ভরসা: মাধোয়ালকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছেন রোহিত। ফাইল চিত্র।
ক্রিকেটার হওয়ার কোনও স্বপ্নই ছিল না তাঁর। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বাবাকে হারান। তাই পরিবারের হাল ধরার উদ্দেশ্য নিয়েই চাকরি খুঁজতে শুরু করেন তিনি। পেয়েও যান। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এক বেসরকারি সংস্থায় বেশ মোটা মাইনের চাকরিতে ঢোকেন। কিন্তু কয়েক মাস যাওয়ার পরেই দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে।
টুকটাক ক্রিকেট তিনি খেলতেন। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেট কী, তা টিভিতেই দেখেছিলেন। টেনিস বলের ক্রিকেটে পেস বোলার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ঋষভ পন্থ সদ্য ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায়, তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। সেই সময় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার লক্ষ্যে থাকা এক তরুণ খবর পান, উত্তরাখণ্ডের নতুন রঞ্জি ট্রফি দল নামতে চলেছে। ট্রায়ালে দেখে দলে নেওয়া হবে। রুরকির সেই হবু ইঞ্জিনিয়ার মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে চলে যান ট্রায়াল দিতে। কে জানত, টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে আসা তরুণ এলিমিনেটরে মুম্বই ইন্ডিয়ানসের হয়ে পাঁচ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তুলবেন? তিনি— আকাশ মাধোয়াল।
উত্তরাখণ্ডের ট্রায়ালে ওয়াসিম জাফর তাঁকে দেখে পছন্দ করেন। নিয়ে নেন দলে। কিন্তু জাফরের প্রশিক্ষণে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন আকাশ। তিনি সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে দায়িত্ব নেন বাঙালি কোচ মণীশ ঝা। কলকাতাতেই বেড়ে ওঠা মণীশের। লক্ষ্মীরতন শুক্ল, শিবসাগর সিংহদের সঙ্গে এক সময় খেলেছেন। তার পরে বাংলা ছেড়ে চলে যান সার্ভিসেসে। তাদের হয়েই রঞ্জি ট্রফিতে খেলেন। উত্তরাখণ্ডের কোচিংয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরে আকাশকে পছন্দ হয় তাঁর।
মণীশ বলছিলেন, ‘‘পেস বোলার তুলে আনার খিদে আমার বরাবরের। উত্তরাখণ্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমার চোখ খুঁজে নিয়েছিল আকাশকে। টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে আসা এক তরুণ বেশ জোরে বল করছিল নেটে। কিন্তু লাইন ও লেংথের ঠিক ছিল না। টেনিস বলে যেমন হয় আর কি। প্রতিটি বল এক জায়গায় করলে ব্যাটসম্যান শট খেলার উপায় ঠিক বার করে নেয়।’’ যোগ করেন, ‘‘সোজা বল করার চেয়েও অফকাটার ও লেগকাটার করার বেশি প্রবণতা ছিল ওর। তবে শুরু থেকেই ইয়র্কার খুব ভাল করত।’’
আকাশের বল পিচে পড়ে পিছল খেয়ে ব্যাটসম্যানের দিকে যায়। এই প্রতিভা খুব একটা বেশি কারও মধ্যে থাকে না। লাসিথ মালিঙ্গার ছিল। যশপ্রীত বুমরার আছে। মিচেল স্টার্ক এ ভাবে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করেন। এ বার আকাশের মধ্যেও সেই প্রতিভা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কোচের কথায়, ‘‘ওর বল যে স্কিড করে, সেটাই সব চেয়ে বড় শক্তি। উত্তরাখণ্ড দলে সুযোগ পাওয়ার পরে ওকে বলেছিলাম, টেনিস বল বাদ দিয়ে নিয়মিত লাল বলের ক্রিকেট খেলতে হবে। তোকে কথা দিচ্ছি একটাও ম্যাচে দলের বাইরে রাখব না। শুধু ব্যাটসম্যানের স্টাম্পের সোজাসুজি করবি। পারবি তো?’’ কথা রাখেন আকাশ।
কোচের কথা মতো আকাশ নিজেকে ইনসুইং বোলারে পরিণত করেন। ধীরে ধীরে শিখে নেন আউটসুইং। মাত্র দু’বছর ক্রিকেট খেলা তরুণকে দলের অধিনায়কও করে দেন মণীশ। কোচের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা হয় আকাশের। তাঁকে বলেছেন, ‘‘রোহিত শর্মা আমাকে যে ভাবে আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে, তাতে খারাপ কিছু করার উপায় নেই।’’
আকাশের বোলিংয়ে মুগ্ধ কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর থেকে স্বয়ং বুমরা। ইরফান পাঠান থেকে অনিল কুম্বলে প্রশংসা করেছেন এই তরুণের।
কিংবদন্তিদের মন্তব্যে আকাশ মোহিত। কিন্তু আত্মতুষ্ট নন। সামনে যে অনেক বড় রাস্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy