Advertisement
E-Paper

খিদ্দা ও খেলোয়াড় ওঁরা নিজেরাই

ফাইট কোনি ফাইট, ফাইট— বলার মতো কোনও খিদ্দা নেই ওঁদের। বাড়ি থেকে দূরে পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে মেসবাড়ির একলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে। তখন নিজেরাই নিজেদের বলেন, ‘‘ফাইট রূপসানা ফাইট, ফাইট অনন্যা ফাইট...!

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫১
অনুশীলনে ব্যস্ত অন্বেষা দাস। বহরমপুর স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র

অনুশীলনে ব্যস্ত অন্বেষা দাস। বহরমপুর স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র

ফাইট কোনি ফাইট, ফাইট— বলার মতো কোনও খিদ্দা নেই ওঁদের। বাড়ি থেকে দূরে পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে মেসবাড়ির একলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে। তখন নিজেরাই নিজেদের বলেন, ‘‘ফাইট রূপসানা ফাইট, ফাইট অনন্যা ফাইট...!

ওঁরা মানে সাগরদিঘির হড়হড়ি পঞ্চায়েতের বয়াড়ের রূপসানা খাতুন এবং বহরমপুরের বাজারপাড়ার অনন্যা হালদার। এক জন পেস বোলার, অন্য জন অফ স্পিনার। দু’জনেই ক্রিকেটের টানে বাড়ি ছেড়েছেন। দমদমের একটি মেসবাড়িতে থাকেন তাঁরা। বাংলা মহিলা ক্রিকেট দলের ট্রায়ালে সুযোগ পেলেও চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকেনি। কিন্তু ভেঙে পড়েননি তাঁরা। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের জার্সি পরে মাঠে নামার স্বপ্ন বুনছেন যাঁরা, তাঁদের কাছে বাংলা মহিলা ক্রিকেট দলও যা, পুদুচেরি বা নাগাল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলও তাই! বাংলা ছেড়ে রূপসানা নাগাল্যান্ড রাজ্য মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন, অনন্যা খেলছেন নাগাল্যান্ড রাজ্য মহিলা অনূর্ধ্ব ১৯ বছর বয়সী দলের হয়ে। কিন্তু কোনও আফসোস নেই তাঁদের। বলছেন, ‘‘কী আর করা যাবে বলুন তো! রাজ্য মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার সুযোগের অপেক্ষায় তো বসে থাকা যায় না! আমাদের স্বপ্ন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে নামা।’’

রূপসানা বলছেন, ‘‘আমি তখন নবম শ্রেণি। খুব সকালে বাড়ি থেকে সাইকেলে জাতীয় সড়ক মোড়ে পৌঁছাতাম। সেখান থেকে বাসে দেড় ঘণ্টা পথ পেরিয়ে বহরমপুরে সকাল ৯টার আগে পৌঁছে যেতাম।’’ বহরমপুর এফইউসি মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন চলত বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বছর খানেক সেখানে ক্রিকেট অনুশীলনের পরে ২০১৫ সালে কলকাতা চলে আসেন ক্রিকেটের টানে। মুসলিম পরিবারের মেয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য কলকাতায় গিয়ে একা থাকা নিয়ে বাবা-মা থেকে দাদা-দিদি কেউ কোনও আপত্তি তোলেনি। কিন্তু আত্মীয়-পরিজন মানতে পারেননি। বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিতেও কসুর করেননি তাঁরা। কিন্তু রূপসানা তখন একবগ্গা! ২২ গজের পিচকে পাখির চোখ করেছেন তিনি। রূপসানা বলছেন, ‘‘দমদমে একটি মেসে থাকতে শুরু করি। সপ্তাহে চার দিন কখনও মেট্রো ও কখনও ট্রেনে চেপে কালীঘাট বা শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে অটো-বাসে করে ক্লাবে যাতায়াত করি।’’

অন্যন্যার বাবার একটা ছোট্ট চায়ের দোকান আছে। ওই আয়ে চার জনের সংসার চলে। ক্রিকেটের জন্য ২০১৫ সালে কলকাতায় থাকতে শুরু করেন অনন্যা। তিনি জানান, কলকাতায় পাঠানোর আগে মা সোনার গয়না বিক্রি করেছিলেন। পুদুচেরি যাওয়ার আগে ব্যাট দরকার ছিল। ফের কানের একটি দুল বিক্রি করে মা ব্যাট কিনে দিয়েছেন তাঁকে। এছাড়া নিয়মিত হোটেলে বা মেসে খাওয়ার খরচ বাড়ি থেকে পাঠাতে পারে না বলে কলকাতায় তিনি নিজে রান্না করে খান। কখনও কখনও এমন হয়েছে রান্না করার সময় পাননি বলে না খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করেছেন। তবু লড়াই থেকে সরে আসেননি। তাঁদের লড়াইয়ের সাক্ষী ঘামে ভেজা সবুজ ঘাস।

Cricket Cricketers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy