Advertisement
E-Paper

এশীয় প্রতিযোগিতায় সফল পাওয়ার লিফটার

এক-আধ দিনের রুটিন নয়। দিনের পর দিন এমন  রুটিনেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন বীথিকা মণ্ডল। আর সেই পরিশ্রমের ফসল হিসাবে সম্প্রতি কেরলে শেষ হওয়া এশীয় পাওয়ার লিফটিং প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে রুপো জিতেছেন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩০
বীথিকা মণ্ডল

বীথিকা মণ্ডল

তখনও ভোরের আলো ফোটে না। ঘুম থেকে উঠে পড়েন বছর পঁচিশের তরুণী। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বনগাঁ স্টেশনের দিকে। বাড়ি থেকে সাইকেলে স্টেশন যেতে সময় লাগে মিনিট পঁচিশ। সেখানে সাইকেল রেখে উঠে পড়েন ট্রেনে। দমদম নেমে মেট্রো ধরে পৌঁছে যান কালীঘাট এলাকায় সূর্য সঙ্ঘ ক্লাবে। সেখানে ঘণ্টা তিনেক হাড়ভাঙা প্রশিক্ষণের পরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ফেরেন বাড়িতে।

এক-আধ দিনের রুটিন নয়। দিনের পর দিন এমন রুটিনেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন বীথিকা মণ্ডল। আর সেই পরিশ্রমের ফসল হিসাবে সম্প্রতি কেরলে শেষ হওয়া এশীয় পাওয়ার লিফটিং প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে রুপো জিতেছেন।

বীথিকার বাড়ি বনগাঁর খেদাপাড়ায়। বাড়ি সামনেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। উঠোনের পাশে কাঁটাতার। বিএসএফ জওয়ানদের নজরদারি চলে সারা বছর।

এশিয়ান পাওয়ার লিফটিং ফেডারেশনের পরিচালনায় ডিসেম্বরের ৪-৯ কেরলে হয়ে গেল আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতা। সেখানে বীথিকা ৭২ কেজি বিভাগে নেমে দ্বিতীয় হয়েছেন।

বাবা কৃষ্ণপদবাবু ভাগ চাষি। মা শিবাণীদেবী মেয়ে দায়িত্ব সামলান। তাঁদের প্রেরণাতেই এগিয়ে চলেছেন, জানান বীথিকা। সম্প্রতি বাড়িতে ইটের গাঁথনি হয়েছে। তবে ছাদ ঢালাই বাকি। উপরে টিন। বীথিকারা চার বোন। তিনজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বীথিকা।

কী ভাবে পাওয়ার লিফটিংয়ে আসা প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েটির?

বীথিকা জানালেন, ছোটবেলায় স্কুলে কবাডি খেলতেন। সেখানে ওয়েট ট্রেনিং করতে করতে ওয়েট লিফটিং এ আসা। ২০১২ সালে সাইতে ওয়েট লিফটিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। পরিচয় হয় প্রশিক্ষক নৃপেন্দ্র নারায়ণের সঙ্গে। তারপরে বদলে যায় তাঁর খেলোয়াড় জীবন। বীথিকা বলেন, ‘‘নৃপেনবাবুর কথা মতো আমি ওয়েট লিফটিং ছেড়ে পাওয়ার লিফটিং শুরু করি। ওঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিই। জুনিয়র ও সিনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতাতেও পদক পয়েছি।’’

সাফল্যের পরেও অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টায়নি এতটুকু। ভোর রাতে ছাতু খেয়ে কালীঘাটে প্রশিক্ষণ নিতে ছোটেন। আসা-যাওয়া মিলিয়ে কেটে যায় সাত ঘণ্টা। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন বিথীকা।

ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাতে ফেরার জন্য এলাকায় কটূ কথা শুনতে হয়। শিবাণীদেবী বললেন, ‘‘অনেকে ওকে নিয়ে সন্দেহ করে। এত রাতে ফেরে, এত ভোরে বেরোয়। লোকে নানা কথা বলে।’’ বীথিকা বললেন, ‘‘আমার স্বপ্ন, বিশ্বমিটে দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জয় করা। আর যত দিন তা না হচ্ছে, চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’ চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তরুণীর। তাঁর আপেক্ষ, ‘‘গ্রামের মানুষ জানেনই না আমি খেলাধূলা করি। বুঝতেও চান না।’’

একটি চাকরি পেলে কলকাতায় থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছে তাঁর। তবে যত দিন না তা হচ্ছে বনগাঁর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে চলবে সাহসী মেয়ের লড়াই।

Weightlifting Bithika Mondal Silver বীথিকা মণ্ডল Asian Championship
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy