Advertisement
E-Paper

লিগ-স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল সনির জাদু, শিল্টনের হাত

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠের মধ্যে গোলকিক করার সময় কাতসুমির মাথায় ঘুসি মেরেছিলেন। খেলা শেষ হতেই মোহনবাগানের সেই গোলকিপার শিল্টন পাল দৌড়ে চলে এলেন নেরোকা রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে দাঁড়ানো কাতসুমির পিছনে। সেখান থেকেই দু’হাত তুলে চিৎকার করে গ্যালারিকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। 

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৯
ত্রাতা: নেরোকার বিরুদ্ধে গোল করে সনির উচ্ছ্বাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ত্রাতা: নেরোকার বিরুদ্ধে গোল করে সনির উচ্ছ্বাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠের মধ্যে গোলকিক করার সময় কাতসুমির মাথায় ঘুসি মেরেছিলেন। খেলা শেষ হতেই মোহনবাগানের সেই গোলকিপার শিল্টন পাল দৌড়ে চলে এলেন নেরোকা রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে দাঁড়ানো কাতসুমির পিছনে। সেখান থেকেই দু’হাত তুলে চিৎকার করে গ্যালারিকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন।

মোহনবাগান ১ • নেরোকা ০

কেন? জানতে চাইলে সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিনের ম্যাচের সেরা শিল্টন বললেন, ‘‘ইম্ফলে গিয়ে ওদের কাছে হারার পরে কাতসুমি আমাদের দেখিয়ে জয়োল্লাস করেছিল। এটা তার বদলা হল। ধাক্কাটা (ঘুসি বলেননি) খেলার মধ্যে হয়ে গিয়েছে। কারণ, তখন কাতসুমি আমাকে বল মারতে দিচ্ছিল না।’’

আর ম্যাচের গোলদাতা সনি নর্দে স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় নিজের জার্সি উপহার দিয়ে গেলেন হাওড়ার সমর্থক কৌস্তভ সরকারকে। সনির সেই ৫০ নম্বর জার্সি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সেই মোহনবাগান সমর্থক বন্ধুদের বলছিলেন, ‘‘সনিকে ফোন করে বলেছিলাম, যে দিন গোল করে দলকে জেতাবে, সে দিন জার্সিটা দিও। অবশেষে আজ সেটা পেলাম।’’

সনি অবশ্য আই লিগে তাঁর চতুর্থ গোল করার দিনে বলছেন, ‘‘এই তিন পয়েন্ট খুব দরকার ছিল। লিগ তালিকায় আগে থাকা নেরোকার বিরুদ্ধে গোল করে ভালই লাগছে। টানা দুই ম্যাচে জিতে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ল অনেকটাই।’’

নতুন কোচ খালিদ জামিল আসার পরেই ঘরের মাঠে টানা দুই ম্যাচে জয়। প্রতি ম্যাচে গোল খাওয়ার সেই বদভ্যাস উধাও শেষ দুই ম্যাচে। ঘরের মাঠে হারের ভূত কি নেমে গিয়েছে মোহনবাগানের ঘাড় থেকে? প্রশ্ন করলে সনি বলেন, ‘‘এখন দলে কারও কারও জয়ের জন্য বাড়তি তাগিদ দেখছি। আগে ভাল খেলেও গোল খেয়ে হারতাম। খালিদ রক্ষণে কিছু কৌশল প্রয়োগ করেছেন। যা কাজে লাগার সুফল পাচ্ছি। কোচ বলেছেন, সবাইকে গোল বাঁচানোর পাশাপাশি, গোল করতেও উদ্যোগী হতে হবে।’’

শনিবার যুবভারতীতে প্রথমার্ধে খেলা দেখে এই বদল বোঝার জো ছিল না। বরং এই সময় মোহনবাগান রক্ষণ ফের টলমল করল। এই মোহনবাগান দলটার সমস্যা রক্ষণ ও গোলকিপারের মাঝের জায়গাটায়। সেখানে বল এসে পড়লেই শুরু হয় কম্পন। নেরোকার স্প্যানিশ কোচ মানুয়েল রেতামেরো ঠিক এই জায়গাকেই নিশানা বানিয়েছিলেন। মাঝমাঠ থেকে এই ফাঁকা জায়গায় বল ফেলছিলেন তাঁর ছেলেরা। দুই প্রান্ত থেকে মালেমগানবা মিতেই ও সুভাষ সিংহ সেই বল তাড়া করছিলেন। আর মাঠের মাঝখান দিয়ে সেই ভূমিকা পালন করছিলেন নেরোকার দুই দ্রুত গতির ডিফেন্ডার ফেলিক্স চিডি ও কাতসুমি ইউসা। আর তাতেই সমস্যায় পড়ছিল মোহনবাগান রক্ষণ। কিংসলে-সহ মোহনবাগানের চার ডিফেন্ডার কাতসুমিদের ‘মার্কিংয়ে’ ভুল করছিলেন বার বার।

তবুও সেই ম্যাচ মোহনবাগান জিতে ফিরল দু’জনের জন্য। প্রথম জন গোলকিপার শিল্টন পাল। দ্বিতীয় জন সনি নর্দে।

শিল্টনের দুরন্ত পারফরম্যান্স মোহনবাগানকে এ দিন কোনও গোল খেতে দেয়নি। গোটা ম্যাচে তিনি অন্তত পাঁচ বার ব্যর্থ করেন নেরোকার গোল করার প্রয়াস। ম্যাচের সেরাও তিনি। খেলা শেষে বলেও গেলেন, ‘‘খালিদ ভাই আস্থা রেখেছেন। বাড়িয়েছেন আত্মবিশ্বাস। যা আমাকে ভাল খেলতে সাহায্য করছে।’’ ৭৮ মিনিটে নেরোকার মাঝমাঠে মোহনবাগান মিডফিল্ডার ড্যারেন ক্যালডেইরার থেকে বল পেয়ে একা প্রায় ১০ গজ দৌড়ে গোলের মুখ খুলে ফেলেন সনি। শুধু দৌড়ই নয়। দুরন্ত এই গোলের সময়ে চোখে পড়ল হাইতিয়ান ফুটবলারের ইনসাইড কাট এবং সেই গতিতেই ডান পায়ে প্রথম পোস্টে জোরালো ‘ইনসুইং পুশ’। যা তিন পয়েন্ট এনে দেয় মোহনবাগানকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মিডফিল্ডার ওমর এল হুসেইনি চোট পাওয়ায় তাঁর জায়গায় হেনরি কিসেক্কাকে নামিয়ে ৪-১-৪-১ ছক বদলে ৪-৪-২ ছকে চলে গিয়েছিলেন খালিদ। সেটাই ম্যাচের গতি বদলে দেয়। খালিদের জোড়া স্ট্রাইকার সচল হতেই চাপে পড়ে নেরোকা রক্ষণ।

জিতে ১৩ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট-সহ আই লিগে পাঁচ নম্বরে উঠে এল মোহনবাগান। অন্য দিকে, ১২ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে রয়ে গেল নেরোকা। মোহনবাগানের পরবর্তী ম্যাচ ডার্বি। আত্মবিশ্বাসী সনি বলছেন, ‘‘ডার্বি-সহ আরও দুই ম্যাচ জিতলে ফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আসতেই পারে মোহনবাগানের সামনে।’’

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, গুরজিন্দর কুমার, লালছাওয়ান কিমা, কিংসলে ওবুমনেমে, অভিষেক আম্বেকর, ইউতা কিনোয়াকি, আজহারউদ্দিন মল্লিক (শেখ ফৈয়জ), ডারেন ক্যালডেইরা, ওমর এলহুসেইনি (হেনরি কিসেক্কা), সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকা (মেহতাব হুসেন)।

নেরোকা: ললিত থাপা, অশোক সিংহ (নওচা সিংহ), এদুয়োর্দো ফেরেইরা, ভারনে ক্যালন, সেবাস্তিয়ান থাঙ্গমুয়ানসাঙ্গ, শরণ সিংহ (টনডোম্বা সিংহ), অ্যারিন উইলিয়ামস, মালেমগানবা মিতেই (রোনাল্ড সিংহ), কাতসুমি ইউসা, সুভাষ সিংহ, ফেলিক্স চিডি।

Football I League 2018-19 Mohun Bagan Neroca FC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy