Advertisement
E-Paper

রালতে গোল করে, করিয়ে ম্যাচের নায়ক

আমনা ও রালতে গত মরসুমে ছিল আইজল এফসি-তে। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই যুগলবন্দি। এ বার ইস্টবেঙ্গলও তার সুফল পাচ্ছে। চলতি লিগে এই নিয়ে তিনটি গোল হয়ে গেল রালতের।

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৬

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের লালডানমাওয়াইয়া রালতের খেলা দেখতে দেখতে আমার অমিত দাসের কথা মনে পড়ছিল!

১৯৯৭ সাল। আমি তখন মোহনবাগানে। অমল দত্তর কোচিংয়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলছি আমরা। ডায়মন্ড সিস্টেম সফল হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল চিমা ওকোরি-র। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালেই বিপর্যয়। ১-৪ গোলে হেরে গেল মোহনবাগান। কারণ, ম্যাচের শুরু থেকেই পিকে স্যার (প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়) চিমাকে খেলতে দেননি। কিন্তু পরের ডার্বিতেই আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। সে দিনও চিমা-কে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। তা সত্ত্বেও আমরা জিতেছিলাম শুধু মাত্র অমিতের জন্য। চিমার অভাবটা ও একাই পূরণ করে দিয়েছিল। শিলিগুড়ির ডার্বিতে একই ভাবে মহম্মদ আল আমনার অভাব পূরণ করল রালতে। ও-ই ইস্টবেঙ্গলের টানা আট বার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জয়ের নায়ক।

এই লিগেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের প্রধান ফুটবলার আমনা। ঠান্ডা মাথায় মাঝমাঠ থেকে পুরো দলটাকে পরিচালনা করে। আমার প্রাক্তন সতীর্থ এবং মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও এ দিন লাল-হলুদ মিডিওকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি নিয়েই নেমেছিল। তবে রালতের কথা সম্ভবত ও ভুলে গিয়েছিল। ভাবতে পারেনি, আমনার শূন্যস্থান পূরণ করবে রালতে। তাই লাল-হলুদ উইঙ্গারকে আটকানোর বিশেষ কোনও পরিকল্পনা চোখে পড়ল না মোহনবাগান ফুটবলারদের মধ্যে। এই সুযোগটা রালতে দুর্দান্ত ভাবে গত এক বছর ধরেই অবশ্য কাজে লাগাচ্ছে।

আমনা ও রালতে গত মরসুমে ছিল আইজল এফসি-তে। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই যুগলবন্দি। এ বার ইস্টবেঙ্গলও তার সুফল পাচ্ছে। চলতি লিগে এই নিয়ে তিনটি গোল হয়ে গেল রালতের। তার কারণ, ও মিডফিল্ডার হলেও গোল করার জন্য ছটফট করে। দ্বিতীয়ত, হঠাৎ গতি বাড়িয়ে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে যাওয়ার দক্ষতা।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে রালতের গোলটার কথাই মনে করুন। মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা উইলিস প্লাজা ও আমনাকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল বক্সের মধ্যে। রালতে যে নিঃশব্দে উঠে এসেছে, সেটা কেউ খেয়ালই করল না। বিনা বাধায় গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনল রালতে।

এই গোলটাই রবিবাসরীয় ডার্বির টার্নিং পয়েন্ট বলে আমি করি। ম্যাচের শুরুতেই ডিফেন্সের ভুলে গোল খেয়ে রীতিমতো চাপে ইস্টবেঙ্গল। বিরতির আগে গোল শোধ করতে না পারলে এই চাপটা আরও বাড়ত। কারণ, দ্বিতীয়ার্ধে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামত মোহনবাগান। বিরতির দু’মিনিট আগে গোল করে সবুজ-মেরুন শিবিরে বড় ধাক্কা দিল রালতে। ১-২ পিছিয়ে পড়ার পর আমনার গোলে দ্বিতীয় বার ঘুরে দাঁড়ানোর নেপথ্যেও রালতে। ওকে ফাউল করার জন্যই তো পেনাল্টি
পেল ইস্টবেঙ্গল।

আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণও খুব ভাল সামলায় রালতে। ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য ভাল সনি নর্দে বা কাতসুমি ইউসা-র মতো ফুটবলার ছিল না মোহনবাগানে। লাল-হলুদ রক্ষণের যা হাল দেখলাম, তাতে ওরা থাকলে চার-পাঁচ গোলে হারের লজ্জা নিয়ে হয়তো মাঠ ছাড়তে হতো। রালতে-কে দেখলাম, বারবারই রক্ষণে নেমে এসে ডিফেন্ডারদের সাহায্য করতে।

ইস্টবেঙ্গলের নতুন তারকার আরও একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে, চাপমুক্ত হয়ে খেলার ক্ষমতা। মিজোরামের ছেলে বলেই হয়তো ওর মধ্যে ডার্বি নিয়ে আলাদা কোনও অনুভূতি নেই। ওর কাছে এটা বাকি ম্যাচগুলোর মতোই।

আমার প্রথম ডার্বির কথা এখনও ভুলতে পারিনি। টানেল থেকে বেরোতেই শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এই অভিজ্ঞতা শুধু একা আমার হয়নি। সমস্ত বাঙালি ফুটবলারেরই হয়েছে। আমরা বড় হয়েছি ডার্বির উত্তেজনার আবহে। রালতেদের সেই সমস্যা নেই। এটা অবশ্য দলের পক্ষে ভাল। ও যদি ভয় পেয়ে যেত, তা হলে খেতাবও হাতছাড়া হয়ে যেত ইস্টবেঙ্গলের।

রালতেই ত্রাতা। রালতেই নায়ক।

Mohun Bagan v East Bengal Football Laldanmawia Ralte East Bengal Calcutta Football League CFL 2017
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy