Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Pink Ball Test

রাতে দেখতে সুবিধা, জেল্লা থাকে অনেকক্ষণ, গতি-বাউন্স বেশি, অনেকটাই আলাদা গোলাপি বল

গোলাপি বল যাতে ঝকঝক করে তার জন্য হাতে বোনার পর এতে বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ দেওয়া হয়। বল শুকিয়ে যাওয়ার পর করা হয় পালিশ। তার জন্য যুক্ত হয় আলাদা স্তর।

গোলাপি বলে টেস্ট নিয়ে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে ক্রিকেটমহলে। ফাইল চিত্র।

গোলাপি বলে টেস্ট নিয়ে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে ক্রিকেটমহলে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১২:১৩
Share: Save:

কাউন্টডাউন প্রায় শেষ। শুক্রবার থেকে ইডেনে শুরু গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট। যা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে। ভারত বনাম বাংলাদেশের এই টেস্টের টিকিটের জন্য হাহাকার ময়দান জুড়ে।

টেস্ট খেলা হয় লাল বলে। আগে একদিনের ক্রিকেটেও হত লাল বল। ওভারের ক্রিকেট এখন যদিও সাদা বলে খেলা হয়। টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন ভাবে আকর্ষণীয় করার জন্যই আবির্ভাব গোলাপি বলের। শুধু দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে রাতেও টেস্ট খেলার প্রয়োজনীয়তাই জন্ম দিয়েছে এই বলকে। রাতের বেলা দেখার সুবিধাই এই বলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গিয়েছে লাল ও কমলা বল দিনের বেলায় দেখার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। কিন্তু রাতের বেলায় লাল ও কমলা বলের রং পাল্টে যায়। ফলে ব্যাটসম্যান বল দেখতে সমস্যায় পড়েন। সাদা বল আবার রাতে দেখার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হলেও পরের দিকে সুইং করে না। সেই কারণেই এখন একদিনের ক্রিকেটে দুই প্রান্ত থেকেই নতুন সাদা বল ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন: গোলাপি বলে প্র্যাকটিসের ফাঁকেই জয়সূর্যর বোলির অ্যাকশন নকল অশ্বিনের, দেখুন ভিডিয়ো

গোলাপি বল এই দুই সমস্যারই সমাধান হয়ে উঠেছে। এটাতে রাতে দেখার সমস্যা নেই। আবার বল টিকেও থাকে দীর্ঘক্ষণ। টেস্টে যেমন ৮০ ওভারের পর বল পাল্টানোর নিয়ম রয়েছে। গোলাপি বল সেই শর্ত পূরণ করছে। গোলাপি বল যাতে ঝকঝক করে তার জন্য হাতে বোনার পর এতে বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ দেওয়া হয়। বল শুকিয়ে যাওয়ার পর করা হয় পালিশ। তার জন্য যুক্ত হয় আলাদা স্তর।

গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ

পালিশের ফলে গোলাপি বলে আসা জেল্লা সাহায্য করে সুইংয়ে। আবার বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ থাকার জন্য লাল বলের তুলনায় এটা বেশি সময় টিকে থাকে। অনেক দেরিতে পুরনো হয়। লাল ও সাদা বলের তুলনায় গোলাপি বলে এই বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ মোটা। ওই দুই বলের থেকে এটাতেই ফারাক গোলাপি বলে। বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ কম বলে লাল বলের জেল্লা স্থায়ী হয় এক ঘণ্টা বা তার সামান্য বেশি। কিন্তু গোলাপি বলে তা ৩০ ওভার বা একটা পুরো সেশন স্থায়ী হয়। যার ফলে জোরে বোলারদের সুবিধা হয়।

লাল বলের থেকে দ্বিগুণ সময় লাগে এই বল তৈরিতে। একটা গোলাপি বল তৈরি করতে প্রয়োজন হয় সাত থেকে আট দিন। গোলাপি বল তৈরি হয় অন্য রংয়ের চামড়া শুকিয়ে তার উপর রং করে। বিশেষ ধাতুর স্তর বা ‘ল্যাকার’ দিয়েও গোলাপি করা হয়। যে হেতু গোলাপি চামড়া পাওয়া যায় না, তাই বলে এই ভাবে আনা হয় গোলাপি রং। বলের চূড়ান্ত সেলাইয়ের আগে একবার রং করা হয়। আবার একই রং করা হয় সেলাইয়ের পর। বাড়তি রং করার ফলে কখনও কখনও গোলাপি বলকে কমলার মতোও লাগে। ইনদওরে ভারতীয় দলের অনুশীলনে যেমন অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন সমস্যায় পড়েছিলেন বলের রং বুঝতে।

লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলের সিম বা সেলাই আবার বেশি চওড়া। ফলে বাড়তি বাউন্স হয়। সুইংও পান বোলাররা। সিম ও অতিরিক্ত রংয়ের স্তর থাকার ফলে লাল বলের চেয়ে গতি-বাউন্সে সমস্যায় পড়েন ব্যাটসম্যানরা। তবে গোলাপি বল পুরোটাই যে বোলারদের সহায়ক, এমন নয়। কারণ, এই বলে রিভার্স সুইং করা মুশকিল। ভারতীয় বোলাররা ১৫-২০ ওভারের পরই লাল বলে রিভার্স করাতে থাকেন। বলের একটা দিক ভারি রেখে অন্য দিকেটা রাফ করার চেষ্টা চলে রিভার্স সুইং করার লক্ষ্যে। মহম্মদ শামি সেই বলেই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। কিন্তু গোলাপি বলে তা করা মুশকিল।

এখনও পর্যন্ত হওয়া ১১ গোলাপি বলের টেস্টে পেসাররা নিয়েছেন ২৫৭ উইকেট। স্পিনাররা নিয়েছেন ৯৫ উইকেট। তবে ইডেনে খেলা হবে এসজি-র বানানো গোলাপি বলে। কোকাবুরা ও ডিউক বলের তুলনায় যার সিম একটু বেশি উঠে থাকা। ফলে স্পিনারদের জন্যও বাড়তি সাহায্য থাকতে পারে ইডেনে। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম গোলাপি বলে টেস্ট তিন দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই টেস্টে কোনও দলই আড়াইশো পার করতে পারেনি। ইডেনে কী হবে, দেখার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

আরও পড়ুন: ইডেনে শিশিরের মোকাবিলা করতে শামিদের মহড়ায় হয়তো ভিজে বল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE