তাঁরা একে অপরের বন্ধু। ডেভিস কাপে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেন। কিন্তু সেই বন্ধু কোর্টের উল্টো দিকে থাকলে তিনি যে কোনও দয়ামায়া দেখাতে রাজি নন তা বুঝিয়ে দিলেন ইয়ানিক সিনার। স্বদেশি লোরেঞ্জো মুসেত্তিকে হারিয়ে উঠে গেলেন ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে। সিনার জিতেছেন ৬-১, ৬-৪, ৬-২ গেমে। মেয়েদের বিভাগে শেষ চারে উঠেছেন নেয়োমি ওসাকা। ছিটকে গিয়েছেন দ্বিতীয় বাছাই ইগা শিয়নটেক। ভারতীয়দের মধ্যে, ডাবলস সেমিফাইনালে উঠেছেন ইউকি ভাম্বরি।
কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনালে এই প্রথম দুই ইটালীয় মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানে আগাগোড়া সিনারের দাপটই দেখা গেল। বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হার্ডকোর্টে টানা ২৬টি ম্যাচ জিতলেন। গত বারের ইউএস ওপেন ছাড়াও এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন। সেমিফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ কানাডার ফেলিক্স অগার আলিয়াসিমে।
ম্যাচের শুরু থেকেই সিনারের দাপট দেখা গিয়েছে। প্রথম সেটেই ৫-০ এগিয়ে যান তিনি। মুসেত্তি এক বারই নিজের সার্ভিস ধরে রাখতে পেরেছেন। পরের গেম জিতে মাত্র ২৭ মিনিটে সেট পকেটে পুরে নেন সিনার। দ্বিতীয় সেটে মুসেত্তিকে বেশ ভাল লেগেছে। এক সময় ৪-৩ এগিয়ে গিয়েছিলেন। সিনার দ্রুত ফিরে আসেন। তাঁর বড় সার্ভিস এবং চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল মুসেত্তির প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা শেষ করে দেয়। শেষ তিনটি গেম জিতে সেটও জেতেন সিনার। তৃতীয় সেটে মুসেত্তিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। দু’বার ব্রেক করে ম্যাচ জেতেন সিনার।
গত বারের ইউএস ওপেন থেকে প্রতিটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছেন সিনার। তাঁর ধারাবাহিকতা নিয়ে ইতিমধ্যেই টেনিসবিশ্বে আলোচনা শুরু হয়েছে। শেষ চারে উঠে তিনি বলেন, “আমরা একই দেশের খেলোয়াড়। গ্র্যান্ড স্ল্যামের সূচিতে এখন ইটালির অনেকেই থাকছে। আমরা একসঙ্গে ডেভিস কাপ খেলি। সম্পর্কেও একে অপরের বন্ধু। কিন্তু ম্যাচ শুরু হলে সে সব সরিয়ে রাখতে জানি। ম্যাচের পর হাত মেলানোর সময় থেকে আবার সব আগের মতোই থাকে।”
সিনার শেষ চারে যাঁর বিরুদ্ধে খেলবেন, সেই আলিয়াসিমে চার বছর পর ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন। ২০২১-এ শেষ বার উঠেছিলেন। কোয়ার্টারে আলিয়াসিমে ৪-৬, ৭-৬, ৭-৫, ৭-৬ হারিয়েছেন অষ্টম বাছাই আলেক্স ডি’মিনাউরকে। চলতি বছরে অ্যাডিলেড এবং মঁপেলিয়েরে ট্রফি জিতে শুরুটা ভাল করলেও চোটের কারণে পিছিয়ে পড়েছিলেন আলিয়াসিমে। ইউএস ওপেনে আবার পুরনো ঝলক দেখাচ্ছেন তিনি। এর আগে তৃতীয় বাছাই আলেকজ়ান্ডার জ়েরেভকে ছিটকে দিয়েছেন।
মেয়েদের বিভাগে প্রত্যাশিত ভাবেই সেমিফাইনালে উঠে গেলেন ওসাকা। ক্যারোলিনা মুচোভাকে হারিয়েছেন ৬-৪, ৭-৬ গেমে। গোটা ম্যাচে মুচোভা যত বার সমস্যায় ফেলেছেন, তত বারই নিজের সেরাটা বার করে এনেছেন ওসাকা। টানা তৃতীয় বার নিউ ইয়র্কে সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিলেন মুচোভা। তবে সেই আশা শেষ হয়ে গিয়েছে ওসাকার সামনে।
প্রথম সেটে দুই খেলোয়াড় সার্ভিসে একে অপরকে টেক্কা দেন। ওসাকার থেকে এ ব্যাপারে এগিয়েছিলেন মুচোভা। তবে শেষ আটে পৌঁছনোর আগে কোর্টে ১০ ঘণ্টা কাটানোর প্রভাব পড়ে তাঁর খেলায়। বোঝাই যাচ্ছিল ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তবু ওসাকাকে ব্রেক করেন। অবশ্য পরের গেমেই মুচোভাকে ব্রেক করে ম্যাচ নিজের দখলে নিয়ে নেন ওসাকা।
শেষ চারে উঠে তিনি বলেছেন, “দারুণ লাগছে আবার সেমিফাইনালে ফিরতে পেরে। জানতাম মুচোভার বিরুদ্ধে শান্ত থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে ওর। আমি নিজের সার্ভিসে ফোকাস রেখে সুযোগ কাজে লাগিয়েছি।”
তবে শিয়নটেকের বিদায় অঘটনই বলা চলে। তিনি আমান্ডা আনিসিমোভার কাছে ৪-৬, ৩-৬ গেমে হেরেছেন। আমেরিকার আরও একজন মহিলা খেলোয়াড় ইউএস ওপেন জেতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছু দিন আগেই উইম্বলডন ফাইনালে এই আনিসিমোভাকে ৫৭ মিনিটে ৬-০, ৬-০ উড়িয়ে দিয়েছিলেন শিয়নটেক। নিউ ইয়র্কে তারই প্রতিশোধ নিলেন আনিসিমোভা।
ম্যাচের পর এক সাংবাদিকের সঙ্গে ঝামেলাও হয়েছে শিয়নটেকের। ওই সাংবাদিক শিয়নটেককে প্রশ্ন করেছিলেন, টানা টেনিস খেলার কারণে তিনি ক্লান্ত কি না? শিয়নটেক বলেন, “এখানে খেলে আমার মোটেই বিধ্বস্ত লাগেনি।” এর পর ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শিয়নটেকের মানসিক বিরতি দরকার কি না। এতেই রেগে যান পোল্যান্ডের খেলোয়াড়। বলেন, “যারা সূচি তৈরি করেছে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। আমার মনে হয় আপনার মানসিক বিরতির প্রয়োজন রয়েছে।”
চার বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী শিয়নটেক চলতি বছরের শুরু থেকে একের পর এক ম্যাচ খেলে চলেছেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে খেলেছিলেন। উইম্বলডন জিতেছিলেন। ইউএস ওপেনে কোয়ার্টারে থামল দৌড়। এর মাঝে সার্কিটে একাধিক প্রতিযোগিতা এবং মিক্সড ডাবলসও খেলেছেন।
টেনিসে সাম্প্রতিক কালে মানসিক বিরতি অনেকেই নিচ্ছেন। শিয়নটেকের প্রতিপক্ষ আনিসিমোভাও ২০২৩-এ খেলা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। ওসাকা বিরতি নিয়েছেন। এখন দেখার শিয়নটেক সেই পথে হাঁটেন কি না।
আরও পড়ুন:
এ দিকে, প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্নের দিকে আরও এক ধাপ এগোলেন ভাম্বরি। সতীর্থ মাইকেল ভেনাসকে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি ৬-৩, ৬-৭, ৬-৩ গেমে হারালেন ১১তম বাছাই রাজীব রাম-নিকোলা মেটকিচের জুটিকে। প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে উঠলেন তিনি। ম্যাচের পর বলেন, “টেনিস র্যাকেট যাঁরাই হাতে নিয়েছে তাঁদের স্বপ্ন থাকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা। খেলতে নামলে আগে ট্রফির কথাই মাথায় আসে। টিভিতে এ সব দেখেই বড় হয়েছি। আমার আদর্শ পিট সাম্প্রাস এবং আন্দ্রে আগাসি। ওদের উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন জিততে দেখেই টেনিস খেলব ঠিক করেছিলাম।”