দুরন্ত: বিপক্ষের রক্ষণে হানা এফসি গোয়ার হর্ঘের। এফসি গোয়া
ভারতের প্রথম ক্লাব হিসেবে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অভিষেক ম্যাচেই চমক এফসি গোয়ার। বুধবার ১৯৯৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন্স ফ্রান্স দলের অন্যতম সদস্য লরা ব্লঁ-র প্রশিক্ষণাধীন কাতারের আল রায়ান এফসি-র বিরুদ্ধে ০-০ ড্র করলেন ঈশান পণ্ডিতা-রা।
সপ্তম আইএসএলে গোয়ার খেলা মন জয় করেছিল ফুটবলপ্রেমীদের। এ বার মুগ্ধ লরা ব্লঁ-ও। গোয়ার বিরুদ্ধে ড্রয়ের পরে কিংবদন্তি ফরাসি ডিফেন্ডার খোলাখুলি বলেছেন, ‘‘আমাদের জিততে না দেওয়ার কৃতিত্ব গোয়ার। ওরা অসাধারণ খেলেই আমাদের আটকে দিয়েছে।’’
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচের আগে আল রায়ানকেই এগিয়ে রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, গোয়া প্রথম বার এশিয়ার সেরা লিগে যোগ্যতা অর্জন করেছে। আল রায়ান এই নিয়ে ১২বার এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলছে। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার পর ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে দেন এদু বেদিয়া, গ্লেন মার্টিন্স-রা। দলের দুই প্রধান অস্ত্র ইগর আঙ্গুলো ও আলবের্তো নগুয়েরার অভাব বুঝতেই দেননি তাঁরা। বার্সেলোনা অ্যাকাডেমির প্রাক্তনী ৪০ বছর বয়সি গোয়ার কোচ খুয়ান ফেরান্দোর রণনীতির সামনে কোনও পরিকল্পনাই সফল হয়নি লরা ব্লঁ-র। ম্যাচের পরে অবশ্য আশ্চর্যরকম ভাবে উচ্ছ্বাসহীন খুয়ান। বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন লরা ব্লঁ-র দলের বিরুদ্ধে খেলা একেবারেই সহজ ছিল না। সবে একটা ম্যাচ হয়েছে। আরও পাঁচটি ম্যাচ বাকি রয়েছে।’’ এখানেই শেষ নয়। ফুটবলারদের তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে আমাদের কী ভাবে হারানো যায়, সেই পরিকল্পনা কিন্তু লরা ব্লঁ এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন। একটা ম্যাচ ড্র করে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। পরের ম্যাচের জন্য
মনঃসংযোগ করো।’’
আগামী শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে গোয়ার প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আল ওয়াহাদা এফসি। বুধবার রাত থেকেই মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন গোয়ার কোচ ও ফুটবলারেরা। বৃহস্পতিবার বাংলা নববর্ষের দিন গোয়ার মাঝমাঠের প্রধান ভরসা এদু বললেন, ‘‘দারুণ গর্ব হচ্ছে। চার বছর ভারতে খেলছি। এ বার সেরা ছন্দে রয়েছি।’’ অসাধারণ খেলেছেন মাঝমাঠের আর এক ভরসা হর্ঘে ওর্তিস। খেতাফের যুব দল থেকে উঠে আসা ২৮ বছর বয়সি স্পেনীয় তারকাকে আটকাতে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছিলেন আল রায়ানের ফুটবলারেরা। হর্ঘে বললেন, ‘‘কোচ আমাকে যা দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা পালন করতে পেরেছি। দলের সকলে দুর্দান্ত খেলেছে।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, ভারতীয় ক্লাবও সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার যোগ্য।’’
আইএসএলে এই মরসুমে এটিকে-মোহনবাগানের হয়ে শুরু করেছিলেন গ্লেন মার্টিন্স। প্রতিযোগিতার মাঝপথে তিনি যোগ দেন গোয়ায়। আইএসএল সেমিফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে গোল করতে না পারার যন্ত্রণা কিছুটা তিনি ভুলছেন আল রায়ানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলে। গ্লেন বলছিলেন, ‘‘কোচ আমাদের বার বার বলেছেন, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার মান খুব উঁচু। তাই মানসিক ভাবে আমরা তৈরি ছিলাম। কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পেরেছি বলে বেশি আনন্দ হচ্ছে। তবে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’’
আল রায়ানের ছন্দ নষ্ট করার মূল দায়িত্ব গ্লেনকেই দিয়েছিলেন খুয়ান। কাজটা কতটা কঠিন ছিল? গ্লেনের কথায়, ‘‘আমার কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, আমরা এ ভাবেই গত কয়েক দিন ধরে অনুশীলন করেছি। আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ খেললাম।’’ যোগ করলেন, ‘‘পরের ম্যাচেও এই ছন্দ বজায় রাখা আমাদের লক্ষ্য।’’
আল রায়ানের বিরুদ্ধে গোয়ার ড্রয়ে ফুটবলপ্রেমীরা উচ্ছ্বসিত হলেও ফুটবলারদের ক্ষোভ রয়েছে রেফারির বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে রোমিয়ো ফার্নান্দেসের শট হাতে লাগে আল রায়ানের এক ডিফেন্ডারের। গোয়ার ফুটবলারদের দাবি, নিশ্চিত পেনাল্টি ছিল। কিন্তু রেফারি দেননি। খুয়ান যদিও অতীত নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তাঁর পাখির চোখ শনিবার আল ওয়াহাদা এফসি-কে হারিয়ে মাঠ ছাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy