সেল্টিকের বিরুদ্ধে মেসির দাপট। ছবি: এএফপি।
লিওনেল মেসি নাকি পাল্টে গিয়েছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই পাল্টেছেন। মুখে চাপদাড়ি রেখেছেন। চুল সোনালি করেছেন। তবে এইটুকুই। তাঁর বাঁ পা যে এখনও সমান ধারালো। যে বাঁ পায়ের রোষের সামনে পড়লে কোনও উত্তর খুঁজে পায়না বিপক্ষ ডিফেন্স। যে বাঁ পা এখনও নতুন রেকর্ড তৈরি করতে পারে।
শনিবার রাতের ন্যু কাম্প দেখেছিল বিপর্যয়। মঙ্গলবারের ন্যু কাম্প মন্ত্রমুগ্ধ হল মেসি-ম্যাজিকে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আবার স্বমহিমায় রাজপুত্র। যাঁর হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে সেল্টিক-কে ৭-০ উড়িয়ে আলাভেজ বিপর্যয় এখন ইতিহাস।
ম্যাচবল তাঁর হাতে উঠলেও এক সময় ধোঁয়াশা ছিল আদৌ শুরু থেকে মাঠে নামতে পারবেন কি না মেসি। চোটের ধাক্কায় আলাভেজের বিরুদ্ধে তাঁকে রিজার্ভে রাখা হয়। কিন্তু এ দিন লুইস এনরিকে কোনও ঝুঁকি নেননি। শুরুর থেকেই মেসিকে নামিয়ে দেন। সাপোর্টিং কাস্টে নেইমার ও সুয়ারেজ। নিটফল, সেই বিধ্বংসী বার্সা। যারা ২০১৫-য় ত্রিমুকুট জিতেছিল।
এলএম টেনের গোলগুলো ছিল ট্রেডমার্ক বার্সা। নিঁখুত পাসিং মুভ আর ক্লিনিকাল ফিনিশ। মেসির প্রথমটা ছিল টপ কর্নারে। নেইমারের সঙ্গে সুন্দর কম্বিনেশনের পর রকেট শট। ১০৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার স্পিডে বলটা গিয়ে জড়ায় জালে। ওয়ান্ডারকিডের সঙ্গে জুটি বেঁধে দ্বিতীয় গোলটাও করেন এলএম টেন। হ্যাটট্রিকটা অবশ্য ছিল সুয়ারেজের পাসে। নেইমার ব্যাকহিল করতে চাইলেও স্লাইড করে মেসি নিজের তৃতীয় গোলটি করেন।
একই রাতে হ্যাটট্রিক করলেন। আবার নিজের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকেও টপকালেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক (৬) করার রেকর্ড গড়লেন এলএম টেন। যে রেকর্ড এত দিন তিনি যুগ্ম ভাবে ভাগাভাগি করতেন রোনাল্ডোর সঙ্গে।
মেসির হ্যাটট্রিক ছাড়াও ন্যু কাম্প সাক্ষী থাকল নেইমারের বিশ্বমানের ফ্রি-কিকের। লুইস সুয়ারেজের জোড়া গোলের। আন্দ্রে ইনিয়েস্তার বুলেটশট ছিল ‘আইসিং অন দ্য কেক।’ সাত গোল খাওয়ার মাঝে সেল্টিক অবশ্য একটা পেনাল্টিও ফস্কায়। কিন্তু রাতটা যে ছিল মেসির। রাতটা ছিল প্রমাণ করার যে বার্সার দশ নম্বর এখনও একার হাতেই দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন বিপক্ষ ডিফেন্সকে।
ম্যাচের পর ম্যাচবল নিয়ে দুই নায়ক। ছবি: ফেসবুক।
আলাভেজের বিরুদ্ধে হারের আটচল্লিশ ঘণ্টা পর সেই বিপর্যয় এখন ইতিহাস। ন্যু কাম্প ফের পুরনো মেজাজে। ভক্তরাও আবার তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন। নিয়ম মেনে শুরু হয়ে গেল মেসি-বন্দনায়ও। লুইস এনরিকে যেমন জানিয়ে দিলেন, যে কোনও পজিশনেই মেসি অপ্রতিরোধ্য। ‘‘যে কোনও পজিশনেই মেসি দুর্দান্ত। ওকে পুরো স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যে কোনও সময় পজিশন পাল্টাতে পারে। ও গোলও করতে পারে। আবার ৪০ গজ দূর থেকে পাসও বাড়ায়,’’ বলছেন বার্সার স্প্যানিশ কোচ।
এনরিকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, মেসিকে কোনও নির্দিষ্ট পজিশনের দায়িত্ব চাপাতে চাননি। বরং এলএম টেনকে মুভমেন্ট করতে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি। ‘‘মেসি মানেই টোটাল ফুটবল। খুবই বোকামি হবে যদি ওকে কোনও নির্দিষ্ট পজিশনে আটকে রাখা হয়। শুধু গোলের দিক দিয়েই নয়। মেসির দূরদর্শিতাও তো দারুণ,’’ বলছেন এনরিকে। দলের স্বপ্নের পারফরম্যান্স নিয়ে বার্সা কোচ যোগ করেন, ‘‘এটা একটা ফুটবল-উৎসব ছিল। শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক সমর্থক উপভোগ করেছে সুন্দর ফুটবল। আমরা সবকিছুই নিঁখুত ভাবে করেছি।’’
আন্দ্রে ইনিয়েস্তা আবার মনে করছেন আলাভেজের বিরুদ্ধে হারের রাগটাই সেল্টিকের উপর উপচে পড়ল। ‘‘আলাভেজের বিরুদ্ধে হারের পর আমরা তেতে ছিলাম। নিজেদের প্রমাণ করার ছিল,’’ বলছেন ইনিয়েস্তা। তাঁর সতীর্থ মেসির সম্বন্ধে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইনিয়েস্তা। শুধু বলেন, ‘‘আর নতুন কী বলব মেসি নিয়ে। প্রতিটা ম্যাচেই ও কিছু না কিছু করে যা চমকে দেয় গোটা বিশ্বকে। একটাই মেসি আছে। যে সবার থেকে আলাদা।’’
অভিষেক হল গায়ক নেইমারের। ছবি: টুইটার।
নব্বই মিনিট শেষে বার্সা ড্রেসিংরুমে ফের স্বস্তির আবহাওয়া। হ্যাটট্রিকের ম্যাচবল নিয়ে নেইমারের সঙ্গে ফটো পোস্ট করেন এলএম টেন। ম্যাচে মেসি যেমন গোলের সামনে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তেমনই নেইমারও প্লে-মেকারের ভূমিকায় ছিলেন অনবদ্য। সাতটা গোলের মধ্যে চারটে পাস তো তাঁরই বাড়ানো। নিজের ব্যক্তিগত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মেসি লেখেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচ জেতাটা অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে আমরা সেটা করে দেখালাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy