Advertisement
E-Paper

‘বিশ্বসেরা হতে পারে হার্দিক’

কে ভুলতে পারবে ইডেনের প্রাণবন্ত পিচে তাঁর সেই স্মরণীয় টেস্ট অভিষেক। ৬৪ রানে ৮ উইকেট নিয়ে একাই উড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে তাঁর বেসবলের কায়দায় ঝোড়ো ব্যাটিং–ই বা ভোলা যাবে কী করে! এখন তিনি জিম্বাবোয়ের ব্যাটিং কোচ। নিজের সময়ে অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার লান্স ক্লুজনার কথা বললেন ভারতের নতুন তারকা এবং উঠতি অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য-কে নিয়ে। বিশেষ করে হার্দিকের কেপ টাউনের ইনিংস দেখে মুগ্ধ তিনি। তুলে দেওয়া হল মোবাইল ফোনে নেওয়া সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ।জের সময়ে অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার লান্স ক্লুজনার কথা বললেন ভারতের নতুন তারকা এবং উঠতি অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য-কে নিয়ে। বিশেষ করে হার্দিকের কেপ টাউনের ইনিংস দেখে মুগ্ধ তিনি।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৬
আগ্রাসী: অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য এখন সব ফর্ম্যাটেই ভরসা জোগাচ্ছেন বিরাট কোহালির ভারতকে। ফাইল চিত্র

আগ্রাসী: অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য এখন সব ফর্ম্যাটেই ভরসা জোগাচ্ছেন বিরাট কোহালির ভারতকে। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: কেপ টাউনে হার্দিক পাণ্ড্য-র ইনিংসটা কি দেখতে পারলেন?

লান্স ক্লুজনার: অবশ্যই দেখেছি। দারুণ ইনিংস। আমার তো মনে হয়েছিল, খেলার রংটাই বোধ হয় পাল্টে দিল পাণ্ড্য। তখনকার মতো সত্যিই মনে হয়েছিল, ওর ইনিংসটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যেতে পারে।

প্র: আপনি নিজে অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। হার্দিক কি বড় অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে পারেন?

ক্লুজনার: এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই আমার মনে। সেরা হওয়ার দক্ষতা আছে ওর মধ্যে এবং আমি মনে করি, হার্দিক সেটা করেও দেখাবে। মানসিক ভাবে ও কতটা শক্তিশালী, সেটা কেপ টাউনেই দেখিয়ে দিয়েছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে, অলরাউন্ডার হওয়ার চ্যালেঞ্জটা দু’ হাতে লুফে নিয়েছে। হার্দিক আসায় ভারতীয় দলের ভারসাম্যটাই অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন বিরাটদের সামনে অনেক রকম বিকল্প রয়েছে। এক জন সত্যিকারের অলরাউন্ডার থাকা মানে যে কোনও ফর্ম্যাটেই তার টিম বাড়তি সুবিধে পাবে। আর ব্যাট হাতে যে রকম প্রতিভা দেখাচ্ছে হার্দিক, সেটা যদি বল হাতেও দেখাতে পারে, আগামী দু’এক বছরের মধ্যেই অনেক দূর চলে যেতে পারে ও।

প্র: হার্দিকের কোন জিনিসটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে?

ক্লুজনার: আমি ওর ব্যাটিংটা খুব উপভোগ করছি। খুব ইতিবাচক একটা ভঙ্গি আছে ওর। আর অভিনবত্বও দেখাচ্ছে। মাথাটাও ভাল। ঠিক বোঝে যে, রান করতে গেলে ওকে কী করতে হবে। গেম রিডিং খুব ভাল। স্নায়ুকেও ঠান্ডা রাখতে পারে। আমি এখন থেকেই ওর মধ্যে নেতৃত্বের গুণ দেখতে পাচ্ছি। এত সব সিনিয়র এবং তারকা ক্রিকেটার রয়েছে ওর আশেপাশে। কিন্তু মাঠে দাঁড়িয়ে হার্দিক-কে আমি কখনও বিন্দুমাত্র অস্বস্তিতে দেখি না। খুব সহজ, স্বাভাবিক ভাবে সিনিয়রদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অন্যদের পরামর্শ দিতেও এগিয়ে আসছে। এটাই প্রমাণ করে পরিস্থিতির উপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই বয়সেই। যত পরিণত হবে, তত ওর দাপট বাড়বে।

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের জন্য তৈরি দল: দ্রাবিড়

প্র: আজকের ক্রিকেটে ভাল অলরাউন্ডার বলতে কী বোঝাবে? হার্দিককে প্রকৃত অলরাউন্ডার হতে গেলে কোথায় উন্নতি করতে হবে?

ক্লুজনার: আমি ওর ব্যাটিং নিয়ে খুবই খুশি। তবে হ্যাঁ, টেস্টে ব্যাটিং করার সময় ওকে কিন্তু রক্ষণটাকেও আরও মজবুত করতে হবে। বোলারকে পাল্টা আক্রমণ করার ব্যাপারে দারুণ দক্ষ হার্দিক। কিন্তু সময়-সময় প্রতিপক্ষ বোলার আক্রমণ করলে তো ডিফেন্ডও করতে হবে। সব সময় তো পাল্টা আক্রমণ করা যায় না। আর বোলার হার্দিক-কে আমার পরামর্শ, আরও একটু গতি বাড়াও। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ওই বাড়তি গতিই অনেক তফাত করে দিতে পারে। সেটা করতে ওর কোনও অসুবিধেই হওয়া উচিত নয়। অল্প বয়স ওর। এখন ক্রিকেটারেরা জিমে প্রচুর সময় কাটায়। একটু পরিশ্রম করলেই বাড়তি গতি বোলিংয়ে যোগ করতে পারবে ও। তা হলে দেখবে বাকিদের ছাপিয়ে ও অনেক উপরে উঠে গিয়েছে। ব্যাট হাতে চল্লিশ, বোলার হিসেবে পঁচিশের কাছাকাছি যদি গড় রাখতে পারে তা হলে অলরাউন্ডার হিসেবে দারুণ করছে বলতে হবে।

প্র: প্রকৃত অলরাউন্ডার কে, এটা বুঝব কী করে? কোনও সংজ্ঞা আছে?

ক্লুজনার: ধরুন, ব্যাট করতে পারছে না সেই ক্রিকেটার। কিন্তু বোলার হিসেবেই টিমে চলে আসছে। অথবা উল্টোটা। বল করতে পারছে না কিন্তু ব্যাট করে দিতে পারবে। যদি তাকে যে কোনও একটা বিভাগের জোরে প্রথম একাদশে নেওয়া সম্ভব হয়, তবে সেই প্রকৃত অলরাউন্ডার। আমার কাছে সংজ্ঞাটা সে রকমই।

প্র: যদি উদাহরণ নিতে হয়?

ক্লুজনার: সাম্প্রতিককালের মধ্যে সেরা উদাহরণ জাক কালিস। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে আসতে পারত, জায়গা পেত শুধু বোলার হিসেবেও। জাকের মতো প্রতিভা বারবার আসবে না। কিন্তু ওই ঘরানার হয়ে ওঠারই টার্গেট নেওয়া উচিত অলরাউন্ডারদের।

প্র: একটা জিনিস দেখে খটকা লাগে। এই টি-টোয়েন্টির যুগেও কেন প্রকৃত অলরাউন্ডার তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না? একমাত্র আছেন বোধ হয় বেন স্টোকস।

ক্লুজনার: অলরাউন্ডার জিনিসটাও তো খুব কমন নয়। এক সঙ্গে দু’টো দিকে সমান দক্ষ হওয়ার লক্ষ্যটাই হয়তো অনেকে নেয় না। আমাদের সময়ে যেমন এক সঙ্গে অনেক অলরাউন্ডার এসেছিল। আর একটা ব্যাপার মনে হয় যে, আমাদের সময়টার পরে অলরাউন্ডারের ব্যাখ্যাটাই বদলে গেল। তার পরের যুগে আমরা দেখলাম অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ধোনির মতো উইকেটকিপার-অলরাউন্ডার। জানি, অনেকে হয়তো অলরাউন্ডার বলতে সনাতনী সেই ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান দক্ষ ক্রিকেটারকে বোঝেন। কিন্তু যুগের হাওয়ায় কোনও কিছু যদি বদলায়, সেটাকেই বা কী ভাবে অস্বীকার করা যায়। কিন্তু যদি প্রকৃত ব্যাটিং-বোলিং অলরাউন্ডার খোঁজেন, তা হলে খুব একটা আসেনি এর মধ্যে। সবচেয়ে বেশি করে অলরাউন্ডারের অভাব বোধ করেছে ভারত। সেই কারণে হার্দিক পাণ্ড্য-র আবির্ভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্র: ১৯৯৯ বিশ্বকাপে যাঁর অলরাউন্ড দক্ষতা সর্বকালের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স হয়ে আছে, তিনি হার্দিক-কে কী পরামর্শ দেবেন?

ক্লুজনার: মাথা ঠান্ডা রেখে যা করছো করে যাও। বুঝতেই পারছি, অনেক চাপ আসবে ওর উপর। অতীতের অনেক বড় নামের সঙ্গে তুলনা করা হবে। এ সবের চাপ নিজের মাথার উপর চড়তে দেওয়া যাবে না। আমার মনে হয়, হার্দিকের সবচেয়ে বড় সুবিধে হচ্ছে, ও একেবারে আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে দারুণ মানানসই এক চরিত্র। ক্রিকেট খেলাটা অনেক পাল্টে গিয়েছে। এখন টেস্ট যেমন খেলতে হয়, তেমনই আইপিএল বা টি-টোয়েন্টি রয়েছে। হার্দিক সব ফর্ম্যাটেই সফল হচ্ছে। যদি ও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে, যদি উন্নতির রাস্তাটা হারিয়ে না ফেলে, বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার ক্ষমতা আছে হার্দিকের।

প্র: বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বাছতে হলে কাকে বাছবেন?

ক্লুজনার: তিনটে নাম করব। বিরাট কোহালি। এ বি ডিভিলিয়ার্স। স্টিভ স্মিথ। আমি বলে নয়, যে কোনও টিমের বোলরারা এই তিনটে উইকেট নেওয়ার দিকেই এখন তাকিয়ে থাকে। বিরাটের রানের খিদেটা আমার অসাধারণ লাগে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, সমস্ত ফর্ম্যাটেই দারুণ সফল। অসম্ভব ভাল ধারাবাহিকতা। ভারতে সচিন তেন্ডুলকর বা দক্ষিণ আফ্রিকায় জাক কালিস যখন অবসর নিল, সকলে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। এ রকম নায়ক তো আর পাব না। ভারতে বিরাট এল, আমাদের দেশে এল এ বি ডিভিলিয়ার্স। এদের জন্য সমস্ত কাজ ফেলে সবাই ক্রিকেট দেখতে ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়ছে। অ্যাশেজে তেমনই স্টিভ স্মিথের মহাকাব্যিক ব্যাটিং দেখলাম। এ রকম ক্রিকেটাররাও বারবার আসবে না। তাই সকলের উচিত দু’চোখ ভরে এই তিন ব্যাটসম্যানের আস্বাদ নেওয়া। আইপিএলে আবার বিরাট-এ বি একসঙ্গে খেলে। আমি প্রত্যেক বারই ভাবি, দুই সেরা তারকা জুটি বেঁধেও আইপিএল জিততে পারছে না কেন? আবার মনে পড়ে যায় সেই কথাটাই। মহান অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট!

Hardik Pandya Lance Klusener Interview Celebrity Interview cricket Cricketer হার্দিক পাণ্ড্য লান্স ক্লুজনার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy