চেনা মাঠে অচেনা ভাগ্যের সামনে গম্ভীর। মঙ্গলবার কোটলায়। ছবি: উৎপল সরকার
কেকেআর টিমে যে অলিখিত রেওয়াজ চালু রয়েছে মঙ্গলবার তার আশ্চর্য ব্যতিক্রম হল। রেওয়াজটা হল আন্দ্রে রাসেল আর সুনীল নারিনকে বিকেল চারটের আগে সাধারণত কেউ ডিসটার্ব করে না।
টিমের দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান প্লেয়ার কলকাতাতেও চলেন নিজেদের দেশের ঘড়ি অনুযায়ী। সকাল সাতটা নাগাদ নিজেদের দেশের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, বাড়ির সঙ্গে কথা-টথা বলে, মেল-টেল সেরে ঘুমোতে যান। লাঞ্চ বলতে ওই চারটের পর উঠে যেটুকু খাওয়া। হেভি স্ন্যাক্স খাওয়া কারণ তখন তো আর হোটেল মেন কোর্স দেয় না। আইপিএল ম্যাচ বা প্র্যাকটিস দুটোই যেহেতু সন্ধেবেলা, এমন রুটিন সমস্যা হয় না।
নয়াদিল্লির অভিজাত আইটিসি মৌর্য-র কফিশপে এ দিন বিকেলে যাঁদের প্লেটে হেভি স্ন্যাক্স-সহ দেখা গেল, তাঁদের একজনের নাম অবশ্য নারিন নয়। আর একজন রাসেল নন। বরঞ্চ এক জন গৌতম গম্ভীর। অন্য জন ইউসুফ পাঠান।
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের নয়। দৈব দুর্বিপাকে প্লে-অফের আগের বিকেলে নাইটদের রুটিনই অভূতপূর্ব বদলে গিয়েছে। কলকাতা থেকে দিল্লি আসার জন্য গম্ভীররা সন্ধের প্লেনে চড়েছিলেন। কিন্তু দিল্লি বিমানবন্দরে আধঘণ্টার ওপর চক্কর দিয়েও বিমান নামতে পারেনি। পাক খেতে খেতে অবতরণ করতে বাধ্য হয় জয়পুরে। সেখানে সন্ত্রস্ত নাইট সিনিয়র ক্রিকেটাররা রাত্তিরটা কাটানোর পর সকালে লাক্সারি বাসে জয়পুর থেকে রাজধানীতে এসেছেন। যত না শারীরিক ক্লান্তি, তার চেয়ে বেশি স্নায়ুচাপের হ্যাংওভার। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে দিল্লি উড়ে আসার সময়ও শেষ পনেরো মিনিট মারাত্মক টার্বুলেন্স পেলাম। কিন্তু সোমবার রাতের কাহিনি শুনে মনে হচ্ছে শিশু উপন্যাস!
দিল্লি হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী কাল শুকনো এবং যথেষ্ট গরম থাকা উচিত। কিন্তু গতকাল রাত্তিরে শহরের উপর দিয়ে চলছিল ঘূর্ণাবর্ত। ঝড়বৃষ্টি। বিদ্যুৎ। তিন ঘণ্টারও বেশি কোনও ফ্লাইট নাকি দিল্লি নামতে পারেনি। শুধু তো নাইটরা নন। রায়পুর থেকে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ক্রিকেটারদের নিয়ে ভর্তি বিমান লখনউয়ে নামতে বাধ্য হয়।
দ্রাবিড় ছাড়া দিল্লির তারকারা সবাই ছিলেন সেই ফ্লাইটে। প্রত্যক্ষদর্শী স্টার টিভির রিপোর্টার বলছিলেন, এমন ঝাঁকুনি হতে থাকে যে বিদেশি দক্ষিণ আফ্রিকানরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান। কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, তা হলে এখানেই সব শেষ হয়ে গেল? এটা যদি বা সেকেন্ড হ্যান্ড সোর্সে শুনে থাকি, এ দিন ইউসুফ পাঠানের মুখে তো সরাসরি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানলাম।
একটা সময় ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ইউসুফ বললেন, ‘‘আর মনে করতে পারছি না। বারবার করে কালকের স্মৃতি চলে আসছে। মনে হচ্ছে যেন প্লেনেই বসে আছি। আল্লাহ কী ঝঞ্ঝাটেই না পড়েছিলাম। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল প্লেন বুঝি হাইজ্যাক্ড হয়ে গেছে। উড়েই চলেছি। পাইলট কোনও ঘোষণাও করছে না। অন্ধকারের মধ্যে শুধু দুলছি।’’
ইউসুফ পাঠানের মতো ক্রিকেটাররা ডেইলি প্যাসেঞ্জারির মতো করে ফ্লাইটে চড়েন। ফ্লাইট কত খারাপ থাকলে এক রাত্তিরে তাঁদের এত কাঁপিয়ে দিতে পারে, বোঝাই যাচ্ছে। প্রশ্ন হল, কোটলা কি নাইটদের জন্য একই রকম বিভীষিকা নিয়ে হাজির হবে? না কি টিম হোটেলের লবিতে বিকেলে যে সানাই বাজছিল, সেটাই বাজতে থাকবে গম্ভীরদের জন্য?
ইডেন ম্যাচে নাইটদের সবচেয়ে বড় ফাটকা ছিলেন কুলদীপ যাদব। দুম করে পীযূষ চাওলার মতো কারও জায়গায় তাঁকে যে খেলানো হবে, কেউ ভাবেনি। পীযূষ এ বারের আইপিএলে শুধু ভাল বলই করেননি, ব্যাটটাও করে দিতে পারেন। তবু কানপুরের একুশ বছর বয়সিকে দিয়ে মরিয়া ফাটকা খেলেন গম্ভীর। একটাই কথা মাথায় রেখে যে, কুলদীপ বিশ্বে এমন বিরল বাঁ হাতি চায়নাম্যান বোলার, যাঁর ডেলিভারি ন্যাটা ব্যাটসম্যানের লেগ ব্রেক হয়। সানরাইজার্সে তিন হেভিওয়েট ব্যাটসম্যান বাঁ হাতি। শিখর ধবন। ওয়ার্নার নিজে। আর যুবরাজ। এঁদের মধ্যে ধবনকে তুলে নেন কুলদীপ। এর পর আউট করেন কেন উইলিয়ামসনকে। একাই মোড় ঘুরিয়ে দেন ইডেনে মরসুমের শেষ আইপিএল ম্যাচের।
কিন্তু কোটলা আয়তনে ইডেনের চেয়ে অনেক ছোট। বলও কতটা ঘুরবে, অজানা। সেখানে যুবরাজদের আটকাতে পারবেন কুলদীপ? ইডেনের জন্য তাঁকে দিয়ে শক দেওয়াটা জরুরি ছিল। এখানে তো নতুন শকের কথা ভাবতে হবে। সেটা কে এবং কী?
হায়দরাবাদ আন্দাজ করছে সেটা টিমে ফেরা আন্দ্রে রাসেল হবেন। কেকেআর অবশ্য তার বাইরে নতুন কিছু আমদানি করতে চাইবে। সেটা কী হতে পারে? মরসুমের নতুন কোচ জাক কালিসের খুব প্রশংসা নাইট শিবিরে শোনা গিয়েছে। প্লে-অফ কিন্তু কালিসের কাছেও নতুন পরীক্ষা। এখানে যদি মগজাস্ত্র না বার করতে পারেন, এত দিনের কৃতিত্বগুলো যমুনায় মিলিয়ে যাবে।
এমনিতে কালিসের অধিনায়কের কাছে ধোনির বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরেই সবচেয়ে ব্যক্তিগত ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হায়দরাবাদ ম্যাচ। এই টিমেই না সেই লোকটি খেলেন, যাঁকে দিয়ে তাঁর ভারতীয় দলের জায়গাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে— শিখর ধবন। ব্যক্তিগত যুদ্ধে জেতার ব্যাপার আছে। দুই, এটা হারলে দলগত বিদায়। কেউ মনেই রাখবে না চলতি মরসুমটা কী চমকপ্রদ ভাবে তাঁর আর রবিন উথাপ্পার ওপেনিং পার্টনারশিপে শুরু করেছিল।
বৃষ্টি যদি বা না হয়, কোনও একটা টিমের তো কালই বিদায় নেওয়া অনিবার্য। কেকেআরে কোনও ডে’ভিলিয়ার্স নেই। কোহালিও না। এখানে খেলে মূলত দলগত কম্বিনেশন। মধ্যরাতেরও পরে আইটিসি মৌর্য-তে ফিরে সেই দল অবশ্যই সানাই শুনতে চাইবে। দুর্যোগের মর্মান্তিক যন্ত্রণাবিদ্ধ হতে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy