঁর ব্যাটিং ফর্মের খবর পৌঁছেছে। তিনি যে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে নিয়মিত বড় রান করেছেন, দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন, নিউজ়িল্যান্ডে গিয়ে ঘাসের উইকেটে লকি ফার্গুসনের মতো এক্সপ্রেস ফাস্ট বোলারের আগুন সামলে রান করে এসেছেন— এ সব তথ্য রবিবার সকলের মুখে ঘোরাফেরা করল। তাই অদূর ভবিষ্যতে নির্বাচনী চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসতেই পারেন অভিমন্যু।

বন্ধুত্ব: দুবাইয়ে শপিং মলে রোহিতের সঙ্গে দেখা হল যুবরাজের। ইনস্টাগ্রাম

বাংলার স্থানীয় ক্রিকেটমহলে কারও কারও আবার মনে হচ্ছে, পূর্বাঞ্চল থেকে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা অশোক মলহোত্রের মতো শক্তপোক্ত কোনও জাতীয় নির্বাচক এ দিন নির্বাচনী সভায় হাজির থাকলে অভিমন্যুর জন্য জাতীয় দলের সিংহদুয়ার আজই খুলে যেতে পারত। গত মরসুমের রঞ্জি ট্রফিতে ছ’টি ম্যাচে ৮৬১ রান করেছেন অভিমন্যু। গড় ৯৫.৬৬। সঙ্গে ‘এ’ দলের হয়ে নিয়মিত ভাবে রান করে যাওয়া। নিউজ়িল্যান্ডে গিয়ে ৮৩ এবং ৪৯ রানের দু’টি ঝকঝকে, সাহসী ইনিংস। সঙ্গে দুর্ধর্ষ ফিল্ডার, যা কোহালি জমানায় অবশ্যই বাড়তি নম্বর পাইয়ে দিতে পারে। এ রকম অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েও যে হাতছাড়া হল, তার জন্য পূর্বাঞ্চল নির্বাচক দেবাং গাঁধীকে যদি সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তলব করেন, একদমই ঠিক কাজ করবেন। বাংলার ক্রিকেটার মহলে কিন্তু অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ জমছে যে, ভাল পারফরম্যান্স করার পরেও জাতীয় দলের নির্বাচনে তাঁরা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছেন। রবিবারের বৈঠকের পরে প্রশ্ন উঠতেই পারে, বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও কে এল রাহুল কেন? অস্ট্রেলিয়া সফরে সুযোগ পেলেও কুৎসিত ব্যাটিং করা হনুমা বিহারী কী করে ঢুকে গেলেন আর অভিমন্যু বা প্রিয়ঙ্কের মতো তরুণরা ধারাবাহিকতা দেখিয়েও বাইরে কেন? পূর্বাঞ্চল নির্বাচক কী করছিলেন সভায়? আরও প্রশ্ন, বারবার দক্ষিণের ক্রিকেটারদের নির্বাচন ঘিরেই কেন বিতর্ক হচ্ছে? বিশ্বকাপে বিজয় শঙ্কর এবং দীনেশ কার্তিক। এখানে রাহুল এবং হনুমা বিহারী।

বিশ্বকাপের নির্বাচনী কেলেঙ্কারির পরে কার্তিককে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি দু’টো দল থেকেই ছেঁটে ফেলা হল। চোটের জন্য হার্দিক পাণ্ড্য পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই নেই। প্রত্যাশা মতো মণীশ পাণ্ডে, শ্রেয়স আইয়ারকে নেওয়া হল ওয়ান ডে দলে। তেমনই অপ্রত্যাশিত, প্রতিশ্রুতিমান শুভমন গিলের সুযোগ না পাওয়া। আগামী দু’বছরে দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা ভেবে কুড়ি ওভারের দলে নেওয়া হল এক ঝাঁক তরুণকে। স্পিনার-অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরলেন, আইপিএলে নজর কাড়া দুই চহার, লেগস্পিনার রাহুল এবং মিডিয়াম পেসার দীপক সুযোগ পেলেন। বিশ্বকাপে চোট পাওয়া শিখর ধওয়ন ফিরলেন ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি দলে। তেমনই টেস্ট দলে ফিরলেন আর অশ্বিন। তিনি, কুলদীপ এবং জাডেজা— তিন স্পিনারে ক্যারিবিয়ান সফরে টেস্ট অভিযানে যাচ্ছেন কোহালিরা। যেটা কি না টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচ হতে যাচ্ছে তাঁদের জন্য। সাদা বলে বিশ্রাম দেওয়া হল যশপ্রীত বুমরাকে। তিনি খেলবেন শুধু টেস্ট সিরিজে। ভারতীয় পেস বিভাগে নতুন প্রতিভা নবদীপ সাইনি ডাক পেলেন ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে।

শোনা যাচ্ছে, বাংলার জন্য এক নয়, এ দিন জোড়া ভরাডুবি হতে যাচ্ছিল। টেস্টের দলে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে একটা সময় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। দক্ষিণী লবি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল কে এস ভরতের জন্য। ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে নিয়মিত ভাবে রান করেছেন ভরত, ক্যাচ এবং স্টাম্পিংয়ের সংখ্যাও খারাপ নয়। সেই কথা তুলে তাঁকেই দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে বেছে নেওয়ার দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত কোহালিদের টিম সংস্কার মেনে ঋদ্ধিকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কী সেই সংস্কার? না, কেউ চোটের জন্য ছিটকে গেলে, সে সুস্থ হওয়ার পরে আর একটা সুযোগ প্রাপ্য। কিন্তু ঋদ্ধি এবং বঙ্গ ক্রিকেট মহল নিশ্চিত থাকতে পারে, তাঁর ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলার জন্য ভরতকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে রেখে দিল নির্বাচক কমিটি। যে কমিটির প্রধান কে? না, ভরতেরই রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন উইকেটকিপার এম এস কে প্রসাদ।

Cricket India West Indies BCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy