Advertisement
E-Paper

বৃষ্টির জলে সুপার সানডে ভাসিয়ে জট চেন্নাই ম্যাচেও

রবিবারের ম্যাচে বাধ সাধল বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার কেকেআর বনাম চেন্নাই সুপার কিঙ্গস দ্বৈরথের পূর্বাভাস আরও চরম। সে দিন বাংলা বন্‌ধ! রাজনৈতিক দলের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট তো আছেই। সেটা তবু বারো ঘণ্টার। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ করতে হবে পরিবহন ধর্মঘট। যেটা আবার চব্বিশ ঘণ্টার। সব মিলিয়ে শহর তো বটেই, সিএবিরও শিরে সংক্রান্তি।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত ও রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
বানভাসি ইডেন। ছবি: উত্পল সরকার।

বানভাসি ইডেন। ছবি: উত্পল সরকার।

রবিবারের ম্যাচে বাধ সাধল বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার কেকেআর বনাম চেন্নাই সুপার কিঙ্গস দ্বৈরথের পূর্বাভাস আরও চরম। সে দিন বাংলা বন্‌ধ!

রাজনৈতিক দলের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট তো আছেই। সেটা তবু বারো ঘণ্টার। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ করতে হবে পরিবহন ধর্মঘট। যেটা আবার চব্বিশ ঘণ্টার। সব মিলিয়ে শহর তো বটেই, সিএবিরও শিরে সংক্রান্তি।

এ দিন কেকেআর-রাজস্থান ম্যাচ করানোর প্রাণপণ চেষ্টা যখন চলছে, তখনই সিএবির কাছে খবর আসে যে ইডেনে পরের ম্যাচ নিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে চিঠি পাঠান বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। তাঁকে আবেদন জানান যে, সে দিনই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের বিরুদ্ধে কেকেআরের ম্যাচ। যে ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই চিঠিতে কতটা লাভ হবে, রবিবার রাত পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না। সিএবির কাছেও সুস্পষ্ট কোনও উত্তর নেই। সন্ধের দিকে শুধু বলা হল, ব্যাপারটা বিবেচনা করে দেখার কথা জানিয়েছে বামফ্রন্ট।

ততক্ষণে রবিবাসরীয় আইপিএল মহাভোজে চোনাপ্রাপ্তি সম্পূর্ণ। সুপার সানডে ততক্ষণে বৃষ্টিধোয়া রবিবার। যার পাল্লায় পড়ে কেকেআর বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ তো হলই না, বরং প্রশ্ন উঠে গেল ইডেনের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে। বৃষ্টির চোটে ইডেনে এই প্রথম ম্যাচ পণ্ড হল না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে আইপিএল, সব ক্ষেত্রেই হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রায় প্রত্যেক বছর এ রকম ঘটনা ঘটতে দেখেও কেন সেটা আটকানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সিএবি? কেন বৃষ্টি থামার পরে দু’ঘণ্টা পেয়েও অন্তত পাঁচ ওভারের একটা ম্যাচ করা গেল না? কেন বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর খালি হাতে ফিরে যেতে হল হাজার-হাজার নাইট সমর্থককে?

বিকেল পাঁচটা নাগাদ বৃষ্টি থামার পর দেখা গেল, ড্রেসিংরুমের বাইরে দফায় দফায় শীর্ষ বৈঠকে দাঁড়িয়ে পড়ছে দুটো টিম। কখনও কোচ ট্রেভর বেলিসের সঙ্গে কেকেআর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। কখনও স্টিভ স্মিথের সঙ্গে রাহুল দ্রাবিড়। বাউন্ডারির ধারে জয় মেটার সঙ্গে আলোচনায় ডুবে কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর। ডিজের গানের তালে একটু নেচে নিলেন রাজস্থানের এক বিদেশি।

ম্যাচটা তখন বাইশ গজে নয়, খেলা হচ্ছে অঙ্কের খাতায়। সওয়া পাঁচটা বেজে গেল, কুড়ি ওভারের ম্যাচ আর সম্ভব নয়। তা হলে কত ওভার খেলা যাবে? হাতের সময় যত কমবে, ওভারও তত কম পাওয়া যাবে। সাতটা কুড়ি পেরিয়ে গেলে সব শেষ। তখন পাঁচ ওভারের ম্যাচও আর সম্ভব নয়। ওটাই কাট-অফ টাইম।

সাতটা কুড়ি নয়, সাতটাতেই জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল, ম্যাচ বাতিল। শোনা গেল, পৌনে সাতটা নাগাদ যখন শেষ বারের জন্য মাঠ পরিদর্শনে বেরোন আম্পায়াররা তখন দুই টিমকে তাঁরা জানান যে, মাঠ পুরো শুকোয়নি। ‘এল’ ব্লকের দিকে আউটফিল্ডের কিছু অংশ তখনও ভিজে। তবু টিমরা চাইলে অন্তত পাঁচ ওভারের ম্যাচ করিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু পাশাপাশি টিমদের এটাও বলা হয়, ভিজে আউটফিল্ডে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কোনও ক্রিকেটার চোট পেলে তার দায়িত্ব পুরোপুরি টিমের। সেটা শুনে নাকি দুটো টিমই পিছিয়ে আসে। কেকেআরের তরফ থেকে কেউ কেউ যদিও বললেন, ম্যাচ অফিশিয়ালরাই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কেকেআর খেলতে চায়নি, এমন নয়।

এর পরই টার্গেট হয়ে যায় ইডেনের নিকাশি ব্যবস্থা। প্রশ্ন ওঠে, এত বড় সেন্টারে কেন বারবার একই সমস্যা হচ্ছে? সিএবির হাতে যেখানে চারটে সুপার সপার আছে, সেখানে এ দিন মাত্র তিনটে কেন ব্যবহার করা হল? পাশাপাশি তুলে ধরা হয় গত বুধবারের ম্যাচকে। বিশাখাপত্তনমে যে ম্যাচ ঘণ্টাখানেক জোর বৃষ্টির পরেও ওভার কমিয়ে করা সম্ভব হয়েছিল। সেখানে ইডেন কেন পারল না মাঠ শুকিয়ে ফেলতে? হাতে বেশি সময় পেয়েও?

সিএবি থেকে যার জবাবে বলা হচ্ছে, একসঙ্গে চারটে সুপার সপার ব্যবহার করা নাকি সম্ভব নয়। তারা তিনটে সুপার সপারের পাশাপাশি আটটা পাম্প ব্যবহার করেছিল। আর মাঠের যে দিকটায় সবচেয়ে বেশি জল জমেছিল, ‘এল’ ব্লকের সামনের ওই জায়গাটা শুকিয়ে ফেলা যায়নি অন্য কারণে। ওই জায়গাটার জল সুপার সপার দিয়ে শুকনো যায় না, সেটা মাঠ থেকে একেবারে বের করে না দিলে জল জমেই থাকে। সেই জলটা বেরনোর কথা যে ড্রেনেজ চ্যানেল দিয়ে, তার লকগেট খোলা হয়েছে কি না তা নিয়ে সিএবি নিশ্চিত নয়। তারা পুরসভাকে এই ব্যাপারে আবেদন করলেও সেটা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, কেউ বলতে পারলেন না। সিএবির যুগ্ম-সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও দেখা গেল কিছুটা বিরক্ত। বললেন, ‘‘এত বৃষ্টি হলে ম্যাচ করা মুশকিল। কিন্তু ইডেনের ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কিউরেটরের সঙ্গে এ বার বসতে হবে।’’

বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় কিউরেটর-প্রধান আশিস ভৌমিক আবার দুষে গেলেন ইডেনের মাটিকে। অভিযোগের আঙুল তুলে গেলেন সিএবির দিকে। বললেন, ‘‘যত দিন না ইডেনের এঁটেল মাটি পাল্টানো হবে, এই সমস্যা মেটানো যাবে না।’’ তিনি জানালেন, গত বছর বোর্ডের পক্ষ থেকে সিএবির কাছে মাটি পাল্টানোর কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এঁটেল মাটির জায়গায় ইডেনে বালি মেশানো মাটির ব্যবস্থা করতে। যাতে বৃষ্টির জল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। কিন্তু তাতে নাকি সিএবি খুব আগ্রহ দেখায়নি। বরং বলেছিল, অত কিছু করতে গেলে একটা পুরো মরসুম ইডেনে খেলা বন্ধ রাখতে হবে।

এক দিকে নিকাশি ব্যবস্থার ফাঁস। অন্য দিকে বন্‌ধের বজ্রআঁটুনি। দুইয়ের উত্তর খুঁজতে চেন্নাই ম্যাচ পর্যন্ত কর্তাদের যে নির্ঘুম কাটবে, তাতে আর সন্দেহ কী।

Kolkata Knight Rider KKR vs RR Rajasthan Royals Rajib Ghosh Priyodarshini Rakshit Eden Garden Rain IPL8
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy