Advertisement
E-Paper

ইগরের কোচিংয়ে প্রথম দলে খেলতে মরিয়া শুভাশিস

বড় ছেলে ফুটবলার হিসেব বেশি দূর এগোতে পারেননি। খেলা ছেড়ে এখন তিনি পারিবারিক ব্যবসায় ব্যস্ত। কিন্তু ছোট ছেলে শুভাশিস বাবার স্বপ্নপূরণ করেছেন।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০৪:১৩
প্রস্তুতি: শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে ট্রেনিং শুভাশিসের। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে ট্রেনিং শুভাশিসের। নিজস্ব চিত্র

শৈশবে খেলার জন্য নয়, বরং মাঠে না গেলেই বাবার কাছে বকুনি খেতেন শুভাশিস বসু! ভারতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসার বাবা প্রদ্যোৎ বসুও ফুটবলার ছিলেন। তালতলা, পুলিশের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই স্বপ্ন দেখতেন দুই ছেলে ভারতের জার্সি গায়ে খেলবেন।

বড় ছেলে ফুটবলার হিসেব বেশি দূর এগোতে পারেননি। খেলা ছেড়ে এখন তিনি পারিবারিক ব্যবসায় ব্যস্ত। কিন্তু ছোট ছেলে শুভাশিস বাবার স্বপ্নপূরণ করেছেন। জাতীয় দলের লেফ্টব্যাক বলছিলেন, ‘‘সুভাষগ্রামে আমাদের বাড়ি। দাদাকে খেলা শেখাতে নিয়মিত মাঠে নিয়ে যেতেন বাবা। তা দেখেই ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট হই। আমার বয়স তখন চার অথবা পাঁচ। বাবা-ই আমার প্রথম কোচ। একটু বড় হওয়ার পরে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে বিধাননগর পুরসভার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন বাবা। শ্যামল ঘোষ ছিলেন আমাদের কোচ। ব্যবসা সামলে সপ্তাহে তিন দিন সুভাষগ্রাম থেকে সল্টলেকে নিয়ে যেতেন বাবা।’’

এত দূরে অনুশীলন করতে যেতে কষ্ট হত না? ‘‘যাতায়াতে অনেকটা সময় লেগে যেত। কিন্তু বাবা কখনও কষ্টটা বুঝতে দিতেন না। অনেক বাবা-মা ছেলেদের খেলতে দিতে চান না। আমি ভাগ্যবান। আমাকে কখনও খেলার জন্য বাধার সামনে পড়তে হয়নি। বাড়ির সবাই সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। বাবা শুধু রেগে যেতেন খেলতে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকলে। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে পেরে গর্বিত ,’’ বলছিলেন শুভাশিস।

বিধাননগর পুরসভার অ্যাকাডেমিতে খেলতে খেলতেই সুব্রত কাপে কোদালিয়া স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করেন শুভাশিস। তার পরে ২০১২ সালে পুণে এফসি-র অ্যাকাডেমির ট্রায়ালে নেমে নজর কেড়ে নেন। ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির কোচ রঞ্জন চৌধুরী তখন পুণের দায়িত্বে। সেই সময় মাঝমাঠে খেলতেন শুভাশিস। মিডফিল্ডার থেকে সাইডব্যাক হয়ে গেলেন কী ভাবে? বঙ্গ ডিফেন্ডারের কথায়, ‘‘শুধু মাঝমাঠ নয়, উইঙ্গার হিসেবেও খেলেছি। এক দিন পুণের অ্যাকাডেমিতে রঞ্জন স্যর ও নৌশাদ মুসা স্যর বললেন, সাইডব্যাক পজিশনে খেলে দেখতে পারো। ওঁদের পরামর্শেই পরীক্ষামূলক ভাবে খেলা শুরু করলাম। দ্রুত মানিয়ে নিলাম। তার পর থেকে সাইডব্যাক পজিশনেই খেলছি।’’

পুণের অ্যাকাডেমিতে তিন বছর খেলার পরে চার্চিল ব্রাদার্সে যোগ দেন শুভাশিস। পরের মরসুমে স্পোর্টিং ক্লুব দে গোয়ায় সই করেন। আই লিগে অভিষেক হয় তাঁর। পরের মরসুমে মোহনবাগানে। জাতীয় দলের দরজাও খুলে যায় শুভাশিসের সামনে। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমি কখনও জুনিয়র জাতীয় দলে খেলিনি। সরাসরি সিনিয়র দলে সুযোগ পাই। প্রথম ম্যাচ খেলি আন্তঃমহাদেশীয় কাপে চিনা তাইপের বিরুদ্ধে। আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।’’

অভিষেকের ম্যাচে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিপক্ষের এক ফুটবলারের সঙ্গে সংঘর্ষে নাক ফেটে রক্তাক্ত হয়েছিলেন শুভাশিস। কিন্ত মাঠ ছাড়েননি, পুরো ম্যাচ খেলেন। বলছিলেন, ‘‘দেশের হয়ে খেলার সময় অদ্ভূত একটা অনুভূতি হয়। মনে হয়, ভারতের জার্সি গায়ে এটাই আমার শেষ ম্যাচ। তাই নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে।’’ যোগ করলেন, ‘‘দেশের হয়ে যখন মাঠে নামি, তখন কোটি কোটি মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যা ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ করে।’’

মাত্র এক বছরের মধ্যে জাতীয় দলের প্রথম একাদশে শুধু জায়গা করে নেননি শুভাশিস, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁকেই অধিনায়ক নির্বাচিত করেছিলেন তৎকালীন কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। তবে ফাইনালে মলদ্বীপের কাছে হারের যন্ত্রণা এখনও কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে তাঁর মনে। ভুলতে পারছেন না এশিয়ান কাপের ব্যর্থতাও। বললেন, ‘‘সাফে ট্রফির সামনে গিয়েও খালিহাতে ফিরলাম। আর এশিয়ান কাপে ব্যর্থতার জন্য আমরা নিজেরাও দায়ী।’’

কেন? শুভাশিসের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথম ম্যাচে তাইল্যান্ডকে হারালাম। পরের ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে প্রচুর গোলের সুযোগ শুধু নষ্ট করিনি, গা ছাড়া মনোভাবও এসে গিয়েছিল আমাদের মধ্যে। দু’টো গোল খেলাম। বাহরিনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে ডুবলাম। এই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।’’

স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের সময় প্রথম একাদশে নিয়মিত ছিলেন তিনি। নতুন কোচ ইগর স্তিমাচের কোচিংয়ে কী হবে? আত্মবিশ্বাসী শুভাশিসের কথায়, ‘‘আমার কাজ মাঠে নেমে নিজেকে প্রমাণ করা। তার পরে কোচ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ শুভাশিস উচ্ছ্বসিত ইগর স্তিমাচকে নিয়েও। বললেন, ‘‘ফুটবলার ও কোচ হিসেবে দুর্দান্ত আমাদের নতুন কোচ। ডিফেন্ডার ছিলেন। ওঁর কাছ থেকে নতুন কিছু শেখাই মূল লক্ষ্য। আশা করছি ইগরের কোচিংয়ে ভারতীয় ফুটবল আরও এগোবে।’’

Football India Left Back Igor Stimac Subhashis Basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy