Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নাবালকের নাইট শাসন, হারের ডাবল হ্যাটট্রিকে প্লে-অফের রাস্তা কঠিন

অসমের এই ছেলেটা এ বার ভোট দিতে পারবে না। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই ছেলেটা এখনও ড্রাইভিং লাইসেন্স পায়নি। এই ছেলেটার বাবা কিছু বছর আগেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন।

উল্লাস: ইডেনে ব্যাটের শাসনে কেকেআর বোলারদের হার মানিয়ে সতীর্থের সঙ্গে ম্যাচ জয়ের উৎসব রিয়ানের।  ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

উল্লাস: ইডেনে ব্যাটের শাসনে কেকেআর বোলারদের হার মানিয়ে সতীর্থের সঙ্গে ম্যাচ জয়ের উৎসব রিয়ানের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৩৫
Share: Save:

রিয়ান পরাগকে বড়দের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার অনুমতিটা কে দিল?

অসমের এই ছেলেটা এ বার ভোট দিতে পারবে না। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই ছেলেটা এখনও ড্রাইভিং লাইসেন্স পায়নি। এই ছেলেটার বাবা কিছু বছর আগেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন। আর সেই ছেলেটা কি না রাজস্থান রয়্যালসকে প্রায় হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়ে গেল! সেই ছেলেটা কি না এ বারের আইপিএল থেকে মোটামুটি ছুটি করে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে! ছেলেটার স্পর্ধা দেখে ইডেন স্তম্ভিত, বিস্মিত, আবার মুগ্ধও।

রিয়ান যখন ব্যাট করতে নামে, রাজস্থানের স্কোর তিন উইকেটে ৬৩। একটু পরে চার উইকেটে ৭৮। নাইটদের জয় মোটামুটি নিশ্চিত, ধরেই নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় নিজের বলে সুনীল নারাইন একটা ক্যাচ ফেললেন। একটু আধটু হা-হুতাশ উঠল ইডেন জুড়ে। কিন্তু ব্যাটসম্যানের নামটা দেখে কেউ সে রকম মাথা ঘামায়নি। রিয়ান পরাগের ক্যাচ পড়েছে তো কী হয়েছে, রাহানে-স্মিথ-স্টোকস তো প্যাভিলিয়নে।

দু’ম্যাচ আগে আইপিএল অভিষেক হওয়া রিয়ানের এতদিন কাজ ছিল স্মিথ, স্টোকসকে হিন্দি শেখানো। এ বার ১৭ বছরের ছেলেটা দেখাল, সে ম্যাচও জেতাতে পারে। ক্রিকেটটা অবশ্য রিয়ানের রক্তেই। তার বাবা পরাগ দাস অসমের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। এক সময় ধোনির সঙ্গেও। ফলে ক্রিকেটকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠেছে ছেলেটা।

আর তাই হয়তো আস্কিং রেট দেখে ঘাবড়ায় না। তাই হয়তো আন্দ্রে রাসেলের বল হেলমেটে খেলে ভয় পায় না। হেলমেটটা খুলে এক বার দেখে নিয়ে আবার গার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই ছেলের ব্যাটে ৩১ বলে ৪৭ আসবে না? মহাগুরুত্বপূর্ণ সময় প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে মিডউইকেটের গ্যালারিতে ফেলতে পারবে না?

পরাগের নাটকীয় ইনিংসের ইতি পড়ল আরও নাটকীয় ভাবে। রাসেলকে মারা তার আধা পুল শটটা বাউন্ডারিতে গিয়ে পড়েছে। আম্পায়ার বাউন্ডারির সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছেন। ওই সময় দেখা গেল, বেল পড়ে গিয়েছে! কী ব্যাপার? না, রিয়ান আউট, হিট উইকেট। সে অবস্থায় ম্যাচটা বেরিয়ে যেতে পারত, কিন্তু যায়নি জোফ্রা আর্চারের জন্য। তিনি যে ব্যাটটাও করতে পারেন, বুঝিয়ে দিলেন ১২ বলে অপরাজিত ২৭ করে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল নয় রানের। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের প্রথম বলটা থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে আর দ্বিতীয় বলটা লং অফের গ্যালারিতে ফেলে কেকেআরকে টানা ছ’নম্বর হারটা উপহার দিয়ে গেলেন আর্চার। একই সঙ্গে প্লে-অফ থেকে দূরে, আরও দূরে ঠেলে দিলেন শাহরুখ খানের দলকে।

এই ম্যাচটা হতে পারত দীনেশ কার্তিকের শাপমুক্তির ম্যাচ। ইডেনে এ দিন ‘রাসেল, রাসেল’ ধ্বনি বদলে গিয়েছিল ‘ডিকে, ডিকে’ গর্জনে। প্রথম ১০ বলে তিন থেকে কার্তিক করে গেলেন ৫০ বলে ৯৭। যে কার্তিককে গত কয়েক দিনে ছিঁড়ে খেয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে সমালোচকরা। যে কার্তিক হায়দরাবাদ ম্যাচের পরে প্রায় বনবাসে চলে গিয়েছিলেন। দল প্রস্তুতি নিয়েছিল ইডেনে, তিনি ছিলেন মুম্বই না কোথায়। বুধবার সন্ধ্যায় প্রায় সবার অলক্ষ্যে ঢুকেছেন হোটেলে।

কার্তিক এ দিন শুধু রাজস্থান বোলারদের বিরুদ্ধেই ব্যাট করেননি। তাঁর অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ছিল হাজারো সমালোচক, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং ইডেনের উইকেটও।

বৃহস্পতিবার ইডেনে টস হওয়ার আগেই টুইটটা করেছিলেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর। লিখেছিলেন, ‘‘ইডেনের পিচটা দেখে এলাম। কেকেআরের জন্য খারাপই লাগছে। এই পিচটা একেবারেই ওদের জন্য মানানসই নয়। ঘরের মাঠে সব দলকেই নিজেদের সুবিধে মতো পিচ তৈরি করতে দেওয়া উচিত।’’

কেকেআরের শক্তি স্পিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইডেনে ঘূর্ণি উইকেট পায়নি তারা। এ দিনের পিচ দেখে তো রাজস্থান পাঁচ পেসারে খেলানোর সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলে। বরুণ অ্যারন, ওশেন থমাস, জোফ্রা আর্চার, জয়দেব উনাদকাট এবং বেন স্টোকস। এঁদের মধ্যে স্টোকসকে দিয়ে অবশ্য বল করাননি স্মিথ। কিন্তু প্রথম তিন জনের গতি চাপে ফেলে দেয় নাইট ব্যাটসম্যানদের।

প্রথম ছ’ওভারে দু’উইকেটে ৩২। দুটো আবার মেডেন ওভার। অ্যারনের প্রথম স্পেলের হিসাব ৩-১-১০-২। দুটো উইকেটই ইনসুইংয়ে। যে কারণে তিনিই ম্যাচের সেরা। ঝাড়খণ্ডের বরুণ আর জামাইকার ওশেন থমাসের গতির সামনে প্রথম দিকে আটকে যান নাইটরা। ১০ ওভারে উঠেছিল তিন উইকেটে ৪৯। ম্যাচটা কিন্তু ওখানেই অনেকটা বেরিয়ে যায় নাইটদের হাত থেকে। সেখান থেকে ১৭৫ রানে পৌঁছতে পারার পিছনে এক জনই— ক্যাপ্টেন কার্তিক। কিন্তু সেই রানটাও ইডেনের বিচারে খুব বেশি ছিল না। রাসেলের দুটো ক্যাচ পড়ল এ দিন। কিন্তু থমাসের সঙ্গে দ্বৈরথে হেরে গেলেন। জামাইকান পেসারের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে তাঁর ক্যাচ পড়ল। পঞ্চম বলে রাসেল ধরা পড়ে গেলেন বাউন্ডারিতে।

প্রশ্ন উঠছে, ইডেনের পিচ সবুজ হলে নাইট পেসাররা সুবিধে নিতে পারলেন না কেন? উত্তরটা সহজ। অ্যারন, থমাস বা আর্চারের মতো গতি নাইট পেসারদের ছিল না। বাউন্সটাও তাঁরা কাজে লাগাতে পারেননি। যে কারণে শেষ দিকে মার খেলেন। নাইটদের দুই স্পিনার— নারাইন এবং পীযূষ চাওলা মিলে পাঁচ উইকেট নিলেন ঠিকই। কিন্তু সেখানে পিচ নয়, ব্যাটসম্যানদের হঠকারিতাই বেশি দায়ী।

হারের ডাবল হ্যাটট্রিক, ইডেনে টানা চারটে হার। এই অবস্থায় ‘ম্যায় হু না’ বলার মতো কি আর কেউ আছে

নাইট সংসারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket KKR Rajasthan Royals Riyan Parag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE