ম্যাচ জিতলেও হৃদয় জিততে ব্যর্থ অশ্বিনরা। ছবি এএফপি।
ক্রিকেটের স্পিরিট কি ক্রমে নষ্ট হতে চলেছে?
সোমবার সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালস বনাম কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচটা দেখার পরে আমার এই কথাটাই মনে এল। কিংস ইলেভেন ম্যাচটা ১৪ রানে জিতল। কিন্তু ক্রিকেটের সেই সনাতন স্পিরিট নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল।
আমরা যখন খেলতাম তখন স্পিরিট মেনে খেলাটাই ছিল দস্তুর। এখন সেটা অনেকক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। হয়তো ক্রিকেট খেলাটা অনেক ছোট হয়েছে। খেলাটার বাণিজ্যকরণ হয়েছে। কিন্তু আমি বলব, ক্রিকেট স্পিরিট মেনে খেলাটাই বাঞ্ছনীয়।
যেমন এ দিন রাজস্থান ইনিংসের তেরোতম ওভারে সেই স্পিরিট ভাঙা হল। বল করতে এসেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব অধিনায়ক আর অশ্বিন। পঞ্চম বলে অশ্বিন রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনার জস বাটলারকে ‘মাঁকড়ীয় নিয়মে’ (বল করতে এসে বোলার যদি দেখে নন স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান ক্রিজের বাইরে তা হলে বল উইকেটে লাগিয়ে বোলার ওই ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারে) আউট করে। আইপিএলে প্রথমবার মাঁকড়ীয় আউট দেখে এই প্রশ্ন মাথায় আসছে।
স্কোরকার্ড
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৮৪-৪ (২০)
রাজস্থান রয়্যালস ১৭০-৯ (২০)
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব
রাহুল ক বাটলার বো কুলকার্নি ৪• ৪
গেল ক ত্রিপাঠী বো স্টোকস ৭৯•৪৭
মায়াঙ্ক ক কুলকার্নি বো গৌতম ২২•২৪
সরফরাজ ন. আ. ৪৬•২৯
পুরান ক রাহানে বো স্টোকস ১২•১৪
মনদীপ ন. আ. ৫•২
অতিরিক্ত ১৬
মোট ১৮৪-৪ (২০)
পতন: ১-৪ (রাহুল, ০.৪), ২-৬০ (মায়াঙ্ক, ৮.৫), ৩-১৪৪ (গেল, ১৫.৫), ৪-১৬৭ (পুরান, ১৯.১)।
বোলিং: ধবল কুলকার্নি ৪-০-৩০-১, কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ৪-০-৩২-১, জোফ্রা আর্চার ৪-০-১৭-০, বেন স্টোকস ৪-০-৪৮-২, জয়দেব উনাদকাট ৩-০-৪৪-০, শ্রেয়স গোপাল ১-০-৫-০।
রাজস্থান রয়্যালস
রাহানে বো অশ্বিন ২৭•২০
বাটলার রান আউট ৬৯•৪৩
সঞ্জু ক অশ্বিন বো কারেন ৩০•২৫
স্মিথ ক রাহুল বো কারেন ২০•১৬
স্টোকস ক পরিবর্ত বো মুজিব ৬•২
ত্রিপাঠী ক রাহুল বো মুজিব ১•৪
গৌতম ক শামি বো রাজপুত ৩•৪
আর্চার রান আউট ২•২
উনাদকাট ক ও বো রাজপুত ১•২
গোপাল ন. আ. ১•১
কুলকার্নি ন. আ. ৫•৩
অতিরিক্ত ৫
মোট ১৭০-৯ (২০)
পতন: ১-৭৮ (রাহানে, ৮.১), ২-১০৮ (বাটলার, ১২.৫), ৩-১৪৮ (স্মিথ, ১৬.৪), ৪-১৫০ (সঞ্জু, ১৬.৬), ৫-১৫৭ (স্টোকস, ১৭.৩), ৬-১৫৮ (ত্রিপাঠী, ১৭.৬), ৭-১৬৩ (আর্চার, ১৮.৫), ৮-১৬৪ (উনাদকাট, ১৯.১), ৯-১৬৪ (গৌতম, ১৯.২)।
বোলিং: স্যাম কারেন ৪-০-৫২-২, মুজিব উর রহমান ৪-০-৩১-২, মহম্মদ শামি ৪-০-৩৩-০, আর অশ্বিন ৪-০-২০-১, অঙ্কিত রাজপুত ৪-০-৩৩-২।
এ প্রসঙ্গে আমার ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান ম্যাচের কথা মনে আসছে। সে বার ওই ম্যাচে শেষ ওভার বল করতে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ দেখেছিল পাকিস্তানের সেলিম জাফর রান নিতে গিয়ে ক্রিজের মাঝপথে চলে গিয়েছে। ওয়ালশ সে দিন অশ্বিনের মতো প্রতিপক্ষকে আউট করে উৎসবে মাতেনি। বরং জাফরকে ডেকে ক্রিজে ফেরায়। তার পরে ফের বল করতে যায়। পাকিস্তান ম্যাচটাও জিতে যায়।
সোমবার তাই বাটলারকে অশ্বিনের আউট করা দেখে মনে হল, ক্রিকেট কি নতুন যুগে পা দিল? যে যুগে নিয়মটাই সব। ক্রিকেটের সৌজন্যবোধ, স্পিরিট কি হিমঘরে ঢুকে গিয়েছে?
বডিলাইন সিরিজে লারউড ও বিল ভোস যখন কুখ্যাত ‘লেগ থিওরি’ প্রয়োগ করেছিল, তখনও কিন্তু ক্রিকেটে লেগ সাইডে ক’জন ফিল্ডার দাঁড় করানো যাবে, তার কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন নিয়ম মেনেই সব কিছু করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধিক্কৃত হয়েছিলেন। আজও হন বিশ্ব জুড়ে।
গ্রেগ চ্যাপেল যখন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভাই ট্রেভর চ্যাপেলকে দিয়ে আন্ডার আর্ম বল করিয়েছিল, তাও নিয়ম মেনেই! কাজেই নিয়ম ‘ভদ্রলোকের খেলা’ ক্রিকেটে শেষ কথা নয়। সৌজন্যবোধ চলে গিয়েছে কি না বললাম এই কারণেই যে, কয়েক বছর আগেই বাটলার বার্মিংহ্যামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে ঠিক এ ভাবেই আউট হয়েছিল। তাই প্রশ্ন জাগছে, এই প্রজন্মের কাছে সৌজন্যবোধ জাদুঘরে ঢুকে যাওয়া মমির মতো কি না। আমার মতে এ দিন ম্যাচ জিতলেও অশ্বিন কিন্তু ক্রিকেটীয় স্পিরিটের কাছে হেরেই গিয়েছে। হয়তো খেলাটা সাদা বলে। আর কুড়ি ওভারের। টেস্ট নয়। তাই সতর্ক করার তাগিদ নেই অশ্বিনদের। কিন্তু ক্রিকেটের হৃদয় কিন্তু ওরা জিততে ব্যর্থ।
মাঁকড়ীয় পদ্ধতিতে আউট না হলে এ দিন জস বাটলারই ম্যাচের সেরা হত। কিন্তু তার জন্য সাজানো মঞ্চে নায়ক হয়ে গেল ক্রিস গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy