Advertisement
E-Paper

বল চেয়ে রাসেলকে ফেরান দুরন্ত পরাশক্তি

রবিবারের বিকেলে তাহির মোট চার বার দৌড়েছেন ইডেনের চার প্রান্তে। সেরা দৌড় কোনটা, তা নিয়ে বাজি ধরে লাভ নেই।

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৯
ইডেনে তাহিরের গর্জন। ছবি: পিটিআই।

ইডেনে তাহিরের গর্জন। ছবি: পিটিআই।

শিবাজি গণেশন বেঁচে থাকলে দৌড়টা দেখে কী বলতেন?

এমনিতে ইমরান তাহিরকে নিয়ে একটা চালু রসিকতা আছে। উইকেট নেওয়ার পরে তিনি যে দৌড়টা দেন, তা যদি কোনও দিন লাহৌরে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাহিরের দৌড়টা দেখে চেন্নাই সুপার কিংসে এই লেগস্পিনারের নাম হয়েছে ‘পরাশক্তি এক্সপ্রেস’। কিন্তু ‘পরাশক্তি’ কেন?

চেন্নাইয়ে দু’একটা ফোন করে নামকরণের পিছনের আসল কাহিনিটা জানা গেল।

আরও পড়ুন: একের পর এক জয়ের পর টানা তিন ম্যাচে হার, কোথায় ভুল হচ্ছে নাইটদের?​

শিবাজি গণেশনের প্রথম ছবি ‘পরাশক্তি’-তে দক্ষিণী এই মহানায়কের একটা ডায়লগ ছিল— ‘ওদিনেন, ওদিনেন!’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘আমি দৌড়ই আর দৌড়ই!’ তা, গণেশন বেঁচে থাকলে নির্ঘাৎ ভাবতেন, আমি আর কী দৌড়েছি। এ যা দৌড়চ্ছে...! সেখান থেকেই তাহিরের এই আদরের ডাকনাম!

রবিবারের বিকেলে তাহির মোট চার বার দৌড়েছেন ইডেনের চার প্রান্তে। সেরা দৌড় কোনটা, তা নিয়ে বাজি ধরে লাভ নেই। ওভার নম্বর ১৪.৫। আন্দ্রে রাসেল আগের বলেই ছয় মেরেছেন। কিন্তু আবার তাহিরকে তুলে মারতে গেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এই লেগস্পিনার গতি কমিয়ে বলটা সামান্য টেনে দিয়েছিলেন। রাসেল পুরো শক্তিটা পেলেন না। বলটা যখন লং অনের কাছাকাছি মাটি ছুঁতে যাচ্ছে, শরীরটা ছুড়ে ক্যাচটা তুলে নিলেন ধ্রুব শোরে। রবীন্দ্র জাডেজার পরিবর্ত হিসেবে ফিল্ডিংয়ে নেমেছিলেন তিনি। রাসেলের উইকেটের পিছনে শোরেরও সমান অবদান। এ সব ক্ষেত্রে দেখা যায়, বোলার দৌড়ে এসে ফিল্ডারকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। কিন্তু তাহির তা হলে আলাদা হবেন কেন! শোরে ধর্মতলায় পড়ে থাকলে তাহির ছুটলেন হাওড়া ব্রিজের দিকে!

ইডেনে ম্যাচ শুরুর সরকারি সময় ছিল বিকেল চারটে। কিন্তু লোকাল ট্রেন, মেট্রো এবং ধর্মতলা চত্বরে ম্যাচটা শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। এই পাঁচটা কেকেআরের বেগুনি জার্সির শরীর দেখা যাচ্ছে তো পাল্টা উদয় হচ্ছে চারটে হলুদ জার্সি। এই স্লোগান শুনলাম— ‘কেকেআর জিতেগা। জিতেগা ভাই জিতেগা,’ তো রাস্তার অন্য দিক থেকে পাল্টা আওয়াজ উঠল— ‘ধোনি, ধোনি’!

ইডেনের গ্যালারির অনেকটা অংশ যে হলুদ জার্সি আর পতাকায় ভরা ছিল এ দিন, তার এক এবং একমাত্র কারণ অবশ্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এমএসডি-র ব্যাট থেকে একটার বেশি ছয় দেখতে পায়নি ইডেন, কিন্তু ধুরন্ধর ক্রিকেট মস্তিষ্কের প্রভাবটা টের পেল। ঠিক সময় ঠিক বোলারকে আক্রমণে আনা, প্রয়োজনে স্লিপ এনে ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলা এবং দলের সেরা অস্ত্র তাহিরকে পরামর্শ দেওয়া কী ভাবে রাসেলকে বল করতে হবে। আগের ম্যাচের আম্পায়ারিং বিতর্কের কোনও ছাপ পড়েনি ধোনির মধ্যে।

রবীন্দ্র জাডেজার করা ১৪ নম্বর ওভারে ছয় মারার হ্যাটট্রিক হয়ে গিয়েছে ক্রিস লিনের। কেকেআর নিশ্চিত ভাবে দু’শো রানের দিকে এগোচ্ছে। ওই সময় দেখা গেল বোলিং মার্কের দিকে এগোচ্ছেন তাহির। একটু আগে শেষ হওয়া তাহিরের প্রথম স্পেলে হিসেবটা দেখাচ্ছে ২-০-৮-২।

তবে জানা যাচ্ছে, ধোনি বল তুলে দিতে যাচ্ছিলেন সিএসকে-র ‘সান্তা ক্লজ’, মানে বাঁ-হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের হাতে। তাহির ছুটে এসে প্রায় বলটা নিয়ে নিলেন। ওই একটা ওভারই ম্যাচ পুরো বদলে দিয়ে গেল। ১৪.১ ওভারে লিন (৫১ বলে ৮২) পুল মারতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে আউট। ১৪.৫ ওভারে শেষ রাসেল-ধামাকা। সঙ্গে সঙ্গে নাইটদের লড়াইও। পরের ৩১ বলে তিন উইকেট হারিয়ে কেকেআর তুলল ২৯ রান। যেখানে মনে হচ্ছিল, দুশো হবে, কেকেআর থামল ১৬১-৮ স্কোরে।

ইডেনের বাইশ গজ স্পিনারদের সাহায্য করছে না বলে কথা উঠছে। কিন্তু দেখা গেল, যাঁরা বল ঘোরানোর তাঁরা ঠিকই ঘোরাচ্ছেন। যেমন তাহির। যেমন সুনীল নারাইন। তাহিরের ‘গেমচেঞ্জিং’ ওভারের মতোই একটা ওভার করেছিলেন নারাইন। চেন্নাই ইনিংসের ১৬ নম্বর ওভার। যে ওভারে ধোনিকে এলবিডব্লিউ করেন তিনি। ওই ওভারে উঠল এক রান। চার ওভারে তখন বাকি ৪১। মনে হচ্ছিল, পুরনো নারাইন যদি একটা অঘটন ঘটাতে পারেন। কিন্তু নারাইন আর কোনও বোলারকে পাশে পাননি। না কুলদীপ যাদব, না কোনও পেসার। সুরেশ রায়না আর জাডেজা মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচটা বার করে নিলেন।

কেকেআরের হারের হ্যাটট্রিকের পিছনে কয়েকটা কারণ উঠে আসছে। যেমন এক, উইকেট তোলায় বোলারদের ব্যর্থতা। কুলদীপের উইকেট পাওয়ার ক্ষমতায় কেমন যেন ধাক্কা লেগেছে। যা শুধু কেকেআরকে নয়, বিশ্বকাপের আগে ভারতকেও চিন্তায় রাখবে। দুই, দলে ভাল কোনও পেসার না থাকা। যিনি শুরুতে নতুন বলে গোটা কয়েক উইকেট তুলে নিতে পারবেন। তিন, অতিরিক্ত রাসেল নির্ভরতা। চেন্নাই ম্যাচে একটা ওভার বল করে রাসেল যেমন খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেলেন, তাতে দীনেশ কার্তিকের রাতে ঘুম হলে হয়। চার, ব্যাটিং অর্ডার সাজানো। উথাপ্পা (৮ ইনিংসে ২১১, গড় ৩৫.১৬), কার্তিক (৮ ইনিংসে ১১১, গড় ১৮.৫০), রানা (৭ ইনিংসে ২০১, গড় ২৮.৭১) বড় রান পাচ্ছেন না। উথাপ্পার শেষ পাঁচ ইনিংসের রান ৩৩, ২৬ ন.আ., ১১, ২৮, ০। কিন্তু তাঁরা তিন-চার-পাঁচ নম্বর জায়গা ধরে রাখায় ফর্মে থাকা শুভমন গিলকে সাতে নামতে হচ্ছে। যা ছন্দহীন মিডল অর্ডারকে আরও সমস্যায় ফেলছে। এই সব সমস্যার সমাধান জলদি না পেলে প্লে-অফের দৌড় থেকে ক্রমে পিছিয়ে যাবে শাহরুখ খানের দল।

কিং খানকে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে দেখতে হল, তাঁরই ইডেনেই ছুটল চেন্নাই এক্সপ্রেস। বাজিমাত করে দিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন কুল। আর এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক।

ওহ, তাহিরের বয়সটা বলা হয়নি। ওই চল্লিশ পেরোলেন সবে!

স্কোরকার্ড
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৬১-৮ (২০)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৬২-৫ (১৯.৪)

কলকাতা নাইট রাইডার্স

লিন ক শার্দূল বো তাহির ৮২•৫১
নারাইন ক ডুপ্লেসি বো স্যান্টনার ২•৭
রানা ক ডুপ্লেসি বো তাহির ২১•১৮
উথাপ্পা ক ডুপ্লেসি বো তাহির ০•১
কার্তিক ক ডুপ্লেসি বো শার্দূল ১৮•১৪
রাসেল ক পরিবর্ত শোরে বো তাহির ১০•৪
শুভমন ক জাডেজা বো শার্দূল ১৫•২০
চাওলা ন. আ. ৪•৫
কুলদীপ রান আউট ০•০
অতিরিক্ত ৯
মোট ১৬১-৮ (২০)
পতন: ১-৩৮ (নারাইন, ৪.৫), ২-৭৯ (রানা, ১০.২), ৩-৮০ (উথাপ্পা, ১০.৪), ৪-১২২ (লিন, ১৪.১), ৫-১৩২ (রাসেল, ১৪.৫), ৬-১৫০ (কার্তিক, ১৭.২), ৭-১৬১ (শুভমন, ১৯.৫), ৮-১৬১ (কুলদীপ, ১৯.৬)।
বোলিং: দীপক চাহার ৪-০-৩৬-০, শার্দূল ঠাকুর ৪-০-১৮-২, মিচেল স্যান্টনার ৪-০-৩০-১, রবীন্দ্র জাডেজা ৪-০-৪৯-০, ইমরান তাহির ৪-০-২৭-৪।

চেন্নাই সুপার কিংস

ওয়াটসন এলবিডব্লিউ বো গার্নি ৬•৭
ডুপ্লেসি বো নারাইন ২৪•১৬
রায়না ন. আ. ৫৮•৪২
রায়ডু ক উথাপ্পা বো চাওলা ৫•১১
কেদার এলবিডব্লিউ বো চাওলা ২০•১২
ধোনি এলবিডব্লিউ বো নারাইন ১৬•১৩
জাডেজা ন. আ. ৩১•১৭
অতিরিক্ত ২
মোট ১৬২-৫ (১৯.৪)
পতন: ১-২৯ (ওয়াটসন, ৩.১), ২-৪৪ (ডুপ্লেসি, ৫.৩), ৩-৬১ (রায়ডু, ৯.১), ৪-৮১ (কেদার, ১১.১), ৫-১২১ (ধোনি, ১৫.৪)।
বোলিং: প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ৪-০-৩০-০, হ্যারি গার্নি ৪-০-৩৭-১, আন্দ্রে রাসেল ১-০-১৬-০, সুনীল নারাইন ৪-১-১৯-২, কুলদীপ যাদব ৩-০-২৮-০, পীযূষ চাওলা ৩.৪-০-৩২-২।

Cricket IPL 2019 KKR CSK Imran Tahir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy