Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দু’টো ঘুণপোকার জন্য ধসানো হল গোটা বাড়ি

প্রথমেই বলে রাখি যে, মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধাচারণ করতে এই লেখা আমি লিখতে বসিনি। ভারতবর্ষের আর পাঁচ জন নাগরিকের মতো ভারতীয় বোর্ড নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় আমিও মানছি, মানতে আমরা বাধ্য। কিন্তু নিজে আইনজীবী হওয়ার কারণে মনে গোটা কয়েক প্রশ্ন উঠছে। যা খুব বিনীত ভাবে পেশ করতে চাই।

উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:২৫
Share: Save:

প্রথমেই বলে রাখি যে, মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধাচারণ করতে এই লেখা আমি লিখতে বসিনি। ভারতবর্ষের আর পাঁচ জন নাগরিকের মতো ভারতীয় বোর্ড নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় আমিও মানছি, মানতে আমরা বাধ্য। কিন্তু নিজে আইনজীবী হওয়ার কারণে মনে গোটা কয়েক প্রশ্ন উঠছে। যা খুব বিনীত ভাবে পেশ করতে চাই।

ভারতীয় সংবিধানের ১৯ (১)(সি) ধারাটা যেমন। ওই ধারা অনুযায়ী, কোনও সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং তা পরিচালনা দেশের যে কোনও নাগরিকের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। আর যতক্ষণ সেই সংগঠন ও তার পরিচালনা আইনবিরুদ্ধ কাজকর্ম করছে না, ততক্ষণ তার উপর হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। কারণ সেটা তা হলে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের বিরোধী হয়ে যায়। ভারতীয় বোর্ড বা তার অধীনস্থ রাজ্য সংস্থাগুলোও কোনও না কোনও বিশেষ আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত। অতএব আমার মনে হয়, বোর্ড বা রাজ্য সংস্থাদের উপরেই ছাড়া উচিত ছিল লোঢা কমিশনের কোন সুপারিশ তারা মানবে আর কোনটা মানবে না। সেটা করা হলে মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ নিয়ে যে নানা দিক থেকে প্রশ্ন উঠছে, তা উঠত না।

আবারও বলছি, সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধাচারণ করতে আমি এখানে বসিনি। ভারতের প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুর এবং বিচারপতি কলিফুল্লা রায়ে যে যে বিষয়গুলো পেশ করেছেন, তার অধিকাংশই ঠিক। এক রাজ্য এক ভোট, ন’বছরের বেশি কোনও ক্রিকেট কর্তার পদে থাকা নিয়ে বিধিনিষেধ, আর্থিক স্বচ্ছতা, নামী প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়ে সংগঠন তৈরি— অবশ্যই এর প্রত্যেকটার প্রয়োজনীয়তা আছে। ঠিক যেমন জরুরি, বোর্ডে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে জনসাধারণকে ওয়াকিবহাল রাখা। ক্রিকেট কর্তারা যাতে স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে না পড়েন, সেটা দেখা। কিন্তু আমার বক্তব্য হল, ভারতীয় বোর্ড পরিচালনাকে যখন অত্যন্ত সম্মানজনক বলে ধরা হয়, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট যখন নিজেও তা মনে করেন, তা হলে মাত্র একটা বা দু’টো ঘুণপোকার জন্য গোটা বাড়িকে ধসিয়ে দেওয়া কেন? কুকর্মের শাস্তি দিয়ে তাদের ছেঁটে ফেললেই তো চলত। কাঠামোর আমূল পরিবর্তন খুব দরকার ছিল কি? আমার সংশয় আছে। দেওয়ালে নোনা ধরলে আমরা তো দেওয়ালকে মেরামত করি। গোটা বাড়ি নতুন করে তৈরি করতে তো বসি না।

আরও একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারলাম না। আমাদের দেশে মন্ত্রী, আমলাদের কারও বয়সের কোনও উর্ধ্বসীমা নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে আমলা, কারওরই নেই। কাউকেই বলা হয় না, আপনি অমুক বয়সের পর আর পদে থাকতে পারবেন না। তা হলে বোর্ড কর্তাদের এমন বয়সের মেয়াদ বেঁধে দেওয়া কেন? কেন তাঁদের বলে দেওয়া আপনারা সত্তর বছর হয়ে গেলে আর বোর্ডে থাকতে পারবেন না? চলে যেতে হবে? এর পিছনে যুক্তিটা জানতে ইচ্ছে করছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আর একটা কথা বলেছেন যে, কোনও মন্ত্রী বা সরকারি আমলা বোর্ডে থাকলে তাঁর সময়ের অভাব হবে। মানতে পারছি না। রাজনৈতিক কাজকর্ম মিটিয়ে কে কতটা বোর্ডে সময় দেবে, তা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ভারতীয় বোর্ডে কাজ করার সময় এমন তিন জন রাজনৈতিক নেতার নাম করতে পারি, যাঁদের কখনও বোর্ডে সময়ের অভাব ঘটেছে বলে দেখিনি। এঁরা— স্বর্গীয় এনকেপি সালভে, স্বর্গীয় মাধবরাও সিন্ধিয়া এবং আইএস বিন্দ্রা। এঁরা পারলে বাকিরা যে কেউ পারবেন না, তা বিশ্বাস করে নিই কী করে?

(লেখক বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান আইনি উপদেষ্টা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Usha Nath Banerjee BCCI Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE