Advertisement
E-Paper

চেনা ফর্মুলায় ভারত চেনা পরিণতির দিকে

সন্ধে এখন। কোনও বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবির মতো নৈসর্গিক পটভূমিতে আলতো বসিয়ে দেওয়া ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামে এখনই ভারতীয় টিম ফুটবল খেলতে নেমে পড়ল। বিরাট কোহালি আছেন, যেমন থাকেন। বল নিয়ে শিশুসুলভ ছুটোছুটি, হুল্লোড়ে ব্যস্ত।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
ভরসার দুই মুখ। বিরাট-অশ্বিন। শনিবার বিশাখাপত্তনমে। ছবি :শঙ্কর নাগ দাস।

ভরসার দুই মুখ। বিরাট-অশ্বিন। শনিবার বিশাখাপত্তনমে। ছবি :শঙ্কর নাগ দাস।

সন্ধে এখন। কোনও বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবির মতো নৈসর্গিক পটভূমিতে আলতো বসিয়ে দেওয়া ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামে এখনই ভারতীয় টিম ফুটবল খেলতে নেমে পড়ল। বিরাট কোহালি আছেন, যেমন থাকেন। বল নিয়ে শিশুসুলভ ছুটোছুটি, হুল্লোড়ে ব্যস্ত। বাকি টিমটাকেও দেখা যাচ্ছে মোটামুটি। শুধু তিনি নেই।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন, তিনি কোথায়?

ফুটবল খেলা যে বাধ্যতামূলক, মনে করার কোনও কারণ নেই। গোটা দিন মাঠে দাপুটে ক্রিকেট খেলার পর ফুটবল নিয়ে গা ঘামানোর ইচ্ছে অশ্বিনের না হতেই পারে। কিন্তু মাঠের ছবিটার কী হবে? ওটা তো তাঁকে ছাড়া কিছুতেই সম্পূর্ণ হচ্ছে না। মানে, যুগলবন্দির ছবিটা। বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটের সাফল্য-সংজ্ঞা যে যুগলবন্দি। পরের পর টেস্ট জয়ের চেনা সমীকরণ যে যুগলবন্দি। একজন আছেন। কিন্তু আর এক জন নেই। কোহালি আছেন। কিন্তু অশ্বিন নেই।

দেশজোড়া ক্রিকেট-সাংবাদিকদের কাছে ব্যাপারটা ক্লিশে লাগতে পারে। কিন্তু কিছু করার নেই। ভারতীয় ক্রিকেটের চেনা টেমপ্লেটই যেন হয়ে গিয়েছে, ব্যাটে কোহালি বড় রান করবেন। সেঞ্চুরি, দেড়শো বা ডাবল সেঞ্চুরি। বাকিটা দেখে নেবেন অশ্বিন। কখনও আসবে পাঁচ, কখনও সাত। চুরমার হয়ে ভূপতিত হবে প্রতিপক্ষ এবং জয়ের ক্রুদ্ধ হুঙ্কার ছাড়তে-ছাড়তে মাঠ ছাড়বে ভারত।

অ্যালিস্টার কুকও যে যুগলবন্দির রোষানল থেকে বাঁচলেন না। টেস্ট বাঁচাতে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে কোনও ‘আয়ালা’ বা ‘হুদহুদের’ প্রার্থনাতেই বোধহয় বসতে হবে!

কী করা যাবে? ক্রিকেটীয় যুক্তিতে ইংল্যান্ডের তো ন্যূনতম আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের লিড এখনই ২৯৮। হাতে সাত-সাতটা উইকেট পড়ে। চতুর্থ দিন চা বিরতি পর্যন্ত ঠিকঠাক ব্যাট করে দেওয়া মানে স্কোরবোর্ডে অন্তত সাড়ে চারশো। কে তুলবে ওই রান? কারা তুলবেন? তা-ও বিশাখাপত্তনমের পঞ্চম দিনের পিচে?

ভারতের প্রথম ইনিংস স্কোর থেকে ঠিক দু’শো রান পিছনে থেকে শনিবার শেষ হয়ে গিয়েছিল ইংরেজ ব্যাটিংয়ের প্রথম পর্ব। পরিষ্কার ফলো অন সম্ভাবনা। কিন্তু ভারত অধিনায়ক ফলো অন করালেন না। আসলে অধুনা ক্রিকেট-পৃথিবীতে কেউ ফলো অন করায় না। শখ করে কে আর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে চায়? তা ছাড়া, প্রয়োজনও ছিল না। লিডটা দু’শো রানের ছিল। দিনের খেলা শেষে চড়চড়িয়ে তার সঙ্গে আরও প্রায় একশো যোগ হয়ে গেল। আর তার নেপথ্যে কে?

কেন, বিরাট কোহালি!

ভারত অধিনায়ক যে দৃঢ়তা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছেন, দেখে মনে হল প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির অতৃপ্তি মেটাতে প্রবল ইচ্ছুক। মুরলী বিজয়, লোকেশ রাহুল, চেতেশ্বর পূজারাকে বারবার ঝামেলা ফেলল ব্রড-অ্যান্ডারসন জুটি। পূজারাকে যে রিভার্স সুইংয়ে অ্যান্ডারসন বোল্ড করলেন, এক কথায় অবিশ্বাস্য। ঠিক যেন ট্রেসার বুলেট। কিন্তু কোহালির-দর্পে এঁরা কেউই বিন্দুমাত্র আঁচ়ড়ও কাটতে পারলেন না। একটা সময় ভারত অধিনায়ক দেখা গেল, প্রায় ‘রান আ বল’ যাচ্ছেন। টেস্ট ক্রিকেটে আমদানি করছেন ওয়ান ডে ব্যাটিং। কারণ পরিষ্কার— যতটা বেশি সময় অশ্বিনদের জন্য রাখা যায়। ইংল্যান্ড-বধ নিয়ে কোনও ভাবে যেন না পড়তে হয় সময়ের টানাটানিতে।

ঘটনা হল, কোহালির বোধহয় অত তাড়াহুড়ো না করলেও চলবে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন তৃতীয় দিনে যেটা দেখিয়ে রাখলেন তা যদি ট্রেলার হয়, ফোর্থ-ফিফথ ডে উইকেটে কী যন্ত্রণা ইংল্যান্ডের জন্য অপেক্ষা করছে, আন্দাজ পেতে অসুবিধে হয় না। জনি বেয়ারস্টো-বেন স্টোকস জুটি এ দিন দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল হিন্দি প্রবাদটাকে—কিয়ে করায়ে পর পানি ফের জানা। মানে, আয়োজন সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও তাতে আচমকা বাধা পড়া। গত কাল থেকে একটা আলোচনা চলছিল যে, ভারত ম্যাচটাকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত যেতে দেবে কি না। বেয়ারস্টো-স্টোকস জুটি তার বারোটা বাজিয়ে দিলেন। দু’জনেই হাফসেঞ্চুরি করে। ভারতের ভাগ্য ভাল যে, অ্যান্ডারসনের ডেলিভারির সঙ্গে তুলনীয় না হলেও উমেশ যাদবের হাত থেকেও একটা স্মরণীয় ডেলিভারি বেরিয়েছিল সকালে। বেয়ারস্টোর ডিফেন্স যা এঁফোড়-ওফোঁড় করে চলে যায়। তার পর আর অসুবিধে হয়নি। অশ্বিন দেখে নিয়েছেন। গত কাল দু’টো তুলেছিলেন। শনিবার তুললেন আরও তিনটে। সব মিলিয়ে পাঁচটা এবং কেরিয়ারের বাইশ নম্বর পাঁচ উইকেট! শনিবারের পর এই কৃতিত্বের বিচারে কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলে অ্যামব্রোজ, ম্যালকম মার্শাল, ওয়াকার ইউনিসকে ধরে ফেললেন অশ্বিন। সামনে এখন অনিল কুম্বলে (৩৫), শেন ওয়ার্ন (৩৭), হরভজন সিংহ (২৫), কপিল দেব (২৩)। তার পর আরও বড় শৃঙ্গ। মুথাইয়া মুরলীধরন। টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট যাঁর আছে সাতষট্টি বার। এ দিন একটা সময় উইকেট থেকে সে ভাবে টার্ন পাচ্ছিলেন না অশ্বিন। কিন্তু তাতেও তাঁকে থামানো যায়নি। মাঝে-মাঝে ফ্লাইট করাচ্ছিলেন। রাজকোটের থেকে তাঁকে অনেক, অনেক বেশি সুসংহত লেগেছে।

আজ, রবিবার ভারত ছেড়ে দিলেন আবার নামবেন অশ্বিন। আবার ইংরেজ ব্যাটিংয়ের উপর আছড়ে পড়বে তাঁর বিষ, আবার ইংল্যান্ডের পরীক্ষা নেবে তাঁর স্পিনের ভাষা। অ্যালিস্টার কুক— দুঁদে ব্যাটসম্যান তিনি। বলাবলি চলে, সচিন তেন্ডুলকরের রানের রেকর্ড নাকি তিনি ভেঙে দেবেন। কুককে দেখাতে হবে, লোকে কেন সেটা বলে। জো রুট— বিরাট কোহালির সঙ্গে তাঁর তুলনা চলে। অশ্বিন সামলে রুটকে বোঝাতে হবে, কেন তুলনাটা চলে।

রাজকোট নয়, বিশাখাপত্তনম থেকে আসল টেস্ট সিরিজটা শুরু হল!

স্কোর:

ভারত প্রথম ইনিংস: ৪৫৫।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস (আগের দিন ১০৩-৫): স্টোকস এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৭০, বেয়ারস্টো বো উমেশ ৫৩, রশিদ ন.আ. ৩২, আনসারি এলবিডব্লিউ জাডেজা ৪, ব্রড এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১৩, অ্যান্ডারসন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ০, অতিরিক্ত ৯, মোট ২৫৫। পতন: ৪, ৫১, ৭২, ৭৯, ৮০, ১৯০, ২২৫, ২৩৪, ২৫৫। বোলিং: শামি ১৪-৫-২৮-১, উমেশ ১৮-২-৫৬-১, জাডেজা ২৯-১০-৫৭-১, অশ্বিন ২৯.৫-৬-৬৭-৫, জয়ন্ত ১২-৩-৩৮-১।

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: বিজয় ক রুট বো ব্রড ৩, লোকেশ ক বেয়ারস্টো বো ব্রড ১০, পূজারা বো অ্যান্ডারসন ১, কোহালি ন.আ. ৫৬, রাহানে ন.আ. ২২, অতিরিক্ত ৬, মোট ৯৮-৩। পতন: ১৬, ১৭, ৪০। বোলিং: অ্যান্ডারসন ৮-১-১৬-১, ব্রড ৬-৫-৬-২, রশিদ ১২-১-৩৭-০, স্টোকস ৫-০-২৫-০, মইন ৩-১-৯-০।

virat kohli ashwin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy