দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন আলোচনার কেন্দ্রে ইডেনের বাইশ গজ। যা দেখে কারও কারও বিভ্রম হচ্ছে, পিচ নাকি সবুজ গালিচা? এতটাই ঘাস ছাড়া হয়েছে তাতে।
পিচের এই ছবি দেখে হয়তো মনে মনে খুশি হবেন বিপক্ষ শিবিরের কাগিসো রাবাডা, ট্রেন্ট বোল্টরা। এ দিকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেস ত্রয়ীর মুখেও মৃদু হাসি। তবে তুল্যমূল্য বিচারে পেস বিভাগে যে দিল্লি কাগজেকলমে এগিয়ে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
লকি ফার্গুসন, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং হ্যারি গার্নি— এই তিন পেসারের দিকেই মূলত তাকিয়ে থাকতে হবে নাইটদের। তাঁরাও জানেন, দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইডেনে আজ সবুজ পিচ? দলে দুটি পরিবর্তন? দেখে নিন নাইটদের সম্ভাব্য একাদশ
দিল্লির বিরুদ্ধে যে পিচ দেওয়া হচ্ছে নাইটদের, তাতে গতির সঙ্গে থাকবে বাউন্সও। গত বছর নভেম্বরে এই পিচেই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ হয়েছিল। যেখানে ২১ রানে দুই উইকেট পেয়েছিলেন ওশেন থমাস। টিভিতে সেই ম্যাচটি দেখেছিলেন লকি ফার্গুসন। তাই হয়তো অনুমান করছেন, তাঁর হাত থেকেও ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় যে বলটি বেরিয়ে আসবে তা বিপক্ষের পক্ষে সামলানো বেশ কঠিন হবে। বুধবার কেকেআর টিম হোটেলে বসে লকি বলছিলেন, ‘‘ইডেনে পেসাররা এমনিতেই সুবিধা পায়। দিল্লির বিরুদ্ধে যে উইকেটে খেলা হবে, তাতে পেসাররা আরও সুবিধা পাবে। পিচে ঘাস থাকলে তো আমাদের ভালই লাগবে। ন্যূনতম চেষ্টায় সর্বোচ্চ ফল পাওয়ার মতো ব্যাপার। চেন্নাইয়ের পিচে যে বল করতে অনেক বেশি খাটতে হবে, ইডেনে তা অনায়াসেই করা যাবে।’’
দিল্লি ক্যাপিটালসের ব্যাটিং বেশিটাই নির্ভর করে তাদের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের উপর। শিখর ধওয়ন, পৃথ্বী শ, শ্রেয়স আইয়ার এবং ঋষভ পন্থ। কলকাতার পেস ত্রয়ীর লক্ষ্য থাকবে, দিল্লির সেই প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেওয়া। লকি যদিও তাক করছেন শিখরের উইকেট। নিউজ়িল্যান্ডে ভারতের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দু’বারই লকির শিকার হন শিখর। তাই ইডেনে তাঁকে নিয়ে বাড়তি উদ্বেগ নেই নিউজ়িল্যান্ড পেসারের। লকি বলছিলেন, ‘‘ওর বিরুদ্ধে আগেও সফল হয়েছি। সেটা মাথায় রেখেই ইডেনে নামব। আমার লক্ষ্য থাকবে শিখরের ব্লাইন্ড স্পটে বল করা।’’
শিখরের ‘ব্লাইন্ড স্পট’ বার করা খুব একটা কঠিন নয়। শরীরের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলকে আক্রমণ করতে তিনি পছন্দ করেন। শরীরের ভিতরে আসা বলের বিরুদ্ধে বরাবরই অস্বস্তিতে থাকেন তিনি। যা খুব কাছ থেকে দেখেছেন কেকেআরের ভারতীয় পেসার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। পাওয়ার-প্লেতে কর্নাটক পেসারের হাতেই হয়তো নতুন বল তুলে দেবেন দীনেশ কার্তিক। এখনও পর্যন্ত ছয় ম্যাচে এক উইকেট পেয়েছেন প্রসিদ্ধ। তা হলে দিল্লির শিখর, পন্থদের কী ভাবে সামলাবেন তরুণ পেসার? প্রসিদ্ধের জবাব, ‘‘নতুন বলে স্বাভাবিক ভাবেই আউটসুইং (বাঁ হাতির ক্ষেত্রে ভিতরে আসে) করাতে পারি। শিখরের বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি সুইং না-ও করে, তা হলে চেষ্টা করব শরীর লক্ষ্য করে বল করার।’’ যোগ করছেন, ‘‘শিখর আর ঋষভ, দু’জনেই উইকেটের আড়াআড়ি শট নিতে পছন্দ করে। সেই জায়গাটা ওদের দেওয়া যাবে না। বাকি পরিকল্পনা ম্যাচ চলাকালীন করতে হবে। সব কিছু তো আর আগাম ভেবে রাখা যায় না।’’
ফিরোজ শাহ কোটলায় দিল্লির বিরুদ্ধে সুপার ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ। ফিরতি ম্যাচে সেটাই তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। প্রসিদ্ধ বলছিলেন, ‘‘আইপিএলের আগেই ডেথ ওভারে বল করার কৌশল রপ্ত করেছি। স্লোয়ার, ইয়র্কার, বাউন্সার একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারছি। ওই ম্যাচের পরে আমার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ইডেনে যখন নামব, আগের ম্যাচের কথা মাথায় থাকবে।’’
ফার্গুসন ও প্রসিদ্ধের ইডেনে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু হ্যারি গার্নি পরিচিতি পেয়েছেন মন্থর উইকেটের বোলার হিসেবে। তাঁর কাটার সামলাতে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস শিবিরে। জয়পুরে সফল হলেও চেন্নাইয়ে লড়াই করার মতো রান ছিল না গার্নিদের হাতে। ইংল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার ইডেনে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে বলছেন, ‘‘আমি যে রকম কাটার দিতে পারি, তেমনই সিম সোজা রেখেও বল করতে পারি। দীর্ঘদিন ট্রেন্ট ব্রিজের পরিবেশে খেলেছি। উইকেটে ঘাস থাকলে আমার কোনও অসুবিধা হবে না। তখন কাটারের পরিবর্তে হাত থেকে বেরোবে একের পর এক ইয়র্কার।’’ রাবাডাদের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি
কেকেআরের পেস-ত্রয়ী।