অস্বস্তি: ঋষভের চাপ বাড়াচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী কার্তিক। ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপের রাস্তায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েও হঠাৎই মেঘলা আকাশের নীচে পড়েছেন ঋষভ পন্থ। তাঁর সাম্প্রতিক খারাপ ফর্ম বেশি চিন্তায় রেখেছে ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি এবং জাতীয় নির্বাচকদের। শেষ পর্যন্ত দিল্লির তরুণ প্রতিভাকে ছাড়াই বিশ্বকাপের ভারতীয় দল ইংল্যান্ডের উড়ানে উঠে পড়তে পারে কি? এমন আশঙ্কা কেউ উড়িয়ে দিতে পারছেন না।
ঋষভের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যিনি উঠে এসেছেন, তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক— দীনেশ কার্তিক। আশ্চর্যজনক ভাবে, চলতি ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজে নেই কার্তিক। তিনি যখন দলে সুযোগ পেলেন না, তখন সকলের মনে হয়েছিল বাদ পড়ে গেলেন এবং একই সঙ্গে বিশ্বকাপের দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়লেন। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, ঋষভের খারাপ ফর্ম কেকেআর অধিনায়ককে দারুণ ভাবেই প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনতে পারে। ভারতের হয়ে সম্প্রতি পাঁচটি সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলেছেন ঋষভ। পাঁচটিই কুড়ি ওভারের ম্যাচ। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমান সিরিজে রয়েছে দু’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই দুই ম্যাচে তাঁর রান ১ এবং ৩। তার আগে নিউজিল্যান্ডে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান ২৮, ৪০ অপরাজিত এবং ৪। টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে যে রকম ঝলসে উঠতে দেখা গিয়েছে তাঁকে, তার ছিঁটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না সীমিত ওভারের ম্যাচে।
চলতি সিরিজে ওয়ান ডে দলেও আছেন ঋষভ। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে খেলেননি। ধোনির ঘরের মাঠেও সুযোগ পাবেন কি না, অনিশ্চিত। দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছেড়ে আগে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চাইবে। আবার এটাই বিশ্বকাপের আগে বিরাট কোহালিদের শেষ পঞ্চাশ ওভারের সিরিজ। এর পর থাকছে শুধু আইপিএলে দেখার সুযোগ। যা নিয়ে অধিনায়ক কোহালি বলে রেখেছেন যে, আইপিএলের খেলা দেখে বিশ্বকাপের দল নির্বাচন করা হবে না। তা হলে ঋষভ তাঁর মার্কশিট ঠিক করার সুযোগ পাবেন কোথায়? সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। বরং শোনা যাচ্ছে, কার্তিক এই সিরিজে না থাকলেও তাঁকে নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট। তা সে যতই তিনি নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সিঙ্গলস নিতে না চেয়ে বিতর্কে জড়ান। দ্বিতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ভাল মতোই দৌড়ে রয়েছেন। আবার কারও কারও মনে হচ্ছে, আইপিএলে যদি ঋষভ ধুন্ধুমার কিছু বাধিয়ে দেন, তার ঘ্রাণ বেশ টাটকা থাকবে বিশ্বকাপের দল নির্বাচনী সভায়। তখন কোহালি তাঁর পুরনো মত থেকে সরেও আসতে পারেন এবং ঋষভের জন্য দরজা খুললেও খুলতে পারে। কিন্তু সেটা অনেক ‘যদি-কিন্তু’র উপরে নির্ভরশীল। আপাতত যা পরিস্থিতি, বিশ্বকাপের উইকেট বাঁচানোর জন্য লড়ছেন ঋষভ এবং আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ আর তিনি পাবেন কি না। সেক্ষেত্রে চলতি সিরিজের দু’টি টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থতা তাঁর ঘাতক হয়ে থাকতে পারে।
বরং বিশ্বকাপের দল নির্বাচনী ভাবনায় যে তরুণ সকলকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন, তাঁর নাম বিজয় শঙ্কর। ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর শৃঙ্খলা এবং আত্মবিশ্বাস দেখে মুগ্ধ অনেকে। হেড কোচ রবি শাস্ত্রী তাঁকে তৈরি করেছেন বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে। যে-হেতু ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ, হার্দিক পাণ্ড্যর সতীর্থ হিসেবে দ্বিতীয় অলরাউন্ডার তৈরি রাখার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন শাস্ত্রী। এখন দেখা যাচ্ছে, বিজয় শঙ্কর যোগ্য দাবিদার হিসেবে অনেককে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়েছেন। একেবারেই অবাক হওয়ার থাকবে না যদি তিনি ইংল্যান্ডের উড়ানের টিকিট পেয়ে যান। শঙ্কর সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি কঠিন সময়ের ত্রাতা হিসেবে উদয় হয়েছেন। নাগপুরে প্রবল চাপের মুখে ব্যাট করতে এসে কোহালির সঙ্গে দারুণ পার্টনারশিপ গড়েছেন। বল হাতে শেষ ওভারে বাজিমাত করেছেন।
অথচ, শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে এই বিজয় শঙ্করই সমালোচনায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন মন্থর ব্যাটিং করার জন্য। প্রায় বাতিল হওয়ার মুখ থেকে ফিরে এসে বিশ্বকাপের জোরাল দাবিদার হয়ে ওঠাটা চমকপ্রদ কাহিনি। তাঁর উত্থানের মধ্যে কোথাও যেন হার্দিক পাণ্ড্যর জন্যও একটা সতর্কবার্তা থাকছে যে, গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে উড়তে যেয়ো না। সাবধান হও, না হলে দুর্ঘটনা ঘটবে এবং জেনে রাখো, তোমার বিকল্পও তৈরি আছে।
কখনও সখনও অনুচ্চারিত শব্দগুলো এত জোরে শোনায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy