Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রায়ডুর আসল পরীক্ষা কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতেই

একটা ম্যাচ টাই, আর তার পরের ম্যাচটা জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াইয়ের আভাষ দিয়েছিল। কিন্তু সেটা স্ফুলিঙ্গ হয়েই নিভে গেল, দাউদাউ করে আর জ্বলল না। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাকে দেখলাম টেস্ট ম্যাচ খেলছে ওয়ান ডে ক্রিকেটের মেজাজে।

নজরে: চার নম্বর জায়গা পাকা করার দিকে রায়ডু। ফাইল চিত্র

নজরে: চার নম্বর জায়গা পাকা করার দিকে রায়ডু। ফাইল চিত্র

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

খেলার বয়স তখন ৩১.৫ ওভার। সময় বিকেল ৩.৪৫। ওই সময়ই শেষ হয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। মাত্র ১০৪ রানে।

খেলাধুলোয় বাঙালিদের আবেগের সঙ্গে দুটো নাম ভীষণ ভাবে জড়িয়ে। এক, ফুটবলে ব্রাজিল। দুই, ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বলতে আমরা সেই গ্যারি সোবার্স, ভিভিয়ান রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়ে়ড, গর্ডন গ্রিনিজ, ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, ব্র্যায়ান লারাদের ক্রিকেট বুঝে এসেছি। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটা ম্যাচে ঘণ্টা দুয়েকের বেশি ব্যাট করতে পারছে না, এটা দেখা সত্যি কষ্টের। বৃহস্পতিবারের তিরুঅনন্তপুরমে সেটাই দেখা গেল। একটা অসহায় আত্মসমর্পণের ছবি। যে ছবিতে যবনিকা পড়ল চারটে বেজে ৫৯ মিনিটে। যখন বিরাট কোহালি এবং রোহিত শর্মা মিলে ওই ক’টা রান তুলে দিলেন।

একটা ম্যাচ টাই, আর তার পরের ম্যাচটা জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াইয়ের আভাষ দিয়েছিল। কিন্তু সেটা স্ফুলিঙ্গ হয়েই নিভে গেল, দাউদাউ করে আর জ্বলল না। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাকে দেখলাম টেস্ট ম্যাচ খেলছে ওয়ান ডে ক্রিকেটের মেজাজে। আর ওয়ান ডে খেলছে টি-টোয়েন্টির মেজাজে। এ দিন শুরুতে যশপ্রীত বুমরা-ভুবনেশ্বর কুমারের দুরন্ত প্রথম স্পেলের সামনে উইকেট হারানোর পরে এমন কাউকে দেখলাম না যে ক্রিজে থেকে লড়াইটা বিপক্ষ শিবিরে নিয়ে যেতে পারেন। বুমরার দুর্দান্ত একটা ইনসুইংয়ের শিকার ক্যারিবিয়ানদের সেরা ব্যাটসম্যান শেই হোপ। যে বলটাকে আমরা ময়দানি ভাষায় বলে থাকি গোত্তা খেয়ে ভিতরে ঢুকে আসা ইনসুইং। হোপের কিছু করার ছিল না। হোপ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশাও যেন চলে গেল।

‘বিশ্বকাপ স্টেশনে’ পৌঁছনোর আগে এটা ছিল ভারতের প্রথম প্ল্যাটফর্ম। মিশন বিশ্বকাপের লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা ছিল প্রথম ধাপ। যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কাপ প্রস্তুতির নিরিখে আমি বলব, একটা নিরামিষ সিরিজ। ভারতীয় ক্রিকেটারদের বড় পরীক্ষা এখানে হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিরিজ ৩-১ জেতার পাশাপাশি কোহালিদের প্রাপ্তির ভাণ্ডারে আরও কিছু যোগ হল। যেমন অম্বাতি রায়ডু এবং খলিল আহমেদ।

ভারতীয় ক্রিকেট দুটো নাম খুঁজছে বিশ্বকাপের আগে। এক, চার নম্বর ব্যাটসম্যান। দুই, বাঁ হাতি পেসার। যুবরজার সিংহ ছিটকে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ডজন খানেক ব্যাটসম্যানকে চার নম্বরে খেলিয়ে দেখেছে ভারত। যাঁদের মধ্যে রায়ডুই বিশ্বকাপ বিমানে ওঠার সিঁড়িতে প্রায় পৌঁছে গিয়েছেন। তবে সামনে আছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। যেখানেই সম্ভবত ঠিক হয়ে যাবে ইংল্যান্ডের বোর্ডিং পাস রায়ডুর হাতে উঠবে কি না।

রায়ডুর প্রত্যাবর্তনের পিছনে রয়েছে আইপিএল। এই টি-টোয়েন্টি লিগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স থেকে চেন্নাই সুপার কিংস— হাই প্রোফাইল দলে খেলে খেলে চাপ নেওয়াটা রপ্ত করে ফেলেছেন এই ব্যাটসম্যান। রায়ডুর সব চেয়ে বড় গুণ হল বুদ্ধি করে ব্যাটটা করেন। আইপিএলে যেমন শুরু থেকেই মারতে পারেন, আবার ওয়ান ডে ক্রিকেটে দেখছি, পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের ব্যাটিংকে বদলে নেন। প্রয়োজনে শুরুর দিকে ধীরে সুস্থে খেলে পরে স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে দেন। রায়ডুর আরও একটা গুণ আছে, যেটা আইপিএলে দেখলেও ভারতের হয়ে এখনও দেখা যায়নি। সেটা হল, কঠিন পরিস্থিতিতে ম্যাচ শেষ করতে পারা। শেষ ওভারে ১৪-১৫ রান তুলে ম্যাচ বার করে দেওয়া। তবে রায়ডুর আসল পরীক্ষা হবে অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানে বাউন্সি পিচে সামলাতে হবে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের।

খলিলকেও বেশ ভাল লাগল। তিরুঅনন্তপুরমের গ্রিনফিল্ডে প্রথম স্পেলটা সে রকম ভাল করতে পারেননি। একটু ছোট বল করছিলেন। শর্ট পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসে ভাল বল করে দুটো উইকেট তুলে নিলেন। মুম্বইয়ে দেখেছিলাম, খলিল দু’দিকেই বল মুভ করাচ্ছেন। এখানে অবশ্য ততটা নয়। এক জন বাঁ হাতি পেসার যখন ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে বল ভিতরে ঢুকিয়ে আনতে পারেন, তখন তিনি বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন। খলিলকে ধারাবাহিক ভাবে এই কাজটা করতে হবে। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পরিবেশে এক জন বাঁ হাতি পেসার ভারতের খুবই দরকার। আর সেই পেসার যদি বলটা দু’দিকেই মুভ করাতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই। একই সঙ্গে খলিলকে গতিটা আর একটু বাড়াতে হবে। তা হলেই ভারতের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তবে রোহিত-বিরাট যে দিন খেলেন, সে দিন কোনও সমস্যাই বড় হয়ে ওঠে না। এ দিন অবশ্য বেশি খেলার সুযোগ পাননি দু’জনে। কিন্তু তারই মধ্যে জাতটা চিনিয়ে গেলেন। ওই দুই ব্যাটসম্যানের তিনটে শটের কথা বলব। কোহালির নেমেই ক্যারিবিয়ান পেসার ওশেন থমাসকে বোলারের পাশ দিয়ে মারা একটা স্ট্রেট ড্রাইভ। জেসন হোল্ডারকে মারা রোহিতের একটা ব্যাকফুট পাঞ্চ। যেটা ওর সিগনেচার শট হয়ে গিয়েছে। আর তিন নম্বর, ওশেনকেই মাথার ওপর দিয়ে তুলে রোহিতের একটা ছয়। প্রতি শটের ক্ষেত্রেই ব্যাটসম্যানের মাথা স্থির, শরীর ঠিক জায়গায় এবং ফলো থ্রু— সবই নিখুঁত ছিল। এক কথায় ক্রিকেটীয় শটের সেরা বিজ্ঞাপন। ওয়ান ডে-তে রোহিতের দুশো ছয়ও হয়ে গেল।

ভারতের আরও একটা প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে। সেটা অবশ্য এশিয়া কাপ থেকেই হয়েছে বলা যায়। রবীন্দ্র জাডেজার ওয়ান ডে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন। জাডেজা হল পরিপূর্ণ একটা প্যাকেজ। ব্যাটে ২৫-৩০ রান করে দেবেন। বল করতে এসে দু’তিনটে উইকেট তুলে নেবেন। ফিল্ডিংয়ে একটা অসাধারণ রান আউট করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেবেন। এ দিন আহামরি কিছু বল না করেও চার উইকেট তুলে নিলেন। সঙ্গে ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE