Advertisement
E-Paper

সরোবরে বাগানের পদ্ম ফুটল বলবন্ত, প্রবীরের লড়াইয়ে

এক জনের ফুটবলজীবন প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল চোটের জন্য। আর এক জন মাঠে নামার সুযোগ না পেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম জন বলবন্ত সিংহ। দ্বিতীয় জনের নাম প্রবীর দাস।

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৪
রবীন্দ্র সরোবরে শনিবার মোহনবাগানের জয়ের নায়ক বলবন্তকে নিয়ে ডাফিদের উৎসব।-সুদীপ্ত ভৌমিক

রবীন্দ্র সরোবরে শনিবার মোহনবাগানের জয়ের নায়ক বলবন্তকে নিয়ে ডাফিদের উৎসব।-সুদীপ্ত ভৌমিক

ডিএসকে শিবাজিয়ান্স-১ : মোহনবাগান-৩

(মিলন) (বলবন্ত-২, কাতসুমি-পেনাল্টি)

এক জনের ফুটবলজীবন প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল চোটের জন্য। আর এক জন মাঠে নামার সুযোগ না পেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম জন বলবন্ত সিংহ। দ্বিতীয় জনের নাম প্রবীর দাস। শনিবার এই দুই ফুটবলারের সৌজন্যেই সরোবরে ফুটল সবুজ-মেরুন পদ্ম!

গত বছর আই লিগ চলাকালীনই ডান পায়ে চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন বলবন্ত। হতাশায় সল্ট লেকে নিজের ফ্ল্যাটের অন্ধকার ঘরে বসে কাঁদতেন। মোহনবাগানের ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়া মিরান্দা এক রকম জোর করেই বলন্তকে মাঠে নিয়ে যেতেন। নীরবে শুরু করেছিলেন তাঁকে মাঠে ফেরানোর লড়াই। শনিবার শিবাজিয়ান্সের বিরুদ্ধে গোল করার পর আনন্দে বলবন্তের কোলেই উঠে পড়েছিলেন গার্সিয়া। সবুজ-মেরুন ফিজিও বলেন, ‘‘এক বছর কী যন্ত্রণা বলবন্তকে সহ্য করতে হয়েছে, সেটা একমাত্র আমি জানি।’’ বলবন্তের কাছে গার্সিয়া শুধু ফিজিও নন, ঈশ্বর। ঘনিষ্ঠমহলে বলেন, ‘‘গার্সিয়ার জন্যই মাঠে ফিরেছি। ওর ঋণ শোধ হওয়ার নয়।’’

সোদপুরের প্রবীরের ফুটবল-ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সুযোগ না পেয়ে। আইএসএলে প্রথমে এফসি গোয়া, তারপর দিল্লি ডায়নামোজ এফসি-তে যোগ দেন। কিন্তু কোথাও খেলার সুযোগ পাননি। গত বছর সঞ্জয় সেন তাঁকে মোহনবাগানে নিয়ে আসার পর থেকে ছবিটা পাল্টায়। শিবাজিয়ান্সের বিরুদ্ধে বলবন্ত জোড়া গোল করে ম্যাচের সেরা হলেও প্রবীরই ছিলেন সবুজ-মেরুন কোচের তুরুপের তাস।

ডিএসকে শিবাজিয়ান্সের কোচ ডেভ রজার্স চেস্টার সিটির হয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ডিভিশন লিগে খেলতেন। পুণেতে লিভারপুল অ্যাকাডেমির দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। কিন্তু এ দিন তিনি হারলেন এক বাঙালি কোচের কাছে মস্তিষ্কের যুদ্ধে। ইদানীং মোহনবাগানের এক দল সমর্থক ম্যাচের শুরু থেকেই গ্যালারিতে গান গেয়ে ফুটবলারদের উজ্জীবিত করেন। কিন্তু ৩৩ মিনিটে খুয়ান কুইরোর পাস থেকে ওঙ্গনাম মিলন সিংহ গোল করে শিবাজিয়ান্স-কে এগিয়ে দিতেই গ্যালারি স্তব্ধ। জিতছেন ধরে নিয়ে শিবাজিয়ান্সের ব্রিটিশ কোচ তখন রীতিমতো উৎসব শুরু করে দিয়েছিলেন। অবশ্য সেই সময় মোহনবাগান যেরকম খেলছিল, তাতে অতি বড়় সবুজ-মেরুন সমর্থকও ভাবেননি নাটকীয় ভাবে বদলে যাবে পরিস্থিতি।

শিবাজিয়ান্স আক্রমণে নেতৃত্ব দেন কুইরো। তাঁকে আটকানোর জন্যই প্রণয় হালদার ও শেহনাজ সিংহ-কে প্রথম দলে রেখেছিলেন সঞ্জয়। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্রকে থামাতে ব্যর্থ তাঁরা। উল্টে যেটা হল, মোহনবাগানের কোনও আক্রমণই দানা বাঁধছিল না। এই সময়েই সেরা চাল দিলেন সবুজ-মেরুন কোচ। শেহনাজকে তুলে নিয়ে নামালেন প্রবীরকে। সাংবাদিক বৈঠকে সঞ্জয় বললেন, ‘‘আমার কোনও প্ল্যান এ, বি বা সি নেই। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেও ৪-৩-৩ ফর্মেশনে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু গোল হয়নি। এ দিন জিতেছি।’’ আর প্রবীর বললেন, ‘‘ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত মোহনবাগান সমর্থক সৌম্য মুখোপাধ্যায়ের জন্যই ভাল খেলতে চেয়েছিলাম।’’ প্রবীর নামার পর ছন্দে ফেরেন সনি নর্দে-ও। আক্রমণ তৈরির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। ৪২ মিনিটে গোল করে সমতা ফেরান বলবন্ত। দ্বিতীয় গোলটা দু’মিনিটের মধ্যেই। হারের পর শিবাজিয়ান্স কোচ অবশ্য কাঠগড়ায় তুললেন সুব্রত পাল-কে। বললেন, ‘‘গোলকিপারের ভুলে প্রথম গোলটা খাওয়ার পরেই ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাই।’’ ৮৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে তৃতীয় গোল কাতসুমির।

ম্যাচের পর সনি বললেন, ‘‘আমাদের ফিজিও মুম্বইয়ে ডাক্তার অনন্ত জোশীকে ফোন করে জানাবেন, আমি ভাল আছি। খেলতেও সমস্যা হচ্ছে না। মনে হচ্ছে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই।’’ এএফসি কাপ খেলতে সনি মলদ্বীপ যাচ্ছেন না। কোচ সঞ্জয় সেন, জেজে লালপেখলুয়া, প্রণয় হালদার, সৌভিক চক্রবর্তী, দেবজিৎ মজুমদার ও প্রীতম কোটাল-ও যাচ্ছেন না। ৯ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান লিগ টেবলে দ্বিতীয়। ইস্টবেঙ্গলেরও ২১ পয়েন্ট। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে লাল-হলুদ।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, এদুয়ার্দো, আনাস, শুভাশিস, কাতসুমি, প্রণয়, শেহনাজ (প্রবীর), সনি, বলবন্ত (জেজে) ও ডাফি (বিক্রমজিৎ)।

Mohun Bagan I League Win DSK Shivajians
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy