Advertisement
১১ মে ২০২৪
IPL

করোনার মধ্যেও আইপিএল, জৈব বলয় ভেদ করে ভাইরাস হানা, বিরক্ত কলকাতার চিকিৎসকরা

এই বিষয়ের গভীরতা জানার জন্য আনন্দবাজার ডিজিটাল শহরের তিন প্রখ্যাত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছিল।

করোনার মধ্যে আইপিএল আয়োজন দৃষ্টিকটু, মত একাধিক চিকিৎসকের

করোনার মধ্যে আইপিএল আয়োজন দৃষ্টিকটু, মত একাধিক চিকিৎসকের

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ২১:৫৯
Share: Save:

করোনা আতঙ্কের জন্য মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে আইপিএল। মঙ্গলবার দুপুরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিসিসিআই ক্রোড়পতি লিগ মুলতুবি করতেই আইপিএল-এর কঠিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকেও একাধিক ক্রিকেটারের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মতামত উঠে আসছে। এই জৈব বলয় যেহেতু চিকিৎসা শাস্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তাই এই বিষয়ের গভীরতা জানার জন্য আনন্দবাজার ডিজিটাল শহরের তিন প্রখ্যাত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছিল। পাঠকদের জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার ও সৌমিত্র রায় এবং অস্থি শল্য চিকিৎসক শান্তি রঞ্জন দাশগুপ্তের বক্তব্য তুলে ধরা হল।

কুণাল সরকার

আইপিএল মাঝপথে বন্ধ হওয়ার পর অনেকে গেল গেল রব তুলছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল দেশজুড়ে এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আইপিএল আয়োজন করার খুব দরকার ছিল? সবার আগে পরিস্থিতির গাম্ভীর্য স্বীকার করা উচিত ছিল। এই তো কয়েক দিন আগে কুম্ভমেলার মতো আমাদের রাজ্যে নির্বাচন শেষ হল। এই নির্বাচনের জন্য মানুষ শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইপিএল-ও মানুষকে বিনোদন দেওয়ার বদলে খারাপ উদাহরণ তৈরি করেছে। আমাদের দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন এখানে আইপিএল মোটেও মানায় না। জৈব বলয়ে থাকার পরেও ভাইরাস হানা দিল। এতেই বোঝা যায় বিসিসিআই-এর ডাক্তারদের জৈব বলয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাই নেই। তাদেরই যদি ধারণা না থাকে তাহলে সেই ডাক্তাররা খেলোয়াড়দের চিকিৎসা করবে কী করে! তাই আমি অন্তত আক্রান্ত হওয়া ক্রিকেটারদের দোষ দেব না। কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটার কোভিড আক্রান্ত হতেই প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হল। কিন্তু এই বলয়ের মধ্যে থেকে যদি কোনও বিদেশি ক্রিকেটার আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন তাহলে আমাদের দেশের মুখ কতটা পুড়ত সেই ধারণা করার চেষ্টা করছি।

ভঙ্গুর জৈব বলয় নিয়ে মুখ খুললেন শহরের একাধিক চিকিৎসক।

ভঙ্গুর জৈব বলয় নিয়ে মুখ খুললেন শহরের একাধিক চিকিৎসক।

সৌমিত্র রায়

এই ধরণের রোগ মানুষের দেহে জাঁকিয়ে বসলেই কিন্তু সেই ব্যক্তির মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির সহ্য ক্ষমতা কতটা সেটাও এখানে বড় ব্যাপার। বলয়ে থাকার পরেও ক্রিকেটাররা আক্রান্ত হচ্ছেন। এর বড় কারণ হল বিশেষ বিমানে এক শহর থেকে অন্য শহরে গেলেও বিমান বন্দরে আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কিংবা টিম হোটেলে হয়তো অন্য অতিথিদের প্রবেশ ঘটছে। কোনও খেলা চলার সময় বল গ্যালারিতে গিয়ে পড়লে আম্পায়ার বল স্যানিটাইজ করেন। কিন্তু অনুশীলনের সময় কি এই নিয়মগুলো মেনে চলা হয়? তাছাড়া মাঠ কর্মীরা কি বলয়ের মধ্যে থাকেন? এগুলো কিন্তু ভেবে দেখা উচিত। কারণ দ্বিতীয় দফায় করোনার আগমন কিন্তু আরও ভয়ঙ্কর। এ বার কিন্তু কম বয়সী লোকজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিসংখ্যান বলছে এ বার ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। তাই খেলোয়াড়দের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। যদিও বলয়ের মধ্যে থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরেও ক্রিকেটারদের দোষ দিতে রাজি নই। কারণ ওরা তো চুক্তিবদ্ধ। যদিও এই সময় আইপিএল আয়োজন করা আমার মতে বড্ড দৃষ্টিকটু। গত বারের মতো বিদেশে করলে কী এমন ক্ষতি হত? টেলিভিশনের মাধ্যমে যদি দেশের সাধারণ মানুষকে বিনোদন দিতে হয়, তাহলে তো সেটা বিদেশেও করা যেত। তাই আমার মতে দেশের মাটিতে আইপিএল আয়োজন করে ক্রিকেটারদের সমস্যায় ফেলা হল।

শান্তি রঞ্জন দাশগুপ্ত

খেলোয়াড়দের সহ্য ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থেকে অনেক বেশি, এই প্রচলিত ধারণা একেবারে ভুল। কোনও খেলোয়াড় বাড়তি ব্যায়াম করলে তাঁর শরীরের সহ্য ক্ষমতা কমে যায়। এর মধ্যে আবার ক্রিকেটার, ফুটবলারদের মাসের পর মাস বলয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে করোনা তাদের শরীরে থাবা বসিয়ে কাহিল করে দেওয়ায় আমি মোটেও অবাক নই। কিন্তু তাদের কোনও উপায় নেই। একবার টাকা নিয়ে নিলে আইপিএল নামক বাজার থেকে বেরনো যাবে না। বরং এই অবস্থার মধ্যে আইপিএল আয়োজন করার জন্য আমি অবাক হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হল বিসিসিআই-এর ডাক্তাররা আদৌ এই রোগের মোকাবিলা করার জন্য কি যোগ্য? বোর্ডের প্যানেলে অনেকে আছেন, যাঁরা মেডিসিন বিভাগে তেমন পারদর্শী নয়। তবুও তাঁরা দিব্য আছেন। এর ফল যা হওয়ার তাই হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE