Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sumit Nagal

মাঝে ১১৮ দিন, পকেট ফাঁকা হয়ে যাওয়া সুমিতেই নাগাল পেল ভারতীয় টেনিস

সুমিত নাগাল জানিয়েছিলেন যে, তাঁর ব্যাঙ্কে মাত্র ৮০ হাজার টাকা রয়েছে। এই টাকায় দেশের মাঠে কোনও ঘরোয়া টেনিস প্রতিযোগিতা খেলাও সম্ভব হয় না। ১১৮ দিন পর সেই নাগালই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেন অ্যালেক্সান্ডার বুবলিককে হারিয়ে।

Sumit Nagal

সুমিত নাগাল। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৩১
Share: Save:

গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর এক সাক্ষাৎকারে সুমিত নাগাল জানিয়েছিলেন যে, তাঁর ব্যাঙ্কে মাত্র ৮০ হাজার টাকা রয়েছে। এই টাকায় দেশের মাঠে কোনও ঘরোয়া টেনিস প্রতিযোগিতা খেলাও সম্ভব হয় না। ১১৮ দিন পর সেই নাগালই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেন অ্যালেক্সান্ডার বুবলিককে হারিয়ে।

গ্র্যান্ড স্ল্যামের মূল পর্বে সিঙ্গলসে কবে এক জন ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড় বাছাই তারকাকে হারিয়ে দিয়েছেন, তা মনে করতে গেলে সময় লাগবেই। মঙ্গলবার নাগাল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার প্রথম রাউন্ডে সেই কাজটাই করলেন। ক্রমতালিকায় ২৭ নম্বরে থাকা বুবলিককে হারিয়ে দিলেন ১৩৭ নম্বরে থাকা নাগাল। ভারতীয় টেনিসে আরও এক বার সাফল্য এনে দিলেন তিনি। প্রতিযোগিতার বিচারে যদিও এই জয় শুধুই তাঁকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় টেনিস অন্তত আলোচনা করার মতো কিছু পেল।

৮ বছর বয়সে টেনিস খেলা শুরু করেছিলেন নাগাল। আগে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। কিন্তু তাঁর বাবা সুরেশ নাগাল চাইতেন ছেলে টেনিস খেলুক। বাবার ইচ্ছেতেই টেনিস খেলা শুরু। ছোটবেলায় এক সময় ৮-১০ ঘণ্টা ক্রিকেট খেলা ছেলেটাই মনোযোগ দেন টেনিস। এক সাক্ষাৎকারে নাগাল বলেন, “আমি ভাল টেনিস খেলতে চাই। এতটাই ভাল খেলতে চাই যে, লোকে বলবে না, ভারত শুধু ক্রিকেট ভাল খেলে। আমি ভারতীয় টেনিসকে এগিয়ে নিতে যেতে চাই।”

কথা রাখছেন নাগাল। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে যাওয়া ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড় মঙ্গলবার কাজাখস্তানের বুবলিককে ৬-৪, ৬-২, ৭-৬ গেমে হারিয়ে দেন। শেষ সেট গড়ায় টাইব্রেকারে, সেখানে নাগাল জেতেন ৭-৫ ব্যবধানে। ২০২০ সালে ইউএস ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিলেন নাগাল। সে বার ডমিনিচ থিয়েমের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন। টোকিয়ো অলিম্পিক্সেও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিলেন নাগাল। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবেন নাগাল।

হরিয়ানার ঝাঁঝরে জন্ম নাগালের। বাবা সুরেশ ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মহেশ ভূপতির টেনিস অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন নাগাল। জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যামে সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। জিতেছিলেন জুনিয়র উইম্বলডন। কিন্তু গত বছর আর্থিক ভাবে খুব ভাল জায়গায় ছিলেন না নাগাল। সেই সময় তিনিই জানিয়েছিলেন ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়দের আর্থিক অবস্থার কথা।

ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়দের কাছে অর্থ সমস্যা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বার বার। কিন্তু দেশের এক নম্বর সিঙ্গলস খেলোয়াড়ের কাছে টাকা নেই এবং তাঁর পরিবার অর্থকষ্টে ভুগছে এমন পরিস্থিতি বিরল। সেই সঙ্গে এই পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয় যে, দেশের টেনিস খেলোয়াড়দের কী অবস্থা। এটিপি ট্যুরে গিয়ে খেলা এবং থাকার জন্য খরচ করতে গিয়ে নাগাল তাঁর পুরস্কারের সব অর্থ খরচ করে ফেলেছেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাগাল বলেছিলেন, “এই বছরের শুরুতে যে টাকা আমার ব্যাঙ্কে ছিল, এখন সেটাই পড়ে আছে। সেটা ওই ৮০ হাজার টাকা মতো। মহা টেনিস ফাউন্ডেশন আমাকে সাহায্য করে। চাকরি করি যে সংস্থায়, সেখান থেকে প্রতি মাসে আয় করি। কিন্তু কোনও স্পনসর নেই আমার।” তবে নাগালের টেনিস র‍্যাকেট, জুতো এবং আরও সরঞ্জামের দায়িত্ব নিয়েছিল ইয়োনেক্স।

sumit nagal

সুমিত নাগাল। —ফাইল চিত্র।

জার্মানির নানসেল টেনিস অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতেন নাগাল। কিছু বছর ধরেই সেখানে অনুশীলন করেন তিনি। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানে শেষ তিন মাস ধরে অনুশীলন করতে পারছেন না নাগাল। ২০২৩ সালের শুরুতে সোমদেব দেববর্মণ এবং ক্রিস্টোফার মারকুইস তাঁকে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। গত বছর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে তাই জার্মানিতে অনুশীলন করতে পেরেছিলেন নাগাল।

২০২৩ সালে ২৪টি প্রতিযোগিতায় খেলেছেন নাগাল। সেখান থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি। ইউএস ওপেনের যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রথম রাউন্ডে হেরেও ১৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। সেটাই এই বছরে তাঁর সব থেকে বেশি আয়। নাগাল বলেছিলেন, “যা আয় করি, তার পুরোটাই খরচ হয়ে যায়। এক জন কোচ নিয়ে গোটা বছর এটিপি ট্যুর করতে আমার ৮০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা খরচ হয়। ফিজিয়ো নিলে সেটার খরচ আলদা। দেশের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় হয়েও খুব বেশি সাহায্য পাই না। আমিই দেশের এক মাত্র সিঙ্গলস খেলোয়াড় যে গ্র্যান্ড স্ল্যামে সুযোগ পাই। কিন্তু কেন্দ্রের থেকে কোনও সাহায্য পাই না আমি।” দেশের মাটিতে ঘরোয়া কোনও প্রতিযোগিতা খেলতে গেলেও ৮০ হাজার টাকা যথেষ্ট নয়। সেই টাকা নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন নাগাল।

চোট পেয়ে এক সময় টেনিস খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নাগালের। সেই সময় থেকেই সাহায্য পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন তিনি। নাগাল বলেছিলেন, “কেউ বোধ হয় ভাবতেই পারেনি যে, আমি ফিরে আসতে পারব। সত্যি বলতে আমি জানি না, এই ভাবে কত দিন চালাতে পারব। সব আশা ছেড়ে দিয়েছি।”

শেষ পর্যন্ত নাগাল ফিরে এসেছেন। তিনিই একমাত্র ভারতীয় টেনিস তারকা, যিনি এই মুহূর্তে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলসে খেলছেন। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে নাগাল খেলবেন ওয়াইল্ড কার্ডে সুযোগ পাওয়া চিনের শাং জুনচেংয়ের বিরুদ্ধে। যিনি নাগালার থেকে ক্রমতালিকায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে। জুনচেং ক্রমতালিকায় ১৪২ নম্বর। তিনি প্রথম রাউন্ডে হারিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের ৪২ নম্বর মিচেল ম্যাকডোনাল্ডকে। ফলে তুলনায় সহজ প্রতিপেক্ষ পেলেন নাগাল। তাঁর কাছে সুযোগ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যাওয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE