Advertisement
E-Paper

কুসুমিতার সাহায্যে এগিয়ে এলেন সেই মদনই

সরকারি হাসপাতালের অন্ধকার ঘরে পড়ে থাকা আহত মহিলা ফুটবলার কুসুমিতা দাসকে আলোয় ফেরানোর ব্যবস্থা করলেন স্বয়ং জেল-হাসপাতালে বন্দি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র-ই। শনিবার বিকেলে বাংলা ও ভারতের এই নামী ফুটবলারকে উডবার্ন ব্লকের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের প্রায়ান্ধকার ঘর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল একতলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে। মন্ত্রীর নির্দেশেই। বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার হওয়ায় ফুটবলারটির উপরের তলায় মন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০৩:২২

সরকারি হাসপাতালের অন্ধকার ঘরে পড়ে থাকা আহত মহিলা ফুটবলার কুসুমিতা দাসকে আলোয় ফেরানোর ব্যবস্থা করলেন স্বয়ং জেল-হাসপাতালে বন্দি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র-ই। শনিবার বিকেলে বাংলা ও ভারতের এই নামী ফুটবলারকে উডবার্ন ব্লকের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের প্রায়ান্ধকার ঘর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল একতলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে। মন্ত্রীর নির্দেশেই। বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার হওয়ায় ফুটবলারটির উপরের তলায় মন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। কুসুমিতার ভাই বিমান দাসকে হাসপাতালে নিজের ঘরে এ দিন সকালেই ডেকে পাঠান ক্রীড়ামন্ত্রী মদন। বলে দেন, ‘‘আমি জানতামই না আমার নীচের ফ্লোরে কুসুমিতা ভর্তি আছে। কেউ জানায়ওনি। জানলে কোনও সমস্যা হত না। ঠিক আছে এখন যখন জানলাম, আর কোনও সমস্যা হবে না। আমি সুস্থ হয়ে বেরিয়ে ভাল চাকরিরও ব্যবস্থা করে দেব ওকে।’’

মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে অভিভূত সন্দেশখালি খুলনার গ্রাম্য মেয়েটি। যন্ত্রণার মধ্যেও বলে দিলেন, ‘‘আমি মদনস্যারের সঙ্গে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়েও এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গেটে তখন পুলিশ আটকে দিয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে দোরে দোরে না ঘুরে ওঁর সঙ্গে দেখা করলে বাবাকে অন্তত ভিটে-মাটি বন্ধক দিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হত না। আমরা তো ঠিকমতো দু’বেলা খেতেই পাই না। বাড়িটা চলে গেলে থাকব কোথায়।’’

কেরলে বাংলার হয়ে জাতীয় গেমসে খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন দেশের অন্যতম সেরা স্টপার কুসুমিতা। তা সত্ত্বেও তাঁকে অবহেলার শিকার হয়ে হাসপাতালের অন্ধকার ঘরে পড়ে থাকতে হচ্ছে। শনিবার সকালে আনন্দবাজার এই খবর প্রকাশ্যে আনার পর থেকে রাজ্য জুড়ে শুধু নয়, বিদেশেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ফেসবুক-সহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বাংলার খেলোয়াড়দের দুরবস্থা নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। পাশাপাশি এসেছে অসংখ্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও।

এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডের এগারো নম্বর কেবিনে আপাতত শয্যাশায়ী কুসুমিতাকে আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। খড়দহ অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত এক প্রাক্তন নামী ফুটবলার থেকে ময়দানের বড় দলের দু’জন নামী ফুটবলার (দু’জনেই নাম জানাতে চান না) প্রায় তিরিশ হাজার টাকা দিতে চাইছেন কুসুমিতাকে। দমদমের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী শ্যামল দে থেকে হাওড়ার অধ্যাপক বিমল মিত্র চেকে টাকা পাঠাতে চেয়েছেন। ইন্টারনেটে খবর পড়ে লন্ডন ইউথ টাইগার্সের ডেভলপমেন্ট কোচ মলয় সেনগুপ্ত দশ হাজার টাকা দিতে চাইছেন কুসুমিতার পরিবারকে। ফোনে জানালেন, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে অস্ত্রোপচারের পুরো চল্লিশ হাজার টাকাই তোলার চেষ্টা করছেন। এ রকম আরও অনেকেই আনন্দবাজারের দফতরে ফোন করে জানতে চাইছেন কী ভাবে সাহায্য করা সম্ভব অসহায় মেয়ে ফুটবলারটিকে। টাকা কোথায় গিয়ে দিয়ে আসতে হবে। সবাই সরাসরি অসুস্থ মেয়ে ফুটবলারটির হাতে তুলে দিতে চাইছেন সাহায্য। কিন্তু সমস্যা হল, কুসুমিতাকে এখন যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে নির্দিষ্ট কার্ড ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে কুসুমিতা ও তাঁর পরিবারের লোকজন বুঝতে পারছেন না কী করবেন। সাহায্যকারীরাও সমস্যায়।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল কুসুমিতার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার দায় ছিল যাঁদের, সেই রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ এবং বিওএ কর্তারা ক্রমাগত একে অন্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতেই ব্যস্ত। কেউই এ দিন দেখা করতে যাওয়ার প্রয়োজন বোধও করেননি। হেলদোলও নেই। কিন্তু ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। আইএফএ-র কোষাধ্যক্ষ কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা তো বিওএ-র দায়িত্ব। গেমসে তো ওরাই দল পাঠিয়েছিল। ওদের হয়ে খেলতে গিয়েই তো চোট পেয়েছে। আমরা তো ওদের জানিয়েছিলাম কুসুমিতার কথা। কিছুই করেনি।’’ যা শুনে চটেছেন বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাদা অজিতবাবু বললেন, ‘‘৪৩টা ইউনিট আমাদের। কোনও সমস্যা হলে ইউনিটগুলোর তরফ থেকে তা জানানো হয় আমাদের। কুসুমিতার ব্যাপারটা জানানোর কথা আইএফএ-র। ওরা কিছুই জানায়নি। ওদেরও তো নথিভুক্ত খেলোয়াড়। মেয়েটি হাসপাতালে বেডের জন্য বলেছিল। করে দিয়েছি। যা সাহায্য চাইবে করব।’’

footballer kusumita madan mitra and kusumita kusumita das footballer abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy