Advertisement
E-Paper

লিয়েন্ডারের অলিম্পিক্স স্বপ্ন রোলাঁ গারো জিতেও আজ খাদের ধারে

লিয়েন্ডার আদ্রিয়ান পেজের যুগ্ম স্বপ্নের একটা চুরচুর! দ্বিতীয় স্বপ্ন যদি বা রক্ষা পায় আপাতত খাদের পাশে গড়াচ্ছে! সপ্তম অলিম্পিক্সে নেমে বিরল বিশ্বরেকর্ডে হাত ছোঁয়াতে চেয়েছিলেন লিয়েন্ডার। চব্বিশ বছর ধরে অলিম্পিক্সের পঞ্চবলয়ের তলায় টেনিস প্লেয়ার হিসেবে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত আর নেই।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৯:৪৬

লিয়েন্ডার আদ্রিয়ান পেজের যুগ্ম স্বপ্নের একটা চুরচুর!

দ্বিতীয় স্বপ্ন যদি বা রক্ষা পায় আপাতত খাদের পাশে গড়াচ্ছে!

সপ্তম অলিম্পিক্সে নেমে বিরল বিশ্বরেকর্ডে হাত ছোঁয়াতে চেয়েছিলেন লিয়েন্ডার। চব্বিশ বছর ধরে অলিম্পিক্সের পঞ্চবলয়ের তলায় টেনিস প্লেয়ার হিসেবে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত আর নেই। সেটা যদি বা সম্ভব হয়, তাঁর দ্বিতীয় অলিম্পিক্স পদকপ্রাপ্তির স্বপ্ন আপাতত দূর দিগন্তে মিলিয়ে। আঠারোটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। যার সর্বশেষ এসেছে মাত্র সাত দিন আগে। তার পরেও কি না এমনই অন্ধকারের নীচে তিনি দাঁড়িয়ে যেন উঠতি কোনও ডেভিসকাপার!

সাধারণত অলিম্পিক্সে ভারতীয় দল নির্বাচনে যাবতীয় কেচ্ছাকেলেঙ্কারি বরাদ্দ থাকে কুস্তি, বক্সিং বা হকি টিমের জন্য। অথচ টেনিস দল নির্বাচন ঘিরে যে পরিমাণ নাটক আর কেচ্ছাকেলেঙ্কারি শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে তা নজিরবিহীন।

শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় নয়াদিল্লিতে পাঁচ সদস্যের জাতীয় নির্বাচক কমিটি রিও অলিম্পিক্সের জন্য দল বাছবে। এসপি মিশ্রের নেতৃত্বে যে কমিটিতে রয়েছেন নন্দন বল, জিশান আলি, রোহিত রাজপালরা। এঁরা এক এক জন প্রাক্তন ডেভিসকাপার। অথচ খেলোয়াড়জীবনেও বোধহয় এত চাপের মুখে পড়েননি। শনিবার এমন একটা দিন যে ক্রিকেটের দল নির্বাচনের মতো লিয়েন্ডারদের ভাগ্য নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে সীমাহীন ঔৎসুক্য আর মিডিয়ার ক্রমান্বয়ে আছড়ে পড়া।

টেনিসমহলে অনেকের মনে হচ্ছে রাজধানীর দুপুর সাড়ে বারোটা যতই কৌতূহল উদ্রেক করুক, বৈঠক পুরো নিয়মরক্ষার। টিম হয়েই গিয়েছে। সানিয়া মির্জা, রোহন বোপান্না, প্রার্থনা থাম্বে এবং এবং... লিয়েন্ডার পেজ।

সমস্যা হল টিম যদি বা আঁচ করা যাচ্ছে, কেউ বুঝতে পারছে না এমন টিম বার হলে পরের প্রতিক্রিয়া কী? ভারতীয় ক্রিকেট দল যদি তুলনা হয় সেটা মোটেই তুলনা নয়। সেখানে নির্বাচনের আগে যত বিতর্কই থাকুক, তার পরে ক্রমশ থিতিয়ে যায়। কুড়ি বছর আগে ইংল্যান্ডের নির্বাচিত দলে সৌরভকে একেবারেই চাননি আজহার। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পরে বলেননি, ও গেলে আমি যাব না।

এখানে ভারতীয় টেনিস সার্কিটে কেউ নিশ্চিত নন লিয়েন্ডার নির্বাচিত হলে বাকিদের মনোভাব কী হবে? সানিয়া মির্জা পরিষ্কার করেই দিয়েছেন, তিনি লিয়েন্ডারের সঙ্গে মিক্সড ডাবলস খেলতে চান না। একেবারে চরমপন্থী মনোভাব তাঁর। এক পা এগিয়ে সানিয়া এ দিন জাতীয় টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দিয়েছেন যে, চার বছর আগের লন্ডন অলিম্পিক্সে তিনি আর মহেশ ভূপতি সেরা জুড়ি হলেও চাপ দিয়ে তাঁদের খেলতে দেওয়া হয়নি। পড়ুন লিয়েন্ডার জোর করে আমার সঙ্গে খেলেছিল, তাই আমরা পদক পাইনি। শোনা যায়, কোর্টে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে লিয়েন্ডারের কিছু পরামর্শ পরবর্তীকালে সন্দেহজনক লেগেছিল সানিয়ার। এর আগে উইম্বলডনে সানিয়া নাকি মিক্সড ডাবলসে জুড়ি বেঁধে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, তা হলে আমাদের একটু প্র্যাকটিস হয়ে যাবে। লিয়েন্ডার সেই সময় র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক উঁচু পর্যায়ে। সানিয়াকে পাত্তাই দেননি। আজ রিওর আগে সানিয়ার দিন। পুরনো অপমান ভোলেননি এবং নিজের মারাত্মক ফোরহ্যান্ড ড্রাইভটা আছড়ে ফেলেছেন লিয়েন্ডারের ওপর। জাতীয় টেনিস সংস্থাকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পছন্দের সঙ্গী বোপান্না এবং একমাত্র বোপান্না। এমনিতেও মিক্সড ডাবলসে প্রথম ষোলো দেশোয়ালি জুড়ির মধ্যে লিয়েন্ডার-সানিয়ার যুগ্ম র‌্যাঙ্কিং পড়ে না। তাঁরা ৪৭ নম্বর। সানিয়ার এটা তাই লেখা বা প্রকাশ্য বলারও প্রয়োজন ছিল না। তবু কেন বললেন? একটাই ব্যাখ্যা, লিয়েন্ডারকে প্রকাশ্য অপদস্থ করা।

সানিয়ার সঙ্গী বোপান্না। তিনিই বা পিছিয়ে থাকেন কেন? এ দিন এআইটিএ-কে নেদারল্যান্ডস থেকে মেল করেছেন, ডাবলসে তাঁর পছন্দের পার্টনার সাকেত মিনেনি। এ ধরনের মেল গোপন থাকার কথা। অথচ বোপান্না ঘটা করে সেটা সবাইকে জানিয়েও দিয়েছেন।

বোপান্না শিবিরের হয়ে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন এক দক্ষিণ ভারতীয় টেনিস প্লেয়ার। গোটা পরিকল্পনাটা এমন যে, লিয়েন্ডারকে যদি নির্বাচিতও করা হয় আমরা হুমকি দেব তা হলে খেলব না। এঁরা আইটিএফের একটা নিয়ম উদ্ধৃত করে বলছেন যে, র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের মধ্যে থাকলে তাঁর অধিকার থাকে নিজের পছন্দের পার্টনার বাছার। বোপান্না যখন সেটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন আর নির্বাচন কমিটির কোনও ভূমিকা নেই। এই ফর্মুলা অনুযায়ী রিওর বিমানে লিয়েন্ডার চড়ছেন না। গেম, সেট অ্যান্ড ম্যাচ টু বোপান্না।

বরাবরের অসমসাহসী লিয়েন্ডার এত সহজে ছেড়ে দেবেন? কত খেলা ম্যাচ পয়েন্ট থেকে বাঁচিয়েছেন। এখানেও তাঁকে ঘিরে সমর্থনের একটা বড় স্রোত তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাতে ভারতের বিখ্যাত এক শিল্পপতি রয়েছেন। রয়েছেন বিজেপির দু’-এক জন মন্ত্রী। রয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাও।

এঁরা তুলে ধরছেন গড়পড়তা টেনিস অনুরাগীদেরই বক্তব্য যে এটা কী ধরনের নোংরা রাজনীতি? র‌্যাঙ্কিংয়ে লিয়েন্ডারের প্রায় একশোরও নীচে সাকেত। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের জন্য অলিম্পিক্স মঞ্চের তলায় জাতীয় স্বার্থকে বলি দেওয়া হবে কেন?

প্রাক্তন ডেভিস কাপ অধিনায়ক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় সাধারণ ভাবে মহেশ ভূপতি শিবিরেরই অনেক ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আর সেই জয়দীপও শুক্রবার বলছিলেন, ‘‘স্পোর্টসম্যানরা স্পোর্টসম্যানদের মতো ব্যবহার করবে এটাই দস্তুর। কোর্টের বাইরে কী হল কিছু আসে-যায় না। লিয়েন্ডার এতগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছে। ও আর বোপান্না বেস্ট টিম। সে পদক জিততে পারুক আর না পারুক। তা ছাড়া সাকেত ফিট কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি যদ্দুর জানি ওর কাঁধে চোট রয়েছে।’’

জাতীয় টেনিস শীর্ষকর্তা অনিল খন্না আপাতত প্রবল চাপের মধ্যে। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবির অবশ্য জোর দিয়ে বলছে, কোন টিম যাবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ফেডারেশন। জাতীয় ফেডারেশনের বেছে দেওয়া টিমই একমাত্র অলিম্পিক্স কমিটির কাছে বিচার্য। তাদের ইঙ্গিত অনুযায়ী, লিয়েন্ডার মিক্সডের জন্য বিবেচিত হবেন না। কিন্তু ডাবলসে থাকবেন। শুক্রবার হঠাৎ ধেয়ে আসা চাপের মুখে এআইটিএ কর্তাদের মনোভাব হচ্ছে, জোরজুলুম আর ইউনিয়নবাজি বরদাস্ত করা হবে না। শেষ সিদ্ধান্ত নেবে ফেডারেশন।

প্রশ্ন হল, সেটা ঘটলে লিয়েন্ডার বিরোধী শিবির কী ভাবে নেবে? ক্রিকেটের সঙ্গে সার্বিক তফাত হল, টেনিস প্লেয়াররা ফেডারেশন মুখাপেক্ষী নয়। দিনের শেষে তারা সেল্ফ এমপ্লয়েড প্রফেশনাল। সার্কিট থেকে টাকা রোজগার করে। অলিম্পিক্স তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, মোক্ষ নয়। বাধ্য করা হলে তারা বিদ্রোহ করবে না এমন গ্যারান্টি নেই।

রাজধানী থেকে এ দিন টেনিসমহলের এক জন বলছিলেন, ‘‘যদি বিদ্রোহ নাও করে ভাবতে পারছেন রিওর কোর্টে এমন দু’জন পাশাপাশি দাঁড়াবে যারা নিজেরাও জানে একে অপরকে প্রকাশ্যে চায়নি!’’

Olympics 2016 Leander Paes Rohan Bopanna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy