Advertisement
E-Paper

ঘরের চাণক্যেই এই সাফল্য

চার বছর বাংলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সাইরাজ। কী করে একটি দলকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলা যায়, তা জানত না।

লক্ষ্মীরতন শুক্ল

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৫
জয়োল্লাস: পঞ্জাবকে তাদের ঘরের মাঠে ৪৮ রানে হারিয়ে শেষ আটে বাংলা। জয়ের নায়ক শাহবাজ আহমেদকে কাঁধে তুলে নিলেন মনোজরা। অভিনন্দন অরুণের (ডান দিকে)। পিটিআই

জয়োল্লাস: পঞ্জাবকে তাদের ঘরের মাঠে ৪৮ রানে হারিয়ে শেষ আটে বাংলা। জয়ের নায়ক শাহবাজ আহমেদকে কাঁধে তুলে নিলেন মনোজরা। অভিনন্দন অরুণের (ডান দিকে)। পিটিআই

সব সময় একটা কথা বলে এসেছি, রাজ্যের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কোচ করে নিয়ে এসো। দল এমনিতেই ভাল খেলবে। আট বছর বাংলাকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, স্থানীয় কোচের সঙ্গে নিজেদের সমস্যা নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনা করা যায়। বাইরের কোচের সঙ্গে যা সম্ভব নয়। সাইরাজ বাহুতুলের থেকেই তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

চার বছর বাংলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সাইরাজ। কী করে একটি দলকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলা যায়, তা জানত না। ড্রেসিংরুমেও শান্তির পরিবেশ ছিল না। অরুণ লাল কোচ হয়ে আসার পরে ক্রিকেটারদের মনোভাব একেবারে পাল্টে গিয়েছে। কী করে দলগত সংহতি তৈরি করা যায়, জানেন তিনি। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ৪৮ রানে জিতে বাংলার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার মধ্যে তারই প্রতিফলন। নিশ্চয়ই ছেলেরা মাঠে নেমে খুব ভাল খেলেছে, তাই তাদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। তবু কেউ অস্বীকার করতে পারবে, নেপথ্যে অরুণ লালের মতো লড়াকু মানসিকতার প্রভাব?

দলীয় সংহতি ছাড়া এ ভাবে টানা ভাল খেলা যায় না। যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো যায় না। এই ম্যাচটাতেই যেমন। প্রথম ইনিংসে বাংলা ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরে প্রথম দিনের শেষে পঞ্জাবের স্কোর ছিল ৯৩-৩। দ্বিতীয় দিন ১৫১ রানের মধ্যে মনদীপ সিংহদের অলআউট করে দিলাম আমরা। ৫৭ রানে সাত উইকেট নেয় শাহবাজ। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৭৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা মনোজ তিওয়ারিই দায়িত্ব নেয়, বড় লক্ষ্যের সামনে পঞ্জাবকে ফেলার। ৬৫ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে মনোজ। সেই সঙ্গে অর্ণব নন্দীর ৫১ রানের ইনিংসের প্রশংসাও করতে হচ্ছে। শ্রীবৎস গোস্বামী (২৪) ও অনুষ্টুপ মজুমদারের (২৬) অবদানকেও ভোলা উচিত নয়। ওদের রানগুলো শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে।

পাটিয়ালার ধ্রুব পাণ্ডব স্টেডিয়ামে আমারও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওখানকার উইকেট আগে ভালই ছিল। এ বার লক্ষ্য করছি প্রত্যেক ম্যাচেই রান কম উঠছে। চতুর্থ ইনিংসে তাই ১৮৯ রান করা একেবারেই সহজ ছিল না। পঞ্জাবের কাজটা আরও কঠিন করে দিল শাহবাজ এবং আকাশ দীপ। ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করল শাহবাজ। এই মুহূর্তে বাংলা দলে ও-ই কিন্তু সব চেয়ে ধারাবাহিক ক্রিকেটার। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিল। ইডেনে দিল্লির বিরুদ্ধেও তৈরি হয়েছিল হ্যাটট্রিকের সুযোগ। রাজস্থানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণ করেছিল তরুণ অলরাউন্ডার। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠল বাঁ-হাতি স্পিন বোলিংয়ে। তেমনই আকাশকে দেখে আমি মুগ্ধ। পেস বিভাগে অভিজ্ঞতার অভাব একেবারেই টের পেতে দিচ্ছে না ও। বাংলার কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু এই দুই নতুন মুখ।

গত মরসুমের দলের সঙ্গে এই দলটিকে একদম মেলানো যাচ্ছে না। ক্রিকেটারদের কৃতিত্বকে ছোট না করেই আবার বলছি, সব চেয়ে বেশি কৃতিত্ব কোচের। মরসুম শুরু হওয়ার দু’মাস আগে থেকে ফিটনেস ট্রেনিং করেছিল বাংলা। গত কয়েক বছরে যা কখনও দেখা যায়নি। এই ফিটনেস ট্রেনিং ও কঠোর পরিশ্রমের ফলেই ক্রিকেটারদের মনোভাব পাল্টে গিয়েছে। তার সঙ্গেই যোগ হয়েছে চারিত্রিক কাঠিন্য। কোনও ম্যাচে পিছিয়ে পড়লে অনেক রকমের চাপ তৈরি হয়। চাপ কাটিয়ে দলকে ম্যাচে ফেরাতে অনেক বড় ক্রিকেটার সমস্যায় পড়েছে। এই বাংলা দলের মধ্যে সেই অদম্য সাহস দেখা যাচ্ছে। ওরা কাউকে ভয় পাচ্ছে না। এগিয়ে যাচ্ছে চ্যালেঞ্জের গন্ধ পেয়ে। ঠিক যেমন ক্রিকেটার অরুণ লাল যেতেন!

বাংলা শেষ বার রঞ্জি জিতেছে ১৯৮৯-৯০ মরসুমে। সে দিনের পুনরাবৃত্তির চেষ্টা অনেক অধিনায়ক করেছেন। আমিও তার অন্যতম। এ বার আরও একটি সুযোগ। কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভবত বাংলার প্রতিপক্ষ ওড়িশা। ওই ম্যাচ জিততে পারলেই সেমিফাইনাল। তার পর ফাইনাল। গন্তব্য এখনও অনেক দূর, কিন্তু কোথাও যেন উঁকি দিতে শুরু করেছে তিন দশকের অধরা স্বপ্ন!

যাও বাংলার বাঘেরা, এগিয়ে যাও!

Cricket Bengal Punjab Arun Lal Sairaj Bahutule Ranji Trophy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy