Advertisement
E-Paper

শেষ বেলায় বোলাররা ফেরালেন জয়ের আশা

অশ্বিনকে কভারের দিকে ফাঁকা জায়গায় ঠেলে দিয়েই রান নিতে দৌড়লেন দীনেশ চান্দিমাল। দৌড় শেষ করার সময় তাঁর ব্যাটটা যেন আপনিই আকাশের দিকে উঠে গেল।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
উৎসব: শ্রীলঙ্কার সাদিরা সমরবিক্রমকে আউট করার পরে উচ্ছ্বাসে মাতল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ছবি: পিটিআই

উৎসব: শ্রীলঙ্কার সাদিরা সমরবিক্রমকে আউট করার পরে উচ্ছ্বাসে মাতল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ছবি: পিটিআই

ইশান্ত শর্মার বল স্কোয়ার লেগের দিকে ফ্লিক করে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েই শূন্যে একটা লাফ মারলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ডান হাতের মুঠোটা আরও শক্ত করে উপর দিকে ছুড়ে দিলেন।

কিছুক্ষণ পরের ঘটনা। অশ্বিনকে কভারের দিকে ফাঁকা জায়গায় ঠেলে দিয়েই রান নিতে দৌড়লেন দীনেশ চান্দিমাল। দৌড় শেষ করার সময় তাঁর ব্যাটটা যেন আপনিই আকাশের দিকে উঠে গেল।

সেঞ্চুরি তো আগেও করেছেন ওঁরা। কিন্তু সেগুলোর চেয়ে এই সেঞ্চুরি দু’টোর তৃপ্তি বোধহয় অনেক বেশি। তার উপরে আবার সাত বছর পরে ভারতের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কোনও ব্যাটসম্যানের টেস্ট সেঞ্চুরি এটা। শেষেরটা ছিল কুমার সঙ্গকারার, ২০১০ সালে।

কিন্তু দিনের শেষ বেলায় ভারতীয় বোলাররা যে ভাবে পাল্টা আঘাত করেছেন শত্রু শিবিরে, শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ও বর্তমান অধিনায়কের জোড়া সেঞ্চুরি না যমুনার জলে ভেসে যায়।

চব্বিশ ঘণ্টা আগেই দিল্লির দূষণ নিয়ে প্রচুর নাটক হয়েছে যে মঞ্চে, সেই ফিরোজ শাহ কোটলাতেই শ্রীলঙ্কার জোড়া সেঞ্চুরি যে ভারতকে ধোঁয়াশায় রাখবে, এমনটা বোধহয় অনেকেই ভাবেনি। ফলো-অন বাঁচিয়ে নিয়ে শ্রীলঙ্কা দিনের শেষে ১৮০ রানে পিছিয়ে। কিন্তু জোড়া সেঞ্চুরি না হলে চাপটা আরও বাড়ত শ্রীলঙ্কার। দিনের শেষ সেশনে ৩১৭-৪ থেকে ৩৫৬-৯। শেষ বেলায় কোটলার নৈশালোকে শ্রীলঙ্কার পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মেজাজই বদলে দেন ভারতীয় বোলাররা।

আরও পড়ুন: ফের সুপারম্যান ঋদ্ধিমান, অ্যাশেজে বিস্ময় ক্যাচ লায়নের

প্রথম সেশনে ২৬.৩ ওভারে ৬১ রান তুললেন শ্রীলঙ্কার দুই অধিনায়ক। দ্বিতীয় সেশনে উঠল ৭৮ রান। ৩১ ওভারে ম্যাথিউজের উইকেট হারিয়ে। তার উপর আবার তিনটে ক্যাচ ফস্কানো। রোহিত শর্মা, বিজয় শঙ্কর ও ঋদ্ধিমান সাহারও। প্রেসবক্সের পিছনে কমেন্ট্রি বক্সের তারকাদের উশখুশ করা দেখেও বোঝা গেল, মাঠের খেলাটা কেমন চলছে। মাঠে ঘটনার ঘনঘটা থাকলে তাঁদের বক্স থেকে বেরিয়েও টিভির পর্দায় চোখ আটকে রাখতে দেখা যায়। এ দিন কিন্তু তাঁদের আড্ডা, গল্প, খুনশুটি, চা-পর্বে মেতে থাকতে দেখা গেল। কমেন্ট্রি বক্সে পরপর জোকস আওড়ে দর্শকের ঘুম কাটানোর চেষ্টা করছিলেন আকাশ চোপড়া, আশিস নেহরারা। বেরিয়ে এসে হাসতে হাসতে আকাশ বললেন, ‘‘জোকস আর কবে কাজে লাগবে?’’

আকাশ কথাগুলো বলতে বলতেই দিনের সেরা ঘটনাটা ঘটালেন ঋদ্ধিমান সাহা। ফের উড়ন্ত সুপারম্যান হয়ে উঠলেন তিনি। সারা দিনের ম্যাড়ম্যাড়ে ক্রিকেটের মাঝে যেন বাংলার রসগোল্লার মতোই মুগ্ধ করা ঋদ্ধির এই ক্যাচ।

হেলমেটের খাঁচায় বল লাগায় গোটা একটা দিন প্যাভিলিয়নে বসে কাটিয়ে দেওয়ার পর শ্রীলঙ্কার ওপেনার সাদিরা সমরবিক্রম এ দিন ব্যাট করতে নেমেছিলেন। কিন্তু তাঁর ব্যাটের কানায় লাগা বল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছোঁ মেরে এক হাতে তুলে নেন ঋদ্ধি। এর আগে সেঞ্চুরির মুখে থাকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের ক্যাচ প্রথমে ফস্কালেও পরে ঋদ্ধিই তাঁর অসাধারণ ক্যাচ নেন অশ্বিনের বলে। সব মিলিয়ে এ দিন চারটি ক্যাচ নেন বাংলার এই উইকেটকিপার।

গ্যালারি থেকে বিরাট কোহালিদের উদ্দেশ্যে বারবার ভেসে আসছিল, শ্রীলঙ্কা-বিরোধী উত্তেজক মন্তব্য। আগের দিন চান্দিমাল-রা যে ‘মাস্ক’ পরে নেমেছিলেন, তারই প্রতিক্রিয়ায় দর্শকদের এমন বিদ্রুপ। ঘটনা হল, দিল্লিতে দূষণের মাত্রা নিশ্চয়ই রাতারাতি কমে যায়নি। শ্রীলঙ্কানদের কিন্তু ব্যাট করার সময় খুব অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়নি। আবার ভারতীয় ক্রিকেটাররাও শ্রীলঙ্কানদের মতো ‘মাস্ক’ পরে ফিল্ডিং করেননি কেউ। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দিল্লির ভয়াবহ দূষণে ক্রিকেট ম্যাচ সত্যিই করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। তা সে যতই ভারতীয় বোর্ড বা ভারতীয় দল প্রকাশ্যে শ্রীলঙ্কানদের আচরণকে ‘নাটক’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করুক। কোটলার দর্শকদের মেজাজ দেখে অবশ্য মনে হচ্ছিল, তাঁদের মতে শ্রীলঙ্কানরা ‘নাটক’ই করেছিল। সেই কারণে গ্যালারিতে সকাল থেকে লঙ্কা-বিরোধী স্লোগান উঠতে থাকে।

সেগুলো শুনে বিরাট কোহালির দলের বোলাররা শুরুতে না চাঙ্গা হলেও তার জের দেখা গেল শেষ বেলায়। এখন যা পরিস্থিতি, ফলো-অন বাঁচিয়ে দিলেও টেস্টে ফয়সালা হওয়ার যথেষ্টই সম্ভাবনা রয়েছে এবং পাল্লা সেই ভারতের দিকেই ঝুঁকে। বলে না, ওস্তাদের মার শেষ রাতে! সোমবারেও তা-ই হল কোটলাতে!

Indian Bowlers India-Sri Lanka Test Delhi Test Firoz Shah Kotla Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy