প্রিয়ঙ্কাকে কোলে তুলে নিয়ে দোলালেন হৃতিক। দর্শক অভিষেক। রবিবার, আইএসএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
শেষ মুহূর্তে বিপত্তি এড়াল কলকাতা! ঝড়বৃষ্টি দূরে রেখেই শুরু হল ইন্ডিয়ান সুপার লিগ।
বঙ্গোপসাগরে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ দানা বাঁধার পর থেকেই একটা আশঙ্কার বাতাবরণ ঘিরে ধরেছিল কলকাতাকে। ঝড় কলকাতায় আসবে কি না, স্কুল-কলেজ ছুটি দেওয়া হবে কি নাতা জানতে শনিবার দিনভর ফোন এসেছে সংবাদপত্রের দফতরে। ঝড় যে এ দিকে আসবে না, তা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। কিন্তু রবিবার দিনভর দফায় দফায় বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল।
সেই পূর্বাভাস নিয়েই সরগরম ছিল পথঘাট। রবিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ভারতীয় ফুটবলের নতুন অধ্যায়, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এর তারকাখচিত উদ্বোধন বৃষ্টিতে ভেস্তে যাবে কি না, তা নিয়েও দানা বেঁধেছিল আশঙ্কা। তার কিছুটা ভিত্তি ছিল শনিবার রাতের আবহাওয়াতেও। সন্ধ্যা থেকেই মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি হয়েছে এ দিন সকালেও। বেলা গড়াতেই বদলে যায় ছবিটা। আকাশে মেঘ থাকলেও বরুণদেব মুখ ফিরিয়েই ছিলেন।
এ দিন বিকেলে সূচনা হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ফুটবলের নতুন অধ্যায়ের। তার উদ্বোধনেই হাজির ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, সচিন তেন্ডুলকর, মুকেশ অম্বানি, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, রণবীর কপূর-সহ ক্রীড়া, বিনোদন, শিল্প জগতের নামী ব্যক্তিত্বরা। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও। পুরো অনুষ্ঠানটি হয়েছে খোলা মাঠে। এমন অনুষ্ঠানের আগে বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে কিছুটা সতর্ক ছিলেন বিধাননগর পুরসভার কর্তারা। জমা জল সরাতে বা উপড়ে পড়া গাছ কাটতে তৈরি ছিল বাহিনী। কিন্তু তাদের কাজে লাগানোর পরিস্থিতিটাই তৈরি হয়নি।
কী ভাবে মিলল এই রেহাই?
আবহবিদেরা বলছেন, বিশাখাপত্তনমের উত্তর দিক দিয়ে স্থলভূমিতে ঢোকার কথা ছিল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের। কিন্তু শেষ সময়ে তার গতিপথে কিছুটা বদল ঘটে। এ দিন বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ দিক দিয়ে স্থলভূমিতে ঢোকে হুদহুদ। “বিশাখাপত্তনমের উত্তর দিকে পশ্চিমবঙ্গ। ফলে সে দিক দিয়ে ঢুকলে এ রাজ্যে বেশি প্রভাব পড়ত। বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ দিক ঘেঁষে ঢোকায় প্রভাব কম পড়েছে। তাই বৃষ্টিও তেমন হয়নি।”মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, শুধু বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ দিক দিয়ে ঢোকাই নয়, স্থলভূমিতে ঢুকে হুদহুদের দ্রুত শক্তি ক্ষয়ও কলকাতাকে বিপত্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ দিন দুপুরে অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত পাঁচ দিন ধরে ক্রমাগত শক্তি বাড়িয়ে চলা হুদহুদের যে এমন পরিণতি হবে, তা ভাবেননি তাঁরাও। বিজ্ঞানীদের ধারণা, রবিবার উপকূলে আছড়ে পড়ার পরে ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই অন্ধ্রপ্রদেশ ও সংলগ্ন ছত্তীসগঢ়ে থাকবে হুদহুদ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, সোমবার দুপুরে শক্তি খুইয়ে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে।
আপাতত কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা অবশ্য রয়েছে। তবে আইসিএল-এর আমেজে শহরের হুল্লোড়ের মেজাজ তাতে স্যাঁতসেঁতে হওয়ার লক্ষণ নেই।
এ দিন সন্ধ্যায় সল্টলেক স্টেডিয়ামের আশপাশের ব্যস্ততার ছবিটা অন্তত তেমনই বার্তা দিল। আইসিএল-এর উদ্বোধনের পরে আটলেটিকো দে কলকাতা বনাম মুম্বই সিটি এফসি-র ম্যাচ নিয়েও উৎসাহের খামতি ছিল না শহরে। টিকিটের পয়সা উসুল করতে গাড়িতে ছয়লাপ স্টেডিয়াম লাগোয়া এলাকা। ম্যাচ শেষে ট্র্যাফিকের বহরও নেহাত কম ছিল না।
সল্টলেক হয়েই ধর্মতলায় অপেক্ষারত দাদার কাছে আসছিলেন বাগুইআটির অরণি মুখোপাধ্যায়। দেরি হচ্ছে দেখে দাদাকে এসএমএস করলেন, “৪০ মিনিট গাড়ি নড়েনি। এই হল ফুটবল-পাগল কলকাতা!”
হুদহুদ নিয়ে দুশ্চিন্তা তখন উধাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy